ইউরোপে সাম্প্রতিক অভিবাসন সমস্যার খবর পরিবেশনে সংবাদমাধ্যমে তিনটি শব্দ অভিবাসী, শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থী—প্রায় একই অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর প্রতিটিই আলাদা অর্থ প্রকাশ করে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও পরিণতি বিবেচনায়ও শব্দগুলোর প্রয়োগ ভিন্ন হয়ে থাকে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে ওই তিন শব্দের সাধারণ অর্থ ও ব্যবধান তুলে ধরেছে:
অভিবাসী: কেউ বসবাসের উদ্দেশ্যে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে এক বছরের বেশি সময় থাকলে তাঁকে সাধারণ অর্থে অভিবাসী বলা যায়। মানুষ বিভিন্ন কারণে অভিবাসী হতে পারে। কাজ বা উন্নততর জীবনযাপনের খোঁজে যাঁরা দেশ ছাড়েন, তাঁদের অর্থনৈতিক অভিবাসী বলা হয়। পড়াশোনার উদ্দেশ্য বা পারিবারিক কারণেও অনেকে অভিবাসী হয়। নিজ দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে বা পরিবারের সদস্যদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও মানুষ অভিবাসনের পথ বেছে নেয়।
শরণার্থী: সশস্ত্র লড়াই বা নিপীড়ন থেকে বাঁচতে যদি কেউ দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং দেশে ফিরে গেলে তাঁর জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থাকায় তাঁকে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়ে স্বীকৃতি থাকে, তাঁকে শরণার্থী বলা যেতে পারে। ১৯৫১ সালের শরণার্থী সনদ অনুযায়ী তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হয়। ওই সনদের মূলনীতি হলো, শরণার্থীদের তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না অথবা সেই পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে বাধ্য করা যাবে না যেখানে তাদের জীবন ও স্বাধীনতা হুমকির মুখোমুখি হবে। কেউ শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর তাঁকে সামাজিক আবাসন ও কল্যাণমূলক সুবিধাগুলো দিতে হবে এবং কাজের ব্যবস্থা ও সমাজে মিশে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে হবে।
আশ্রয়প্রার্থী: কেউ কোনো দেশে গিয়ে আশ্রয় চাইলে তাঁর দাবি বিবেচনা করার এবং তাঁকে অবিলম্বে নিজ দেশে ফেরত না পাঠানোর জন্য কর্তৃপক্ষের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শরণার্থী সনদে বলা হয়েছে, কেউ শরণার্থী হলে আশ্রয়ের আবেদন করার জন্য তাঁকে সুযোগ দিতে হবে এবং ওই আবেদন-প্রক্রিয়া চলাকালীন তাঁর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।