ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই অ্যান্ড্রু

যৌন কেলেঙ্কারি: প্রিন্স উপাধি হারানো অ্যান্ড্রু কবে রাজকীয় বাড়ি ছাড়বেন, কোথায় যাবেন

প্রিন্স উপাধি বাতিল হওয়া ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য অ্যান্ড্রুকে আপাতত তাঁর রাজকীয় বাড়ি ‘রয়েল লজ’ ছাড়তে হবে না। ফলে নতুন বছর শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁকে আর স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটে স্থানান্তর হতে হবে না। বিবিসি এমনটাই জানতে পেরেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁর ছোট ভাই অ্যান্ড্রুর প্রিন্স উপাধি ও সম্মাননা বাতিল করেন। বলেন, অ্যান্ড্রুকে এখন থেকে অ্যান্ড্রু মাউন্টব্যাটেন উইন্ডসর নামে ডাকা হবে। উইন্ডসরে বরাদ্দ পাওয়া রাজকীয় বাড়ি ‘রয়েল লজ’ ছেড়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। রয়েল লজ ছাড়ার পর অ্যান্ড্রু রাজা-নিয়ন্ত্রিত স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের একটি বাড়িতে উঠবেন। রাজা নিজেই এর খরচ বহন করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কয়েক মাস ধরে নিজ দেশে তীব্র সমালোচনার মধ্যে আছেন অ্যান্ড্রু। আর এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাজা তৃতীয় চার্লস এসব সিদ্ধান্ত নেন। যদিও অ্যান্ড্রু বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

ব্রিটিশ সরকার বলেছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। অ্যান্ড্রু এখনো ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। রাজকীয় কাতারে তাঁর এ অবস্থানটাই এখন আর অবশিষ্ট আছে।

ব্রিটিশ সরকার বলেছে, অ্যান্ড্রুকে রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়ার জন্য নতুন কোনো আইন পাস করার পরিকল্পনা তাদের নেই। অ্যান্ড্রু এখনো সিংহাসনের উত্তরাধিকারের তালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। রাজকীয় কাতারে তাঁর এ অবস্থানটাই এখন আর অবশিষ্ট আছে।

এদিকে অ্যান্ড্রুর যেন রাজা হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে আইন প্রণয়নের দাবি উঠেছে। তবে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করতে চাইলে পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করতে হবে, যা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। সেই আইনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিও প্রয়োজন হবে।

অ্যান্ড্রু ২০০৪ সাল থেকে রয়েল লজে বসবাস করছেন। এর আগের বছর তিনি রয়েল লজে থাকার বিষয়ে ক্রাউন এস্টেটের সঙ্গে ৭৫ বছরের একটি ইজারা চুক্তি সই করেন। ক্রাউন এস্টেট একটি স্বাধীন প্রপার্টি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।

বাকিংহাম প্যালেস বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব উইন্ডসরের রয়েল লজ থেকে স্যান্ড্রিংহামে অ্যান্ড্রু সরে যাবেন।

তবে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর মতে, স্যান্ড্রিংহামে অ্যান্ড্রুর স্থানান্তর নতুন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলে বড়দিনের সময় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। কারণ, ক্রিসমাসে রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন, আর সে সময়ে সেখানে তাঁর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।

অ্যান্ড্রু স্যান্ড্রিংহাম এস্টেটের কোন বাড়িতে উঠবেন, তা এখনো জানা যায়নি। বাড়িটির সব খরচ বহন করবেন রাজা চার্লস নিজেই। তিনি তাঁর ভাইয়ের জন্য ব্যক্তিগত আর্থিক সহায়তাও দেবেন।

রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর মতে, অ্যান্ড্রুর স্থানান্তর নতুন বছর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলে বড়দিনের সময় এক বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। কারণ, ক্রিসমাসে রাজপরিবারের সদস্যরা ঐতিহ্যগতভাবে স্যান্ড্রিংহামে একত্র হন, আর সে সময় সেখানে অ্যান্ড্রুর উপস্থিতি অস্বস্তিকর হতে পারে।

নরফোকে স্যান্ড্রিংহাম এস্টেট ১৮৬২ সালে তৎকালীন ওয়েলসের প্রিন্স (পরবর্তী সময়ে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড) ব্যক্তিগত গ্রামীণ বিশ্রামস্থল হিসেবে কিনেছিলেন।

ঐতিহাসিক এ সুবিশাল এস্টেটটি প্রায় ৩১ বর্গমাইল (প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যা আয়তনে প্রায় নটিংহাম বা ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ শহরের সমান।

এর আগে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ককে কেন্দ্র করে সমালোচনার মুখে গত মাসের শুরুতে ‘ডিউক অব ইয়র্ক’সহ রাজকীয় নানা পদবি ব্যবহার না করার ঘোষণা দেন অ্যান্ড্রু। বিশেষ করে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগকারী নারী ভার্জিনিয়া জিউফ্রের একটি স্মৃতিকথা প্রকাশের পর তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়ে যায়।

জিউফ্রের মৃত্যুর পর গত মাসের শুরুর দিকে এ স্মৃতিকথা প্রকাশ করা হয়েছে। স্মৃতিকথায় জিউফ্রে অভিযোগ করেছেন, কিশোরী বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁর কয়েকবার যৌন সম্পর্ক হয়েছে। তবে অ্যান্ড্রু বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

জীবিত থাকাকালেও জিউফ্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। অ্যান্ড্রু ২০২২ সালে জিউফ্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি মীমাংসা করেন।

এপস্টেইনকে ২০০৮ সালে ফ্লোরিডায় ১৮ বছরের কম বয়সী একজনের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার চেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যৌনপণ্য পাচার মামলায় বিচারাধীন থাকাকালে ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি।