বুখারেস্টে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে ভাষণের সময় নিকোলাই চশেস্কু
বুখারেস্টে কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে ভাষণের সময় নিকোলাই চশেস্কু

ফিরে দেখা

হেলিকপ্টার থেকে নেমে গাড়ি ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা প্রেসিডেন্টের, শেষে কীভাবে ধরা পড়লেন

রোমানিয়ার তারগোভিস্তে শহর। রাজধানী বুখারেস্ট থেকে বেশ কিছুটা দূরে। শহরের এক সেনা ব্যারাকে একতলা ভবনের দেয়ালে এখনো অজস্র গুলির চিহ্ন। এই দেয়ালের সামনেই গুলি চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চশেস্কু ও তাঁর স্ত্রী ফার্স্ট লেডি এলেনাকে। তারিখটা ঠিক ৩৬ বছর আগে—এই বড়দিনেই।

ফিরে যাই সেই দিনটাতে, ১৯৮৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঠিক আগে সামরিক আদালতে এক ঘণ্টার কিছুটা বেশি সময়ে বিচার শেষ করা হয় চশেস্কু ও তাঁর স্ত্রীর। অভিযোগ আনা হয় গণহত্যা, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস আর শতকোটি ডলার বিদেশে রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার। বিচারে সব কটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায় দেন আদালত।

চশেস্কু ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা। দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে থেকেই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী এলেনা নিজেকে বিজ্ঞানী দাবি করলেও নাম লিখিয়েছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিতে। তো কী এমন হয়েছিল রোমানিয়ায়, যে রাজনৈতিক এই দম্পতির শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল? কীভাবেই–বা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন তাঁরা। চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সময়ের ঘটনাগুলো।

প্রবল জনরোষ, তুমুল বিক্ষোভ

মৃত্যুদণ্ডের মাস ডিসেম্বরেরই ঘটনা। চশেস্কুর শাসন ঘিরে রোমানিয়ায় তখন চরম অসন্তোষ। মাসের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমাঞ্চলের শহর তিমিসোয়ারায় প্রথম শুরু হয় জনতার বিপ্লব। সেই বিপ্লব সহিংসভাবে দমন করেন চশেস্কু। তবে হয়েছিল হিতে বিপরীত। বিক্ষোভ বরং সারা দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভের আগুন শেখ পর্যন্ত পৌঁছায় রাজধানী বুখারেস্টে।

এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন চশেস্কু? বুখারেস্টে ডাক দিলেন বিশাল এক জনসমাবেশের। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি। টেলিভিশনে তা আবার সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এটিই ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। দিনটা ২১ ডিসেম্বর। চশেস্কুর ডাকে লাখোজনতা হাজির হলেন বুখারেস্টে কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান কার্যালয়ের চত্বরে। চারদিকে মানুষের ঢল।

ভিড় থেকে আসছিল কান ফাটানো চিৎকার। শুধুই প্রেসিডেন্টের গুণকীর্তনে ভরা স্লোগান। কার্যালয়ের ব্যালকনিতে এলেন চশেস্কু। হাত নাড়ালেন জনতার উদ্দেশে। তবে অবাক করার বিষয় হলো স্লোগান ভেসে এলেও উপস্থিত জনতা কেমন যেন নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কোনো নড়াচড়া নেই। ভিড়ের সামনের দিকে কয়েকজনের মধ্যে শুধু চাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছিল।

সেনা-পুলিশকে বাধা দিলেই ভবনের ওপর থেকে ছুটে আসছিল স্নাইপারের গুলি। ঝরছিল তাজা প্রাণ। রাস্তা সাধারণ মানুষের রক্তে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিল। সেই রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করতে নিয়ে আসা হয়েছিল জলকামান।

অনেকে বলে থাকেন, আসলে যে স্লোগান শোনা যাচ্ছিল, তা ছিল নকল। আগে থেকেই রেকর্ড করে তা কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ের চত্বরে বিভিন্ন সাউন্ডবক্সে বাজানো হচ্ছিল। এসবের কিছুই বুঝতে পারেননি কার্যালয়ের ভবনের ব্যালকনিতে থাকা চশেস্কু। স্বাভাবিকভাবেই শুরু করলেন ভাষণ। প্রথমে মনে হচ্ছিল সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। তবে তিনি যখন ভাষণের মাঝপথে তখনই দেখা দিল বিপত্তি।

মানুষের ভিড়ের পেছন দিক দিয়ে হঠাৎ করে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা গেল। এগুলো কিন্তু আগে থেকে রেকর্ড করা ছিল না। চশেস্কুর স্ত্রী এলেনা জোর গলায় বলে উঠলেন, ‘কেউ একজন গুলি করছে।’ নিরাপত্তাকর্মীরা তখন জানালেন, উপস্থিত জনতা আদৌ প্রেসিডেন্টের সমর্থনে আসেনি; বরং তারা বিক্ষোভকারী। আর এখন কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে।

চশেস্কু ছিলেন কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির ভবনের ব্যালকনিতে। বিক্ষুব্ধ জনতা সেটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। ভবনের নিচে পৌঁছে তাঁরা চশেস্কুকে পদত্যাগের ডাক দেন। নিরাপত্তারক্ষীরা কোনোমতে তাঁদের পিছু হটাতে সক্ষম হন। তারপরও চশেস্কু ভাষণ চালিয়ে যান। উপস্থিত মানুষকে নানা আশার কথা শোনান। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

১৯৮৯ সালের ২২ ডিসেম্বর বুখারেস্টে বিক্ষোভ

রক্ত ধুতে জলকামান

ভাষণ শেষেও হাজার হাজার মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ের সামনে থেকে যান। স্লোগান দিতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘অনেক সহ্য করেছি, আর নয়।’ বিক্ষুব্ধ মানুষ ছড়িয়ে পড়ে বুখারেস্টজুড়ে। সবার মুখে একই কথা ‘চশেস্কুর পদত্যাগ চাই’, ‌‘স্বাধীনতা চাই’। এসব চশেস্কুর কানে গেলে খেপে আগুন হয়ে যান তিনি। তখনই দেন নির্মম এক আদেশ।

সেনাবাহিনী ও নিজের বিশ্বস্ত গোপন পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেন, যেকোনো মূল্যে বিক্ষোভ দমন করতে। রাস্তায় নামে ট্যাংক-সাঁজোয়া যান। শুরু হয় জনতার ওপর চরম নৃশংসতা। সেনা-পুলিশকে বাধা দিলেই ভবনের ওপর থেকে ছুড়ে আসছিল স্নাইপারের গুলি। ঝরছিল তাজা প্রাণ।

বুখারেস্টের রাস্তা সাধারণ মানুষের রক্তে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিল। সেই রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করতে নিয়ে আসা হয়েছিল জলকামান। সেদিন ভোররাতেই চশেস্কুকে খবর পাঠানো হলো, বিক্ষোভ দমন করা গেছে।

রায় ঘোষণা শেষে দড়ি দিয়ে দুজনের হাত বাঁধতে যান সেনাসদস্যরা। তখন বেশ হট্টগোল দেখা দেয়। চশেস্কু ও এলেনা আপত্তি জানিয়ে বলেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই, তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছেন না।

স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন চশেস্কু। স্ত্রীকে বললেন, চিন্তার আর কিছু নেই। আবার আগের জীবনে ফিরব। কিন্তু না। ২২ ডিসেম্বর ভোরের আগেই আবার খবর এল—বিপুলসংখ্যক মানুষ বুখারেস্টের মাঝের দিকে যাচ্ছেন। এরপর হঠাৎ যেন সবকিছু বদলে গেল। চশেস্কুর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা যোগ দিলেন বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে। এবার কী করবেন প্রেসিডেন্ট?

