গত বছর চীন ৩৩৩ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সম্মিলিত সক্ষমতার চেয়েও বেশি
গত বছর চীন ৩৩৩ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সম্মিলিত সক্ষমতার চেয়েও বেশি

দেড় বছরে চীনের কার্বন নিঃসরণ কখনো কমেছে, কখনো স্থিতিশীল: বিশ্লেষণ

চীনে ১৮ মাস ধরে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণের হার কখনো স্থিতিশীল অবস্থায়, আবার কখনো কমতির দিকে থেকেছে। এক বিশ্লেষণে এমনটাই দেখা গেছে। এর মধ্য দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে বৃহত্তম দূষণকারী এ দেশটি প্রতিশ্রুত সময়সীমার অনেক আগে তার কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পেরেছে।

চলতি বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসে চীনে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ৪৬ শতাংশ এবং বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশটির জ্বালানি খাতে কার্বন নিঃসরণের হার স্থিতিশীল থেকেছে। এমনকি বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও কার্বন নিঃসরণ বাড়েনি।

চীন চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সৌরবিদ্যুৎ খাতে ২৪০ গিগাওয়াট এবং সৌরবিদ্যুৎ খাতে ৬১ গিগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এর মধ্য দিয়ে ২০২৫ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে আরও একটি রেকর্ড গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। গত বছর দেশটি ৩৩৩ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল, যা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সম্মিলিত সক্ষমতার চেয়েও বেশি।

বিজ্ঞান ও জলবায়ুনীতিবিষয়ক ওয়েবসাইট কার্বন ব্রিফের জন্য বিশ্লেষণটি করেছে সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণের হার আগের বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত ছিল। যাতায়াত, সিমেন্ট ও ইস্পাতশিল্পে নিঃসরণের হার কমে যাওয়াটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

চীনের কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ নিয়ে এমন সময়ে বিশ্লেষণটি প্রকাশ পেল যখন কি না, বৈশ্বিক নেতারা ব্রাজিলে কপ–৩০ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলার তাগিদ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্মেলনটি হতে যাচ্ছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ব্রাজিলে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেননি। তবে চীনা প্রতিনিধিদল আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এতে যোগ দেননি। তিনি আলোচনার জন্য কোনো প্রতিনিধিদলও পাঠায়নি।

গতকাল সোমবার ব্রাজিলীয় কূটনীতিক এবং কপ৩০-এর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো সবুজ প্রযুক্তিতে অগ্রগতি করায় চীনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘চীন এমন সমাধান উদ্ভাবন করছে, যা সবার জন্য, শুধু চীনের জন্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ধনী দেশগুলো জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আগ্রহ হারিয়েছে।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে চীনের দুটি লক্ষ্যমাত্রা আছে। এর একটি হলো ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণের হার কমতে শুরু করবে এবং ২০৬০ সাল নাগাদ তারা নিট কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করবে। গত সেপ্টেম্বরে চীন তার সর্বশেষ জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০৩৫ সালের দেশটি তাদের সামগ্রিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের হার সর্বোচ্চ হারের তুলনায় ৭ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই লক্ষ্যগুলো বৈশ্বিক বিপর্যয় এড়াতে যথেষ্ট নয়। তাঁরা মনে করেন, বৈশ্বিক বিপর্যয় এড়াতে কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমাতে হবে।