Thank you for trying Sticky AMP!!

আপিল খারিজ, প্রত্যর্পণের ‘খুব কাছাকাছি’ অ্যাসাঞ্জ

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০১২ সাল থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসের আশ্রয়ে ছিলেন। ২০১৯ সালে জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ। তখন থেকে বেলমার্শ কারাগারে বন্দী তিনি। ছবিটি ২০১৬ সালের

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণের ‘খুব কাছাকাছি’ ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কারণ, তাঁর করা সর্বশেষ আপিল আবেদনটি আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে তাঁর বাকি জীবন কারাগারে কাটাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, একই আদালতেই আবার আপিল করা হবে।

গত বছরের এপ্রিলে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। এরপর জুন মাসে সেই আদেশে দেশটির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল সই করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আটটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অ্যাসাঞ্জ আপিল করেছিলেন। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারক জনাথন সুইফট সেই আপিল খারিজ করে দেন। আদালতের এ আদেশ ছিল তিন পৃষ্ঠার।

আদালতের আদেশের বিষয়ে অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ বলেন, আগামী সপ্তাহে তাঁর স্বামী উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য নতুন করে আবেদন করবেন। নতুন দুজন বিচারক এই শুনানি করবেন।

স্টেলা বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে আমরা বিজয়ী হব এবং জুলিয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হবে না। অ্যাসাঞ্জের বাবা জন শিপটন বলেন, বিষয়টির ওপর আরও শুনানির জন্য অ্যাসাঞ্জ যেসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে আবেদন করেছে, তা ছিল ‘স্পষ্ট, মজবুত ও ন্যায্য।’

অ্যাসাঞ্জ তাঁর আপিলে যুক্তি তুলে ধরে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের আদেশ অনুমোদন করে ভুল করেছেন। কারণ, এটি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার প্রত্যর্পণ চুক্তির লঙ্ঘন। সেই চুক্তিতে বলা আছে, ‘যে অপরাধের জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক অপরাধ হলে প্রত্যর্পণ মঞ্জুর করা হবে না।’

অ্যাসাঞ্জের মুক্তির দাবিতে লন্ডনে রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিজের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন তাঁর সমর্থকেরা। ২৪ জানুয়ারি, ২০২২

অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা বরাবরই বলে আসছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের বিচার করতে চাইছে।

অ্যাসাঞ্জের এই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার ফলে এখন যুক্তরাজ্যে তাঁর আবেদন করার মাত্র আর একটি ধাপ রয়েছে। এখন দুই বিচারকের এক প্যানেলে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ২০ পৃষ্ঠার আপিল করতে হবে।

Also Read: ১৭৫ বছরের জেল নাকি মুক্ত জীবন, কী আছে অ্যাসাঞ্জের ভাগ্যে

Also Read: অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ বন্ধে অস্ট্রেলিয়ার ৪৮ রাজনীতিবিদের চিঠি

এদিকে অ্যাসাঞ্জ এখনো মানবাধিকারবিষয়ক ইউরোপীয় আদালতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। গত ডিসেম্বরেই অ্যাসাঞ্জের কাছ থেকে সেখানে একটি আবেদন গৃহীত হয়েছে।

অ্যাসাঞ্জের ভাই গ্যাব্রিয়েল শিপটন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, হাইকোর্টে আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁকে (অ্যাসাঞ্জ) ‘বিপজ্জনকভাবে প্রত্যর্পণের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়া’ হয়েছে। এই সময়গুলো তাঁর জন্য খুবই কঠিন।

অ্যাসাঞ্জের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সমালোচনা করেন শিপটন। তিনি বলেন, অ্যাসাঞ্জের মুক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়ান সরকারের বিবৃতি ‘যথেষ্ট’ ছিল না। শিপটন বলেন, ‘আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে ‘অনেক হয়েছে’ শুনে আসছি। এটি এখন ফাঁকা বুলি হয়ে যাচ্ছে...এর মধ্য দিয়ে তারা কী অর্জন করেছে? কিছুই পরিবর্তন হয়নি। অস্ট্রেলিয়ান সরকার অবশ্যই আরও কিছু করতে পারে।’

Also Read: অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে দেওয়া সাংবাদিকতার জন্য হুমকি

স্ত্রী স্টেলা মরিসের সঙ্গে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১১ সালে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী দলে যোগ দেন স্টেলা মরিস। অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সেবারই প্রথম দেখা হয় তাঁর

রিপোর্টার্স সানস ফ্রন্টিয়ারের (আরএসএফ) প্রচারকাজের পরিচালক রেবেকা ভিনসেন্ট বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়ে আরএসএফ গভীর উদ্বিগ্ন। এটি অযৌক্তিক যে একজন বিচারকের তিন পৃষ্ঠার আদেশের কারণে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে তাঁর বাকি জীবন কারাগারে কাটাতে হতে পারে এবং সারা বিশ্বের সাংবাদিকতার পরিবেশকে স্থায়ীভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

Also Read: অ্যাসাঞ্জের নাগরিকত্ব বাতিল করল ইকুয়েডর

উইকিলিকসের নথি প্রকাশের জন্য অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ রয়েছে। মূলত উইকিলিকসকে বিপুল পরিমাণ মার্কিন গোপন নথি সরবরাহ করেছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিং। গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ম্যানিংকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ম্যানিংয়ের সাজা কমিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এখন অ্যাসাঞ্জ দোষী সাব্যস্ত হলে সব মিলিয়ে তাঁর ১৭৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।

Also Read: অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য হুমকি