Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বচ্ছতার জন্য মেয়র যা করলেন

তুরস্কের তুনজেলি শহরের মেয়র হয়েছেন ফাতিহ মেকোগলু।

তুরস্কের তুনজেলি নগরের নতুন মেয়র ফাতিহ মেকোগলু। গত ৩১ মার্চের স্থানীয় নির্বাচনে তিনি আনাতোলিয়ার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত তুনজেলির মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র হিসেবে করা তাঁর প্রথম কাজ দেশজুড়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি তাঁর মেয়র কার্যালয়ের বাইরের দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলেছেন। মেয়র হিসেবে কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তিনি এ ব্যবস্থা নেন।

শুধু এটাই নয়; আরও কিছু কাজের জন্যও আলোচনায় আছেন ৫০ বছর বয়সী মেয়র ফাতিহ মেকোগলু। তিনি তাঁর জন্য বরাদ্দ সরকারি গাড়ি নেননি। জনগণের অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে, তা যেন জনগণ দেখতে পান, সে জন্য তিনি মেয়র কার্যালয়ের সামনের ভবনে ব্যানারে অর্থনৈতিক খতিয়ান টাঙিয়ে রেখেছেন। তিনি তুরস্কের একমাত্র কমিউনিস্ট দল কমিউনিস্ট পার্টি অব তুর্কির (টিকেপি) মেয়র। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মন কেড়ে নিলেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একেপি পার্টির লোকজনের মধ্যে। ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির নেতা-কর্মীরা নতুন মেয়রের কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে দেখছেন না।

ফাতিহ মেকোগলু তাঁর কার্যালয়ে বসে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, কী হচ্ছে—জনগণকে জানানোর চেয়ে স্বাভাবিক আর কিছু হতে পারে না। এটা অন্যের জন্য অপমান বা অভিশাপের বিষয় না। তবে মেয়র হিসেবে এটা তাঁর প্রথম মেয়াদ নয়। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি ওভাসিক শহরের মেয়র ছিলেন। এটি তুনজেলি প্রদেশের একটি শহর। সে সময় তিনি কৃষিকে অগ্রাধিকার ও বিনা মূল্যে জনপরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করাসহ নানা জনপ্রিয় উদ্যোগের জন্য প্রশংসিত হন। এসব কারণে লোকে তাঁকে ‘কমিউনিস্ট মেয়র’ বলে থাকেন।

তবে দুই সন্তানের বাবা ফাতিহ মেকোগলু নিজেকে ‘কমিউনিস্ট মেয়র’ মনে করেন না। তাঁর ভাষায়, ‘আমি সমাজতন্ত্রী। যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি সমাজতন্ত্রী? আপনি কি সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখেন? আমি বলব যে অবশ্যই আমি তা। তবে একই সঙ্গে পুঁজিবাদ যখন উন্মত্ত হয়ে পড়ে, তখন কমিউনিস্ট হওয়া বা কমিউনিস্ট শহরের মতো দেখার বিষয়টি বাড়াবাড়িই বলতে হবে।’

তুনজেলি এমনিতে কুর্দি–অধ্যুষিত এলাকা, যা বেশ ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম ঘরানার হিসেবে পরিচিত। ১৯২৩ সালে আধুনিক তুরস্কের যাত্রা। আধুনিক তুরস্কের এই ধারণার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে কুর্দিদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালায় রাষ্ট্র। ১৯৩৮ সালে তুরস্কের সামরিক বাহিনী এই অঞ্চলে বোমা ফেলে হামলা চালিয়ে কুর্দিদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্যোগ নেয়। ওই ঘটনায় ১৩ হাজারের বেশি কুর্দি নিহত হন। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ওই ঘটনার জন্য প্রথমবারের মতো দুঃখ প্রকাশ করেন। এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ধরনের দুঃখ প্রকাশের ঘটনা ঘটেনি।

আধুনিক তুরস্কের জনক মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক নিজে তুনজেলি নামটি রাখলেও এখানকার বেশির ভাগ মানুষ এটাকে দারসিম নামে ডাকে। জাতীয়তাবাদীরা অবশ্য বাসিন্দাদের এমন আচরণকে তুরস্কের প্রতি অবমাননা বলে মনে করেন। মেয়র ফাতিহ মেকোগলু তাঁর কার্যালয়ে দারসিম নামটি লিখে রেখেছেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র ফাতিহ বলেন, ‘সমালোচনা হয়তো আছে, এরপরও এ বিষয়ে তুরস্কের অনেক মানুষের সমবেদনা আছে।’

জাতীয় পর্যায়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব তুর্কি খুবই ছোট দল। পার্লামেন্টে তাদের কোনো আইনপ্রণেতা নেই। ছোট দলের একজন নেতার এমন বড় ধরনের ভালো উদ্যোগ ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে। মেয়র ফাতিহ চান তাঁর এই মডেল সারা তুরস্কে ছড়িয়ে দিতে।

মেতিন কাহরামান নামের একজন গায়ক ও গবেষক বলেন, মেয়র ফাতিহ মেকোগলু একটি ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি তুরস্কের অন্যত্রও অনুসরণ করা হবে বলে তিনি মনে করেন।

মধ্য আশির দশক থেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন ফাতিহ মেকোগলু। তিনি জানালেন, খুব বড় স্বপ্ন তাঁর নেই। যা করতে চান, সেটার জন্য তিনি কাজটা অব্যাহত রাখতে চান। তিনি ক্ষমতাসীন এরদোয়ান বা বিরোধী নেতাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু বললেন, ‘পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদীরা কি সঠিক পথে থাকতে পারে? আমি মনে করি, পারে না।’