সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা রামগোপাল যাদব
সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা রামগোপাল যাদব

ব্যোমিকা–ভারতীর জাত জানলে বিজেপি তাদেরও নিশানা করত: এসপি নেতা

কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে ‘ধর্মবিদ্বেষী’ মন্তব্যের পিঠে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করলেন সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা রামগোপাল যাদব। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, কর্নেল সোফিয়ার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিজেপি উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাত জানলে ওঁদেরও নিশানা করত।

রামগোপালের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রামগোপালের ‘সংকীর্ণ মানসিকতার’ সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর পোশাককে বর্ণবাদের দৃষ্টিতে দেখা হয় না। তাঁরা ধর্ম বা বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। প্রত্যেকে জাতীয় কর্তব্য পালন করেন।

বিজেপি–শাসিত মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলে বিপাকে পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন ও বিচারপতি অনুরাধা শুক্লা। সেই অনুযায়ী রাজ্য পুলিশ এফআইআর দাখিল করেছে।

বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর ‘নরম’ হওয়ায় পুলিশকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। হাইকোর্ট নতুনভাবে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বিজয় শাহ সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হলেও সর্বোচ্চ আদালত তা নাকচ করে দিয়েছেন।

এমন এক পরিস্থিতিতে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য রামগোপাল যাদব নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাতগত পরিচয় প্রকাশ করে। বলেছেন, ওই দুজনের জাত জানলে বিজেপি তাঁদেরও ছেড়ে দিত না।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর সরকার সংঘাতের বিয়ষে ব্রিফিংয়ের জন্য তিনজনের একটি দল গঠন করেছিল। সেই দলে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ছিলেন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে যাঁরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী।

মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ এক সভায় সোফিয়ার নাম না করে বলেন, ‘যারা আমাদের মা–বোনদের সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদেরই বোনকে ব্যবহার করে হামলাকারীদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওদের বোনকে দিয়েই ওদের সর্বনাশ করেছেন।’

কর্নেল সোফিয়াকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রতিবাদ। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতিরা মন্ত্রীকে ভর্ৎসনা করে পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। বিরোধীরা দাবি করেন, মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টও বিজয় শাহর আবেদন নাকচ করে বলেন, সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের কথবার্তায় লাগাম থাকা জরুরি।

এই বিতর্কের মধ্যেই আসর গরম করেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বিজেপির এক মন্ত্রী কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে কুমন্তব্য করেছেন। কিন্তু ওই মন্ত্রী জানতেন না, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাত কী। জানলে তাঁদেরও আক্রমণের নিশানা করা হতো।

ভারতের মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি–দলীয় মন্ত্রী

এরপর রামগোপাল ওই দুজনের পরিচয় জানান। বলেন, ব্যোমিকা সিং হরিয়াণার দলিত। তিনি ‘জাটভ’ সম্প্রদায়ভুক্ত। এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী বিহারের পূর্ণিয়ার মানুষ। জাতে যাদব। অনগ্রসর। বিজেপি সোফিয়াকে আক্রমণ করেছে মুসলিম বলে। ব্যোমিকা যে দলিত, জাটভ, তা বোঝেনি। ভেবেছে তিনি রাজপুত। আর এয়ার মার্শাল ভারতীর জাতই বুঝতে পারেনি।

সমাজবাদী পার্টির রাজনীতি প্রধানত যাদের সমর্থনের ওপর ভিত্তিশীল, তার উল্লেখ করে রামগোপাল এরপর বলেন, তিনজনেই ‘পিডিএ’; অর্থাৎ, পেছনে বা অনগ্রসর শ্রেণি (ভারতী), দলিত (ব্যোমিকা) ও সংখ্যালঘু (সোফিয়া)। এরাই সমাজবাদী পার্টির রাজনৈতিক ভিত।

বিজয় শাহ যেমন বলেছেন, সোফিয়াকে তিনি অসম্মান করতে চাননি, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তেমনি রামগোপালও বলেছেন, তাঁর বক্তব্য না বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ তাঁর সমালোচনা করছেন।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির আত্মীয়দের কেউ কেউ মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে থাকেন। বিজেপির মন্ত্রীদের অনেকেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। সেই আত্মীয়দের একজন বান্টি সুলেমান প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, অবিলম্বে বিজয় শাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বান্টি সুলেমান বলেছেন, সোফিয়ার উদ্দেশে মন্ত্রী যা বলেছেন, তা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, ক্ষমার অযোগ্য। সোফিয়া শুধু এই পরিবারের নয়, তিনি সেনাবাহিনীর কন্যা। দেশের কন্যা। দেশের জন্য তাঁর জীবন নিবেদিত।

এত সমালোচনা ও দাবি সত্ত্বেও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এখনই বিজয় শাহকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে প্রস্তুত নন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, আদালত যা নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি তা পালন করেছেন। আদালত যা বলবেন, সেটাই করবেন। এর মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, আদালত না বললে বিজয় শাহকে বরখাস্ত করা হবে না।

কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বিরুদ্ধে বিজয় শাহর মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অথবা বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা—কেউই এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।