কখনো এমন হয়েছে কি, অনলাইনে কোনো কিছু পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে যে ইচ্ছা করে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে, যাতে আপনি রাগে ফেটে পড়েন? যদি এমন কিছু আপনার সঙ্গে ঘটে থাকে, তবে আপনি ‘রেজ বেইট’ বা ‘রাগ টোপ’–এর মুখোমুখি হয়েছেন।
‘রেজ বেইট’ বলতে এমন এক ধরনের কনটেন্টকে বোঝানো হয়, যেগুলো সচেতনভাবে মানুষকে রাগিয়ে দিয়ে তাকে সম্পৃক্ত বা এনগেজ করতে চেষ্টা করে।
এটি এখন অনলাইনে এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ‘রেজ বেইট’–কে এ বছর তাদের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে ঘোষণা করেছে। গত রোববার অক্সফোর্ড ডিকশনারি এ ঘোষণা দেয়।
এ বছর প্রায় প্রতিটি প্রধান ডিকশনারি তাদের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দ নির্বাচন করেছে, যা ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই শব্দচয়ন দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির প্রভাবের কথা বলছে, আমাদের মুখের ভাষায় তার প্রকাশের রূপ দেখাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই অভিধান এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বছর শব্দটির ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। প্রবণতাটি বলছে, মানুষ জানে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম ও উসকানিমূলক কনটেন্টের মাদকতায় সাড়া দিয়ে তারা হুট করে চরম তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।
এ বছর প্রায় প্রতিটি প্রধান ডিকশনারি তাদের বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দ নির্বাচন করেছে, যা ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই শব্দচয়ন দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির প্রভাবের কথা বলছে, আমাদের মুখের ভাষায় তার প্রকাশের রূপ দেখাচ্ছে।
তবে কখনো কখনো ‘রেজ বেইট’ অপেক্ষাকৃত নির্দোষ হতে পারে। যেমন এটা হতে পারে, বিস্বাদ উপকরণ দিয়ে করা একটি রেসিপি। অথবা পোষা প্রাণী, সঙ্গী বা ভাইবোনকে চটানোর কথা বা দৃশ্য।
কিন্তু এটি রাজনৈতিক আলোচনাতেও প্রবেশ করেছে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে মানুষের রাগ-ক্ষোভকে ব্যবহার করা হয় রাজনীতিবিদদের পরিচিতি বাড়াতে এবং প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার মালা তৈরি করতে।
কলিন্স ডিকশনারি ২০২৫ সালে বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে ‘ভাইব কোডিং’কে বেছে নিয়েছে।
‘ভাইব কোডিং’ বলতে একধরনের সফটওয়্যার বানানো বোঝায়, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে সাধারণ ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তরিত করা হয়।
আরও সহজভাবে বললে, প্রোগ্রামিং না জেনেও শুধু কথার মাধ্যমে নির্দেশ (প্রম্পট) দিয়েই একটি সম্পূর্ণ সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) তৈরি করাকে ‘ভাইব কোডিং’ বলে।
কেমব্রিজ ডিকশনারির এই বছরের সেরা শব্দ হচ্ছে ‘প্যারাসোশ্যাল’।
‘এ বছর “রেজ বেইট” শব্দটির ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। প্রবণতাটি বলছে, মানুষ জানে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম ও উসকানিমূলক কনটেন্টের মাদকতায় সাড়া দিয়ে তারা হুট করে চরম তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।’
‘প্যারাসোশ্যাল’ বলতে অনলাইনে অচেনা কারও সঙ্গে গড়ে তোলা সম্পর্ককে বোঝায়।
গত বছর অক্সফোর্ড ‘ব্রেন রট’ শব্দটিকে তাদের বর্ষসেরা শব্দ নির্বাচিত করেছিল। ‘ব্রেন রট’ বলতে বোঝায় অনবরত ডিজিটাল কনটেন্ট ঘাঁটতে ঘাঁটতে বুদ্ধি ক্ষয় করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও ক্রমাগত অন্তঃসারশূন্য আধেয় (কনটেন্ট) দেখার প্রবণতার কারণে যে মানসিক অবক্ষয়, তা বোঝাতে ‘ব্রেন রট’ শব্দটি ব্যবহার হয় বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওয়েল।
ক্যাসপার গ্র্যাথওয়েল বলেন, ‘রেজ বেইট’ ও ‘ব্রেন রট’ শব্দ দুটি মিলে একটি শক্তিশালী আবর্ত তৈরি করছে। এখানে রাগ বা ক্ষোভ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সম্পৃক্ত করে, অ্যালগরিদম সেটা বাড়ায় এবং ক্রমাগত এসব কনটেন্ট দেখার ফলে আমরা মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
ক্যাসপার গ্র্যাথওয়েল আরও বলেন, ‘এই শব্দগুলো কেবল প্রবণতাগুলো সংজ্ঞায়িত করে না; এগুলো দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তাভাবনা ও আচরণ পাল্টে দিচ্ছে।’
অক্সফোর্ড ডিকশনারি জনসাধারণকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বছরের সেরা শব্দটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। তাদের তালিকায় ‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’ শব্দ দুটিও ছিল। প্রতিটি শব্দের ভাব প্রকাশ করতে অক্সফোর্ড ডিকশনারি তাদের ইনস্টাগ্রামে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও পোস্ট করেছে।
‘অরা ফার্মিং’ হলো একটি প্রশংসনীয়, আকর্ষণীয় বা ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা, নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে সূক্ষ্মভাবে আত্মবিশ্বাস, শান্তভাব বা রহস্যময়তার ছাপ ফুটে ওঠে।
‘বায়োহ্যাক’ হলো খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম বা জীবনধারা পরিবর্তন করে অথবা ওষুধ, খাদ্য পুষ্টির পরিপূরক (সাপ্লিমেন্ট) বা প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজের স্বাস্থ্য, আয়ু বা সুস্থতার সবচেয়ে বাড়ানোর চেষ্টা করা।
‘রেজ বেইট’ কেমন হতে পারে তা দেখাতে গিয়ে দেখানো হয়েছে যে একজন এক কাপ চা বানাতে গিয়ে দুধ-চিনি ছড়িয়ে একাকার করল, তারপর পায়ের নখ খুঁটল আর নিজের মাথায় দুধ ঢেলে দিল।