
করোনা মহামারির শুরু থেকেই বিপর্যস্ত ইউরোপ। মাঝে নানা রকমের পদক্ষেপের পর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও এখন আবারও আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে আবার ধরা পড়েছে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। অমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর এখন পর্যন্ত একমাত্র মৃত্যু দেশটিতে।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখল যুক্তরাজ্য। স্থানীয় সময় গত বুধবার দেশটিতে নতুন করে ৭৮ হাজার ৬১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
করোনার অতি সংক্রামক ধরন অমিক্রন শনাক্তের পর তা যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে ধরনটির উপস্থিতি মিলেছে। অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ১ জন।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এর মধ্যেই দেশটিতে করোনার নতুন ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে সংক্রমণ মোকাবিলায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারির পক্ষে নন যুক্তরাজ্যের ১০০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা। গত মঙ্গলবার এক ভোটাভুটিতে তাঁরা বিধিনিষেধের বিপক্ষে অবস্থান নেন।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হোয়াইটি এমপিদের উদ্দেশে বলেন, অমিক্রন অতিমাত্রায় সংক্রমক। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সামনেই বড়দিনের উৎসব। মানুষজনকে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন অমিক্রনে আক্রান্তদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও খুব শিগগির এ সংখ্যা বাড়বে। হাসপাতালগুলো এখনই রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলো আবারও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনার কথা ভাবছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।
এদিকে মহামারি শুরুর পর থেকে অমিক্রন যুক্তরাজ্যের জন্য ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হুমকি’ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান নির্বাহী জেনি হ্যারিস। তিনি বলেন, করোনার আগের ধরনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আগামী কয়েক দিনে সংক্রমণের হার হতবাক করে দেওয়ার মতো হতে পারে বলে প্রাপ্ত হিসাব–নিকাশগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ ও সে দেশ থেকে আসার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্স সরকারের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। খবর এএফপির।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় সময় আগামীকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে আসা এবং ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সংগত কারণ দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া এবং টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদেরও এ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। মানুষ শুধু ভ্রমণের জন্য এবং পেশাগত কারণে যুক্তরাজ্য থেকে আসতে বা সেখানে যেতে পারবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্রান্স সরকার যুক্তরাজ্য থেকে এবং সেখানে ভ্রমণের জন্য একটি অপরিহার্য কারণের প্রয়োজনীয়তা পুনঃস্থাপন করার পথ বেছে নিয়েছে। তবে ফরাসি নাগরিক এবং ইইউ নাগরিকেরা এখনো যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফিরে আসতে পারবেন।
ফরাসি সরকারের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল আটাল বিএফএমটিভি চ্যানেলকে বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে অনেক কঠোর নিয়মকানুন করেছি। এর চেয়ে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপন করব। আমাদের দেশে অমিক্রনের বিস্তার যতটা সম্ভব বিলম্বিত করা এবং বুস্টার ডোজের সুবিধা নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছি আমরা।’
ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইইউর নেতারা। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে এক সম্মেলনে অংশ নেন ইইউর শীর্ষ নেতারা। তবে অমিক্রন মোকাবিলায় একযোগে কাজ করার বিষয়ে এখনো একমত হতে পারেনি তাঁরা। খবর এএফপির।
আশঙ্কা করা হচ্ছে জানুয়ারির শুরুর দিকেই ইইউতে অতি সংক্রামক অমিক্রন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। ফলে বিষয়টি ইইউ নেতাদের আলোচ্যসূচির শীর্ষে ছিল। তাঁরা ইউরোপের মানুষের স্বাস্থ্যসংকটের আশঙ্কা করছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইউরোপ একটি ‘অমিক্রন শীতের’ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন গত বুধবার বলেছেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে যে জানুয়ারির মাঝামাঝি অমিক্রন ইউরোপে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করবে।’