Thank you for trying Sticky AMP!!

ন্যাটোর পতাকা

কোন ভয়ে ন্যাটো গঠিত হয়েছিল, সেই ভয় এখন কতটা

১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে এক চুক্তির মাধ্যমে ন্যাটো গঠিত হয়েছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের নিয়ে এই সামরিক জোট গঠন করে। ধীরে ধীরে এই জোট সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে নানা আলাপ-আলোচনা। প্রতিষ্ঠার দিনে ন্যাটো জোট নিয়ে এই লেখা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পাঁচ বছরও পেরোয়নি। যুদ্ধক্লান্ত ইউরোপ তখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল। সেই সঙ্গে ছিল নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ। স্বাভাবিকভাবে ইউরোপের দেশগুলো ‘আশ্রয়’ খুঁজছিল। যে আশ্রয় অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে ইউরোপকে ফেরাবে। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে।

আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভয় তখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র হলেও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ক্রমেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছিল দুই পরাশক্তির। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শিক বিরোধ তত দিনে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক—নানা মাত্রা পেয়েছে।

ন্যাটো প্রতিষ্ঠার চুক্তিকে ‘ওয়াশিংটন চুক্তি’ নামেও ডাকা হয়। সই করে মোট ১২ দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও পর্তুগাল।

ওয়াশিংটনের ভয়, ইউরোপের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে প্রভাব বাড়াবে। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে দেবে সমাজতন্ত্র। তাতে পুঁজিবাদী বিশ্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আর যুক্তরাষ্ট্রের একক পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্নের বাস্তবায়ন ভেস্তে যেতে পারে।

এমন এক পরিস্থিতিতে ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে গঠন করা হয় একটি সামরিক জোট। পুরো নাম ‘নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন’, সংক্ষেপে ন্যাটো। প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট বলা যায় একে।

ওই দিন সই হওয়া ন্যাটো প্রতিষ্ঠার চুক্তিকে ‘ওয়াশিংটন চুক্তি’ নামেও ডাকা হয়। চুক্তিতে সই করে মোট ১২টি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে ও পর্তুগাল।

ন্যাটোর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। এ জোটের বর্তমান মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।

Also Read: ন্যাটো কি আর টিকবে?

সামরিক জোট ন্যাটোর পরিধি এখন বেড়েছে। বর্তমানে ৩২টি দেশ এ জোটের সদস্য। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চে ন্যাটোয় যোগ দিয়েছে সুইডেন। দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতার নীতি ছুড়ে ফেলে সুইডেন ন্যাটোয় যুক্ত হয়েছে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ঠেকাতে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষা ন্যাটো প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে প্রাণ জোগায়। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী দুর্বল ইউরোপে নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব বাড়ানোর মার্কিন ইচ্ছাও এর পেছনে ছিল।

ওয়াশিংটনে ন্যাটো প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে সই করে ১২টি দেশ। ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯

ন্যাটো প্রতিষ্ঠার চুক্তিটি ছোট। মাত্র ১৪টি ধারার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মিলিত নিরাপত্তার বিষয়টি। চুক্তির পঞ্চম ধারায় বলা আছে জোটভুক্ত কোনো দেশ যদি বিদেশি শক্তির দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে জোটের সব সদস্যদেশ একযোগে তা প্রতিহত করবে। অর্থাৎ সদস্যদেশগুলো সম্মিলিতভাবে একে অপরকে সুরক্ষা দেবে।

ন্যাটোর মূল ভিত্তি ধরা হয় এ ধারাকে। বোঝাই যাচ্ছে, সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের ভয়েই দীর্ঘ আলোচনার পর এমন একটি ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ন্যাটো চুক্তিতে।

Also Read: ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ন্যাটোর কী হবে, শঙ্কায় ইউরোপীয়রা

ন্যাটোর বিপরীতে ১৯৫৫ সালে ওয়ারশ সামরিক জোট গড়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা। সোভিয়েত পতনের মধ্য দিয়ে এ জোটও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে ন্যাটো ৭৫ বছর ধরে এখনো টিকে আছে। শুধু টিকে নেই, তার সম্প্রসারণও হচ্ছে। ন্যাটোর মোট বাজেটের ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে।

ন্যাটো নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি মতামত ২০২২ সালের ৮ মে প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ‘ন্যাটো কেন এখনো টিকে আছে’। এতে আনু মুহাম্মদ লিখেছেন, ২০০১ থেকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’-এর নামে বিশ্বে সন্ত্রাস ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়। ন্যাটোর সম্প্রসারণও ঘটতে থাকে।

একসময় সোভিয়েত সম্প্রসারণের চরম ভীতি থেকে ন্যাটোর জন্ম হলেও সময়ের বিবর্তনে এ জোট এখন সোভিয়েত উত্তরসূরি রাশিয়া সীমান্তের কাছেও ছড়িয়ে পড়েছে। আনু মুহাম্মদের ভাষায়, ওয়ারশ জোটের সব কটি দেশ এখন ন্যাটোতে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক প্রজাতন্ত্রও এখন ন্যাটোর সদস্য।

Also Read: ন্যাটো কেন এখনো টিকে আছে

ইউক্রেন ও বেলারুশ বাদে রাশিয়ার সীমান্তের সব কটি দেশ ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। ইউক্রেন ন্যাটোতে ঢুকতে মুখিয়ে আছে। বিশেষ করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার ন্যাটোভুক্ত হওয়ার কথা বলছেন।

ন্যাটো নিজে কোনোভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নয়। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর আগে এ জোটের যে শক্তিসামর্থ্য ছিল, এখন সেটা অনেকটাই কমে এসেছে বলে মনে করেন ইয়র্ক টাউন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো স্টিফেন ব্রায়েন। ন্যাটোর জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ।

ন্যাটোর বিপরীতে ১৯৫৫ সালে ওয়ারশ সামরিক জোট গড়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্ররা। সোভিয়েত পতনের মধ্য দিয়ে এ জোটও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ন্যাটো ৭৫ বছর ধরে টিকে আছে। ন্যাটোর মোট বাজেটের ৭০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে।

ন্যাটোর ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইউনিভার্সিটি অব বনের ইনস্টিটিউট অব অরিয়েন্ট অ্যান্ড এশিয়ান স্টাডিজের ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো মারুফ মল্লিক প্রথম আলোয় একটি কলাম লিখেছিলেন। ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত ‘ন্যাটো কি আর টিকবে?’ শিরোনামে এই কলামে তিনি ন্যাটোর মধ্যকার বিভেদ ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন।

এই বিশ্লেষক বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানো, ইরান, রাশিয়া, সিরিয়াসহ বেশ কিছু বিষয়ে ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভাজন রয়েছে। ন্যাটো ঘরের ভেতরে-বাইরে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ইউক্রেনেও ন্যাটো পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।

Also Read: ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে ইউরোপের চিন্তা অনেকটা বেড়েছে

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরলে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়তে পারে ন্যাটো। কেননা, ট্রাম্প ন্যাটোর বাজেটে মার্কিন হিস্যা কমাতে চান।

ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, ন্যাটোর শরিক দেশগুলো যদি তাদের ভাগের অর্থ (চাঁদা) না দেয়, তাহলে তিনি ‘যা খুশি করার জন্য’ রাশিয়াকে উৎসাহিত করবেন। অথচ রাশিয়ার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভীতি থেকে ৭৫ বছর আগে এ দিনে ন্যাটো যাত্রা শুরু করেছিল।

তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে, এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা ও ন্যাটোর ওয়েবসাইট

Also Read: ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে