
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আজ শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বড় ধাক্কা খেল সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনীতি। এতে করে থাইল্যান্ডে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, গত জুনে পেতংতার্নের একটি ফোনকল ফাঁস হয়। ওই ফোনকল ছিল প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে। তাতে হুন সেনের কাছে পেতংতার্নকে নতি স্বীকার করতে শোনা যায়। এর মধ্য দিয়ে নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছিলেন তিনি। সে সময় দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ পর পাঁচ দিন ধরে সংঘাতও চলেছিল।
থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পদটিতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকবেন বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই।
রায়ের ফলে থাইল্যান্ডে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পথ খুলে গেল। তবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হতে পারে। কারণ, পেতংতার্ন বরখাস্ত হওয়ার ফলে ক্ষমতাসীন জোটে ফিউ থাই পার্টির দর–কষাকষির ক্ষমতা কমে গেছে। পার্লামেন্টেও তাদের খুব সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই নড়বড়ে হয়ে পড়া ক্ষমতাসীন জোট টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব দলকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পেতংতার্ন। ফাঁস হওয়া ফোনালাপ নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। সাংবাদিকদের পেতংতার্ন বলেন, ‘আমি শুধু মানুষের জীবন রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। সেটি সেনাসদস্য হোক বা সাধারণ নাগরিক। সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে তাঁদের জীবন রক্ষা করার জন্য যা প্রয়োজন, তা করতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম।’
পেতংতার্ন বরখাস্ত হওয়ার পর এখন আলোচনা—তাঁর জায়গায় কে আসছেন? ধারণা করা হচ্ছে পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বে দুর্বল হয়ে পড়া ফিউ থাই পার্টিকে রাখার জন্য চেষ্টা করবেন পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা। এ জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্য প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন তিনি।
থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত পদটিতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকবেন বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই। তবে এ নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে, তার বেঁধে দেওয়া কোনো সময়সীমা সংবিধানে নেই।
থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্তিথর্ন থানানিথিচট বলেন, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ কঠিন হবে। সময়ও লাগতে পারে। স্বার্থের বিষয়ে একমত হওয়া সব দলের জন্য সহজ নয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় ফিউ থাই পার্টি পিছিয়ে থাকবে।’
এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকজনকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে একজনই শুধু ফিউ থাই পার্টির। তিনি ৭৭ বছর বয়সী চাইকাসেম নিতিসিরি। থাইল্যান্ডের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল তিনি। তবে মন্ত্রিসভা পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। জনগণের সঙ্গে অতটা সম্পৃক্তও নন। গতকাল পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইকাসেমকে মনোনীত করেছে ফিউ থাই পার্টি।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী চান–ওচা। তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ফিউ থাই পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। আরেকজন অনুতিন চার্নভিরাকুল। তিনি পেতংতার্নের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ফোনকল ফাঁসের ঘটনার পর পেতংতার্নের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট থেকে নিজের দলকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
অনুতিনের দল ভুমজাইথাই পার্টি আজ জানিয়েছে, তারা বিরোধী দল পিপলস পার্টির সঙ্গে দেখা করবে। বর্তমানে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে একক দল হিসেবে পিপলস পার্টির সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলটি জানিয়ে দিয়েছে, সরকারে যোগ দেবে না তারা। তবে নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে যেকোনো দলকে সমর্থন দিতে রাজি আছে।
থাইল্যান্ডের চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্তিথর্ন থানানিথিচট বলেন, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ কঠিন হবে। সময়ও লাগতে পারে। স্বার্থের বিষয়ে একমত হওয়া সব দলের জন্য সহজ নয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় ফিউ থাই পার্টি পিছিয়ে থাকবে।’