
যুক্তরাজ্যের রাজধানী হোয়াইট হল এলাকায় গত মাসে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা একত্র হয়েছিলেন। সেখানে আলোচনা হয়েছিল, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সম্ভাব্য একটি যুদ্ধ সামলাতে যুক্তরাজ্য ও দেশটির মিত্ররা কতটা প্রস্তুত, তা নিয়ে। ওই বিশেষজ্ঞদের রায় ছিল হতাশাজনক—ইউরোপীয়দের প্রস্তুতি নেই।
বিশেষজ্ঞদের ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছিল লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট (আরইউএসআই)। উপস্থিত ছিলেন সামরিক বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্য, সরকার ও ন্যাটোর কর্মকর্তা এবং গবেষক ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ইউরোপের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া।
সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা একটাই সমাধান তুলে ধরেন। তা হলো যুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপের জন্য জয় নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ইউরোপের প্রতিরক্ষায় আরও বিনিয়োগ করা জরুরি। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, পরিস্থিতি সামলাতে মানসিকতায় বড় পরিবর্তন প্রয়োজন। দেশের মানুষদের জানাতে হবে, ইউরোপের জন্য যুদ্ধের হুমকি এড়িয়ে যাওয়া সময়টা শেষ হয়ে গেছে।
রাশিয়া এরই মধ্যে পশ্চিমের বিরুদ্ধে একটি ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ শুরু করেছে বলে একমত হন বিশেষজ্ঞরা। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা তুলে ধরেন ন্যাটোর আকাশসীমায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের অনুপ্রবেশ, বাল্টিক অঞ্চলে জিপিএস জ্যামিং, অপপ্রচার এবং বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় নাশকতার মতো বিষয়গুলো। যদিও এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা নাকচ করেছে মস্কো।
কিংস কলেজ লন্ডনের রুশ রাজনীতিবিষয়ক অধ্যাপক স্যাম গ্রিন বলেন, এসব হামলা ইউরোপের বহু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। মানুষ ভীত-বিশেষ করে যখন বাস্তবতাগুলো সামনে আসছে। বিমানবন্দরের বাইরে ড্রোন দেখা যাচ্ছে। আর ক্রমেই একটা অনুভূতি তৈরি হচ্ছে—এর মধ্যে কোনো একটি ড্রোন ব্যবহার করে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে হামলা চালানোটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বাল্টিক অঞ্চল নিয়ে শঙ্কা
ইউরোপে ন্যাটোর কোনো সদস্যদেশের ওপর মস্কো এখনো সরাসরি হামলা চালায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর একটা কারণ হলো রাশিয়া জানে বর্তমান সক্ষমতা নিয়ে তারা ন্যাটোকে পরাজিত করতে পারবে না। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বদলাতে পারে। ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে বলেছেন, পাঁচ বছরের মধ্যেই রাশিয়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে প্রস্তুত হতে পারে।
ডিসেম্বরের শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, ইউরোপ যুদ্ধ চাইলে এখনই প্রস্তুত তিনি। ইউরোপের বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে একটি ধারণা হলো, তাদের বিরুদ্ধে হামলা তিন বছরের মধ্যেই আসতে পারে। হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের গবেষকেরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ২০২৭ বা ২০২৮ সালে ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে পারে রাশিয়া।
বাল্টিক অঞ্চলে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় জরুরি পরিকল্পনা তৈরি করেছে ন্যাটো। তবে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা হলো, এই পরিকল্পনাগুলো টেকসই নয়। আরইউএসআইয়ের গবেষক জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, ‘একটি পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সরকারগুলো তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
গত মাসের সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ফোর্সেস কমান্ডের সাবেক প্রধান জেনারেল রিচার্ড ব্যারন্স বলেন, যুক্তরাজ্যকে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প ও অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে দ্রুত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। বর্তমান গতিতে চললে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে দেশটির প্রায় ১০ বছর লেগে যাবে। কিন্তু হাতে আছে মাত্র তিন থেকে পাঁচ বছর।