নেপালের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রাণঘাতী সংঘাতের পর আজ শনিবার দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে দেখা গেছে। কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। সড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিও কমেছে।
গতকাল শুক্রবার নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। এ ছাড়া দেশটির জাতীয় নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী বছরের ৫ মার্চ দেশটিতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সুশীলা শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করা হয়। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল তা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করা ছিল বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি।
এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়, আজ দেশটির আটটি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের নেওয়া পদক্ষেপটি অসাংবিধানিক এবং নেপালের বিচার বিভাগের পূর্ববর্তী নজিরের পরিপন্থী।’ তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করার পর দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। সংকট সমাধানে বিক্ষোভকারী তরুণদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট পাওদেল ও সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল। আলোচনায় মতৈক্য হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কারকির নাম ঘোষণা করে প্রেসিডেন্টের দপ্তর। দায়িত্ব নেওয়ার পর সুশীলা চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান।
আজ সকালে কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি শান্ত দেখা যায়। সেখানে দোকানপাট খুলেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে এবং লোকজনকে বাইরে মন্দিরে যেতে দেখা গেছে।
৭৩ বছর সয়সী সুশীলা নেপালের প্রথম নারী বিচারপতি ছিলেন। আর তিনিই দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হলেন। তাই তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি নেপালি জনগণের কাছে প্রতীকী গুরুত্ব বহন করছে। অনেকেই একে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বলে মনে করছেন।
সমাজকর্মী ৫১ বছর বয়সী সুরাজ ভট্টরাই বলেন, ‘নেপাল প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নেবেন এবং সুশাসন নিশ্চিত করবেন।’
নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। দেশটির মানুষ অশান্তি পেছনে ফেলে সামনে এগোতে চাইছেন। কাঠমান্ডুতে একটি দোকানের কর্মী ২৩ বছর বয়সী দুর্গা মাগর বলেন, কারকিকে নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত আপাতত ভালো। এ সময় মানুষের, বিশেষ করে তরুণদের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি।
২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নেপাল। বেকারত্ব ও দুর্নীতি নিয়ে জনগণের বড় অংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই পরিস্থিতি ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত থেকে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ বন্ধ করে দেয় সরকার। সরকারের দাবি ছিল, কোম্পানিগুলো নেপাল সরকারের শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ে নিবন্ধন করেনি। তাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে। গত মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে অন্তত ৫১ জন নিহত ও প্রায় দেড় হাজার মতো মানুষ আহত হয়।