তখনই কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয়ে পলিটব্যুরোর সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসলেন চশেস্কু। সেখান থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। বাইরে লাখ লাখ মানুষ তখন রাগে ফুঁসছে। একপর্যায়ে তারা সব বাধা ভেঙে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ শুরু করল।

গার্ডিয়ান পত্রিকায় নিকোলাই চশেস্কুর পতনের খবর

হেলিকপ্টারে অনিশ্চিত যাত্রা

পরিস্থিতি খারাপ বুঝে পাইলটকে ডাকলেন চশেস্কু। স্ত্রী এলেনা ও নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে কার্যালয়ের ছাদ থেকেই উঠলেন হেলিকপ্টারে। বিক্ষোভকারীরা ছাদে পৌঁছানোর মাত্র কয়েক মিনিট আগেই আকাশে উড়াল দিল হেলিকপ্টার। রওনা দিল শহরের উত্তরে স্নাগভ এলাকায় চশেস্কুর বাসভবনের দিকে। এলাকাটি বুখারেস্ট থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে।

পথে যেতে যেতে সামরিক সহায়তা চাইলেন চশেস্কু। পাঠাতে বললেন সেনাভর্তি আরও দুটি হেলিকপ্টার। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জবাবটা ছিল পরিষ্কার—কোনো সহায়তা পাঠানো হবে না। কি আর করা, হেলিকপ্টার নিয়ে এবার পশ্চিমে টিটু শহরে দিকে রওনা দিলেন চশেস্কু। সেখানে এক সেনাঘাঁটিতে তাঁর বিশ্বস্ত কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন, তাঁরা যদি কিছু করতে পারেন।

তখন হেলিকপ্টারের রেডিওতে একটি বার্তা ভেসে এল। অনুমতি না নিয়ে আকাশে উড়োজাহাজ বা হেলিকপ্টার উড়লে সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো গুলি করে নামানো হবে। বাধ্য হয়েই হেলিকপ্টারটি মাটিতে নামাতে হলো। বুখারেস্ট ও তারগোভিস্তে শহরের মাঝামাঝি এক রাস্তায় চশেস্কু, স্ত্রী এলেনা আর তাঁদের দুই দেহরক্ষীকে নামিয়ে দিলেন পাইলট। জেঁকে বসল দুশ্চিন্তা।

রাস্তা থেকে একটি প্রাইভেট কার ছিনতাই করলেন চশেস্কুর দেহরক্ষীরা। গাড়িতে যাওয়ার পথে রেডিওতে প্রেসিডেন্ট শুনলেন, বুখারেস্টে তাঁর সরকারের পতন হয়েছে। গাড়ির মালিক তাঁদের তারগোভিস্তে শহরের উপকণ্ঠে কৃষি ইনস্টিটিউটে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিলেন। পৌঁছানোর পর ইনস্টিটিউটের পরিচালক চশেস্কু ও তাঁর স্ত্রীকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় দিয়ে দিলেন তালা। তারপর আর কী—কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ দুজনকে ধরে তুলে দিল সেনাবাহিনীর হাতে।

মৃত্যুদণ্ডের পর নিকোলাই চশেস্কুর নিথর দেহ

বিচারের সময় অট্টহাসি

রোমানিয়ার নতুন সরকার তখন চাচ্ছিল যত দ্রুত সম্ভব দুজনের বিচার শেষ করতে। সে জন্য সরকারের নতুন প্রধান এক আদেশ জারি করলেন। বলা হলো, তারগোভিস্তে শহরে যে সেনা ব্যারাকে তাঁদের আটক রাখা হয়েছে, সেখানেই সামরিক আদালতে বিচার হবে। সে অনুযায়ী বড়দিনে দুজনকে হাজির করা হয় আদালতের সামনে।

আদালতে যখন চশেস্কুর অপরাধের ফিরিস্তি পড়ে শোনানো হচ্ছিল, তখন বারবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলেন তিনি। বলছিলেন, এই আদালত অবৈধ, এর কোনো স্বীকৃতি নেই। যদিও তাঁর এসব কথার কোনো দাম ছিল না। কারণ, রায় কী হবে আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। ‌রায়ে বলা হলো, এখনই চশেস্কু ও এলেনাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।

রায় ঘোষণা শেষে দড়ি দিয়ে দুজনের হাত বাঁধতে যান সেনাসদস্যরা। তখন বেশ হট্টগোল দেখা দেয়। চশেস্কু ও এলেনা আপত্তি জানিয়ে বলেন, এর কোনো প্রয়োজন নেই, তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছেন না। তাঁদের এ আপত্তি কানে তোলা হয়নি। হাত বেঁধে নেওয়া হয় ফায়ারিং স্কোয়াডে। তবে চশেস্কুর একটি অনুরোধ রাখা হয়েছিল, স্ত্রীর পাশেই যেন তাঁকে সাজা দেওয়া হয়।

