ফিরে দেখা

রাজীব গান্ধী হত্যা: পারিবারিক শাসনের অবসান ও বিজেপির উত্থান

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাডু রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে তামিল বিদ্রোহীদের আত্মঘাতী বোমায় নিহত হন। তাঁর মৃত্যু দলটির ভাগ্য উল্টে দেয় এবং ভারতীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নাটকীয়ভাবে বদলে দেয়। নেতৃত্বশূন্যতায় দুর্বল হয়ে পড়ে কংগ্রেস আর উত্থান ঘটে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির। আমাদের বিশেষ আয়োজনে ভারতের রাজনীতিতে রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

তামিল বিদ্রোহীদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পরদিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের শিরোনাম ছিল, ‘মর্মান্তিক বাঁকবদল: গান্ধী হত্যাকাণ্ডে ভারতকে গড়ে তোলা রাজনৈতিক পরিবারের নেতৃত্বের ইতি ঘটল’। রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর গান্ধী পরিবারে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না থাকার বিষয়টি এই নিবন্ধে তুলে ধরা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় বছর পর রাজীবের স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী দলের হাল ধরেন। তাঁর হাত ধরে কংগ্রেস জোটগতভাবে একাধিকবার ক্ষমতায় এলেও গান্ধী পরিবারের কেউ আর সরকারপ্রধান হননি।

রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর ভারতের ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব কমতে থাকে উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো দল কংগ্রেসের। উত্থান হয় হিন্দুত্ববাদী আদর্শের দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি)। গত এক দশকে কংগ্রেসের নেতৃত্বসংকট আরও প্রকট হয়েছে। দৃশ্যত রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের ছায়া থেকে দলটি বের হতে পারেনি। ১৯৯১ সালের ২১ মে চেন্নাইয়ে (তৎকালীন মাদ্রাজ) নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তামিল বিদ্রোহীদের বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন তিনি।

ভারতের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী

১৯৪৪ সালের ২০ আগস্ট মুম্বাইয়ে (তৎকালীন বোম্বে) জন্ম নেন রাজীব গান্ধী। নানা জওহরলাল নেহরু ১৯৪৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হলে পরিবার লক্ষ্ণৌ থেকে দিল্লি চলে আসে। স্কুলজীবন শেষে তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ এবং কিছুদিন পরে ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি যন্ত্রকৌশলে পড়াশোনা করেন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হলেও রাজনীতির প্রতি খুব একটা আগ্রহ ছিল না রাজীবের।

পড়ালেখা শেষে দেশে ফিরেই বাণিজ্যিক পাইলটের লাইসেন্স নেন রাজীব। পরে ভারতের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসে পাইলট হিসেবে চাকরি নেন। কেমব্রিজে পড়াশোনার সময় রাজীবের পরিচয় হয় ইতালি বংশোদ্ভূত সোনিয়া ম্যাইনোরের সঙ্গে। পরে ১৯৬৮ সালে তাঁরা দিল্লিতে বিয়ে করেন। দুই সন্তান রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে রাজীব মা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনে থাকতেন।

ভাই সঞ্জয় গান্ধী বেঁচে থাকতে কখনো রাজনীতির ধারেকাছে ঘেঁষেননি রাজীব। ১৯৮০ সালের ২৩ জুন উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ভাই নিহত হলে মা ইন্দিরা গান্ধী এবং নানামুখী চাপে তাঁকে মনোভাব পাল্টাতে হয়। পরের বছরের জুনে উত্তর প্রদেশের আমেথি থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে লোকসভায় আসেন। একই সময়ে তিনি কংগ্রেসের যুব সংগঠন ইন্ডিয়ান যুব কংগ্রেসের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন।

পাঞ্জাবের খালিস্তানপন্থী আন্দোলন দমনে কঠোর ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে খালিস্তানপন্থী আন্দোলনকারীদের নেতা ভিন্দ্রানওয়ালেসহ তাঁর অনুসারীদের ধরতে শিখদের পবিত্র স্থান গোল্ডেন টেম্পলে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর এই সিদ্ধান্তে শিখ সম্প্রদায়ের ক্ষোভের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে ইন্দিরা গান্ধী নিহত হন। মায়ের মরদেহ রেখে ওই দিনই রাজীব গান্ধীকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে শপথ নিতে হয়েছিল। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। এখন পর্যন্ত তিনি ভারতের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী।

উদারতার সুযোগ নিয়ে যেভাবে হত্যা

মা ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর মাত্র সাত বছর পর একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছিল ছেলে রাজীব গান্ধীকে। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগার বিদ্রোহী ও সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে শ্রীলঙ্কার তামিল অধ্যুষিত জাফনা অঞ্চলে ১৯৮৭ সালে ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (আইপিকেএফ) পাঠিয়েছিল তাঁর সরকার। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে নেয়নি তামিলরা। ১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে তামিলদের আত্মঘাতী বোমায় প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁকে।

