ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিন
ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ভ্লাদিমির পুতিন

যুদ্ধ থামাতে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের আশা কমছে

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টায় অগ্রগতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই এই বৈঠক আয়োজনে কথা বলেছিলেন। তবে এমন কোনো বৈঠকের বিষয় নাকচ করে দিয়েছে মস্কো। ফলে আদৌ শেষ পর্যন্ত দুই নেতা এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর ১৮ আগস্ট জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের নিয়ে হোয়াইট হাউসে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেদিনই ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দেন।

ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর পুতিনের সঙ্গে বসার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন জেলেনস্কি। তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এটা নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলা হয়নি। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস উইথ ক্রিস্টেন ওয়াকার’ অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। সেখানে বৈঠক নিয়ে যে আশার আলো দেখা দিয়েছিল, তাতে পানি ঢেলে দিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে কোনো বৈঠকের বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয়নি। যখনই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তুগুলো প্রস্তুত করা হবে, তখন জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে রাজি পুতিন। তবে এমন কোনো বিষয়বস্তু এখনো প্রস্তুত করা হয়নি। সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনে প্রেসিডেন্টের বৈধতা এবং শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে ক্রেমলিনের শর্তগুলোর বিষয়েও কথা বলেন লাভরভ।

বৈঠক নিয়ে এমন ধোঁয়াশার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছিলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আরও প্রলম্বিত করতে চান পুতিন। এতে হতাশ ট্রাম্পও। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ইউক্রেন শান্তি প্রচেষ্টা নিয়ে তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ একটি সিদ্ধান্ত নেবেন। মস্কোর ওপর বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় ট্রাম্পের মাথায় ছিল লাল রঙের টুপি। তাতে লেখা—‘ট্রাম্প সব বিষয়েই সঠিক।’ তখন ট্রাম্পের হাতে একটি ছবিও ছিল। আলাস্কা বৈঠকের পর সেটি নাকি পুতিন তাঁকে পাঠিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন বিষয়ে অগ্রগতি হলে ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলের ফাইনালে পুতিনকে আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি।

‘গন্তব্যহীন এক পথ’

পুতিন জেলেনস্কি বৈঠকের মতোই যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত সোমবার জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল এই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি। সেদিন পুতিনকে ফোন দেওয়ার আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, কিয়েভের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া কিছু নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়ে রাজি হয়েছে মস্কো।

তবে এমন কোনো বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। গত বুধবার সের্গেই লাভরভ বলেছিলেন, রাশিয়াকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা ‘গন্তব্যহীন এক পথের’ দিকে এগোবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ–ও বলেছেন, যুদ্ধ–পরবর্তী ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের যে কথা বলা হচ্ছে, তাতে রাজি নয় মস্কো।

এটা নিয়ে জেলেনস্কির ভাষ্য, ‘রাশিয়া যখন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আপত্তি তুলছে, তখন আসলেই আমি জানি না তাদের কারা হুমকি দিচ্ছে।’ আর কিয়েভ সফরে গিয়ে ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুতে বলেছেন, যুদ্ধ শেষে রাশিয়া শান্তি চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলবে এবং ইউক্রেনের এক কিলোমিটার ভূখণ্ডও দখলের চেষ্টা করবে না, তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজন রয়েছে।