রাজধানী বুখারেস্টে তখন দুই আনন্দ-চশেস্কুর পতনের আর বড়দিনের। ৮০ কিলোমিটার দূরে তারগোভিস্ত শহরে সেনা ব্যারাকের একটি ভবনের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে চশেস্কু আর এলেনা। ভেসে এল মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। তারপর নীরবতা। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির। তখন চশেস্কুর বয়স ৭১ বছর আর এলেনার ৭৩।

শত শত কোটি ডলার খরচ করে বিশাল এক প্রাসাদ তৈরির কাজে হাত দেন চশেস্কু। এটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবনগুলোর একটি। এতে মানুষের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে গিয়েছিল।

কেন এই পরিণতি

রোমানিয়ার রাজনীতি বহু পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। রাজতন্ত্র থেকে নড়বড়ে গণতন্ত্র। এরপর একনায়কতন্ত্র। সেখান থেকে সামরিক শাসন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথমে শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বুখারেস্ট। যুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালেই আবার মিত্রপক্ষে যোগ দেয়। বিশ্বযুদ্ধ শেষে রোমানিয়ায় ছিল সোভিয়েত আধিপত্য। তারাই দেশটিতে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

চশেস্কু তরুণ বয়স থেকেই কমিউনিস্ট যুব আন্দোলনের একজন সদস্য ছিলেন। এ কারণে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। কারাবরণ করতে হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হন। ১৯৬৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেন। শুরুতে তিনি কিছুটা উদারপন্থার দিকে ঝুঁকেছিলেন। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই উল্টো পথে হাঁটেন।

আশির দশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের বড় চাপের মধ্যে পড়েছিল রোমানিয়া। এমন পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রসাধনের পথ ধরেন চশেস্কু। এতে চরম বিপদের মধ্যে পড়েছিল দেশের সাধারণ মানুষ। দেখা দিয়েছিল খাবারের সংকট। ছিল না পর্যাপ্ত বিদ্যুৎও।

এই ব্যারাকের সামনেই গুলি করা হয় নিকোলাই চশেস্কু ও এলেনাকে

এরই মধ্যে ক্ষমতা জাহির করার জন্য শত শত কোটি ডলার খরচ করে বিশাল এক প্রাসাদ তৈরির কাজে হাত দেন চশেস্কু। এটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবনগুলোর একটি। এতে মানুষের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। আর দেশের মানুষ কষ্টে থাকলেও চশেস্কু ও এলেনার বিলাসিতায় কিন্তু কোনো কমতি ছিল না। ফলে মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছিল অসন্তোষ।

ভিন্নমতের ওপর দমন–পীড়নেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন চশেস্কু। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের অধিকার ছিল না বললেই চলে। মানুষের কণ্ঠরোধের জন্য চশেস্কুর ছিল ভয়ংকর এক গোপন পুলিশ বাহিনী। ভিন্নমতের হাজার হাজার মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার পেছনে হাত ছিল এই বাহিনীর। বলা হতো-আশির দশকে রোমানিয়ার চারজনের একজনই ছিলেন গোপন পুলিশের তথ্যদাতা।

এমন দমন–পীড়নের পরিণতি গড়ায় ১৯৮৯ সালের অভ্যুত্থানে। বছর কয়েক আগে বিবিসিকে সে সময়ের কথা বলছিলেন ত্রাইনা রাবাগিয়া। তখন শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ত্রাইনা বলেন, ‘সে সময় অভাব চরমে পৌঁছেছিল। আশির দশকের শুরু থেকে কথা বলতে গেলে ভয় পেতে হতো। আমরা জানতাম, মানুষ একদিন না একদিন জেগে উঠবেই। ছিল শুধু এর জন্য অপেক্ষা।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, হিস্টোরি চ্যানেল, এএফপি, সিএটিও