যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স চেভেনিং হাউসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ৯ আগস্ট ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স চেভেনিং হাউসে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ৯ আগস্ট ২০২৫

আলাস্কায় রুশ–মার্কিন শীর্ষ বৈঠক

ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে শান্তির পথ হবে না: ট্রাম্প-পুতিনকে ইউরোপীয় নেতাদের সতর্কবার্তা

ট্রাম্প-পুতিন আগামী সপ্তাহের শীর্ষ বৈঠক নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, সম্ভাব্য চুক্তিতে ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

এ উদ্বেগ থেকে গতকাল শনিবার রাতে ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের প্রতি রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে আগামী শুক্রবার আলাস্কায় বৈঠকে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওই বৈঠকে যোগ দিতে চাইছেন। ইউক্রেন ও ইউরোপের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, কিয়েভকে অবশ্যই আলোচনার অংশ করতে হবে।

গত শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দেওয়ার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘উভয় পক্ষের মঙ্গলের জন্য কিছু ভূখণ্ড অদলবদল করতে হবে।’ এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

পরদিন গতকাল শনিবার জেলেনস্কি  সতর্ক করে বলেন, শান্তি কেনার জন্য তাঁর দেশ রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে না।

ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের দিন ঘোষণার পর নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে বৈঠক করেন কিয়েভের মিত্রদেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলেনস্কি লেখেন, ‘ইউক্রেনীয়রা দখলদারের কাছে নিজেদের ভূমি দেবে না। আমাদের স্বার্থবিরোধী যেকোনো সিদ্ধান্ত, আর ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত হবে শান্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ফোনালাপে জেলেনস্কি ইউক্রেনের মিত্রদের প্রতি টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘স্পষ্ট পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান।

গতকাল রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে ইউরোপীয় নেতারা বলেন, সক্রিয় কূটনীতি, ইউক্রেনকে সহায়তা ও রুশ ফেডারেশনের ওপর চাপ সৃষ্টি—এ তিনটিকে মিলিয়ে একটি যৌথ পদ্ধতিই শুধু রাশিয়ার অবৈধ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সফল হতে পারে।

ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে সমর্থন অব্যাহত রেখে, পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ ও তা বজায় রেখে তাঁরা ট্রাম্পকে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
ইউক্রেনীয়রা দখলদারের কাছে নিজেদের ভূমি দেবে না। আমাদের স্বার্থবিরোধী যেকোনো সিদ্ধান্ত, আর ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত হবে শান্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত।
ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

এই নেতারা আরও বলেন, একটি সমাধানে অবশ্যই ইউক্রেন ও ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাস্বার্থ রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি, যা ইউক্রেনকে তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা কার্যকরভাবে রক্ষার সক্ষমতা দেবে।

ইউরোপীয় নেতারা বিশ্বাস করেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে দেশটিতে শান্তির পথ নির্ধারণ করা যাবে না।

ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের দিন ঘোষণার পর নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গতকাল যুক্তরাজ্যে বৈঠক করেন কিয়েভের মিত্রদেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা।

এদিকে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের তারিখ ঘোষণার পর টেলিফোনে জেলেনস্কি, স্টারমার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিড‌রিখ মের্ৎসের সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। সেই সঙ্গে ইউরোপকেও আলোচনায় যুক্ত হতে হবে।’

পুতিন এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নন। জেলেনস্কি তিনমুখী আলোচনা চান। তিনি মনে করেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ছাড়া শান্তির পথে অগ্রগতি সম্ভব নয়।

এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় নিয়মিত ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘এ যুদ্ধের একটি সত্যিকারের সমাপ্তি আসতে হবে। যুদ্ধ শেষ করার দায়িত্ব রাশিয়ার। কারণ, যুদ্ধটা তারা শুরু করেছে।’

এ বছর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করে। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত ও লাখ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

পুতিন এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পেতে কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নন। তবে জেলেনস্কি তিনমুখী আলোচনা চান। তিনি মনে করেন, পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ছাড়া শান্তির পথে অগ্রগতি সম্ভব নয়।

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না। সেই সঙ্গে ইউরোপকেও আলোচনায় যুক্ত হতে হবে।
এমানুয়েল মাখোঁ, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক হবে আলাস্কায়। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া তাদের এ অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। অঙ্গরাজ্যটির পশ্চিম প্রান্ত থেকে রাশিয়ার পূর্বতম অংশ খুব বেশি দূরে নয়, মাঝে শুধু বেরিং প্রণালি।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকটি হবে ২০২১ সালের জুনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম বৈঠক। সেবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল। এর ৯ মাস পর ইউক্রেনে আক্রমণ করে রাশিয়া।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের স্থান হিসেবে আলাস্কাকে বেছে নেওয়া পছন্দ হয়নি জেলেনস্কির। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের ভূখণ্ডে, আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, সেটি থেকে অনেক দূরে।’

আলাস্কা নিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, বৈঠকের জন্য এ জায়গা বেছে নেওয়া যুক্তিসংগত। কারণ, আর্কটিকের কাছাকাছি এ অঙ্গরাজ্য দুই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) সীমানায় এবং সেখানেই তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ মিলিত হয়েছে। মস্কো ট্রাম্পকে পরে রাশিয়ায সফর করার আমন্ত্রণও জানিয়েছে বলে জানায় ক্রেমলিন।

ট্রাম্প–পুতিন শেষবার বৈঠক হয় ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, জাপানে অনুষ্ঠিত জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের সঙ্গে কয়েক দফা টেলিফোনে কথা বলেছেন।

ট্রাম্প–পুতিন শেষবার বৈঠক হয় ২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, জাপানে অনুষ্ঠিত জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের সঙ্গে কয়েক দফা টেলিফোনে কথা বলেছেন।