সরকারের নানা আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পদত্যাগ করেন রাজীব গান্ধী। ওই বছর অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর দল পরাজিত হয়। তিনি হন লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা। তবে ভি পি সিংয়ের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বেশি দিন স্থিতিশীল হতে পারেনি। ১৯৯১ সালে সেই সরকার ভেঙে দেওয়া হয়।

চেন্নাইয়ে সেই সমাবেশে সমর্থকদের সঙ্গে রাজীব গান্ধী। এখানেই একটু পর বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি

এরপর নির্বাচনী প্রচারে নামেন রাজীব। ভারতের ১০ম লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দিন ২১ মে নির্বাচনী প্রচারণায় চেন্নাই থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শ্রীপেরুমবুদুরে যান তিনি। রাত ১০টার দিকে রাজীব গান্ধী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এ সময় মানুষ তাঁর গলায় মালা দিতে ভিড় শুরু করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁকে হত্যার মিশনে থাকা তামিল বিদ্রোহীদের আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন। আত্মঘাতী হামলাকারী ধানু ওরফে গায়ত্রী রাজীবের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু রাজীব গান্ধী তাঁকে বলেন, সবাইকে সুযোগ দিন। রাজীব গান্ধীকে মালা পরিয়ে দেওয়ার পরে ধানু ঝুঁকে তাঁর পা স্পর্শ করার ভান করেন। এ সময় রাজীব গান্ধী তাঁকে তুলতে যান। এরই মধ্যে ধানু ডান হাতে থাকা বোমার সুইচে চাপ দেন। এতে রাজীব গান্ধীসহ ১৬ জন নিহত হন।

ভিত নড়ে যায় কংগ্রেসের

রাজীব গান্ধীকে ভারতের রাজনীতির উজ্জ্বল তারকাদের একজন মনে করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইন্ডিয়ানের এক নিবন্ধে বলা হয়, রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ড কংগ্রেসের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁর মৃত্যু দলটির ভাগ্য উল্টে দেয় এবং ভারতীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নাটকীয়ভাবে বদলে দেয়। রাজীব গান্ধীকে আজও ভারতীয় রাজনীতির সবচেয়ে ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর আকস্মিক ও অকালমৃত্যু কেবল বিশ্বকে হতবাক করেনি, বরং এটি এমন একটি যুগেরও অবসান ঘটিয়েছে, যেখানে স্বাধীনতার পর থেকে পাঁচ বছর ছাড়া ভারত নেহরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বের অধীনে ছিল।

ভারতের বেশির ভাগ মানুষ রাজীবকে দূরদর্শী নেতা হিসেবে দেখেন। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করেছিলেন, মুক্ত অর্থনীতি গড়ে তুলেছিলেন এবং নিজের দলকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন মোহন ধারিয়া। ২০১১ সালে তিনি ডেইলি ইন্ডিয়ানকে বলেছিলেন, ‘রাজীবের প্রতি মানুষ সহানুভূতিশীল ছিল। তিনি তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সমস্যা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তবে তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত কর্মচঞ্চল একজন মানুষ।’ রাজীব ভারতের আধুনিকায়নে কাজ করেছেন বলে মনে করেন মোহন ধারিয়া। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করলেও পরে আদর্শিক মতপার্থক্যের কারণে মোহন ধারিয়া পদত্যাগ করেছিলেন।

রাজীব নিহত হলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বড় জয় পায় কংগ্রেস। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর কংগ্রেসের হাল ধরার মতো গান্ধী পরিবারে তেমন কেউ ছিলেন না। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের অধীনে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দলটি ক্ষমতায় ছিল। রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর সময় ছেলে রাহুল গান্ধীর বয়স ছিল ২১ বছর আর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বয়স ছিল ১৯ বছর। রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী ছিলেন না সোনিয়া গান্ধীও। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৮ কংগ্রেসের হাল ধরেন তিনি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অসুস্থতার কারণে ওই বছর ছেলে রাহুলের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেন সোনিয়া। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর দায়িত্ব ছেড়ে দেন রাহুল। আবার অন্তর্বর্তী দায়িত্বে ফেরেন সোনিয়া। কিন্তু গান্ধী পরিবারের কেউ এ দায়িত্ব পালনে আগ্রহী না হওয়ায় প্রায় ২০ বছর পর ভোটাভুটিতে কংগ্রেসের সভাপতি হন মল্লিকার্জুন খাড়গে। দলের নেতৃত্ব আবার চলে যায় গান্ধী পরিবারের বাইরে।

রাজীবের মৃত্যুর পর মূলত কংগ্রেস দুর্বল হতে থাকে। উত্তর প্রদেশের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ হারায় দলটি। আঞ্চলিক দলের উদ্ভব এবং বিজেপির নেতৃত্বে ডানপন্থীদের উত্থান কংগ্রেসের জন্য পরিবেশকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মতো কোনো ক্যারিশম্যাটিক নেতা না থাকায় কংগ্রেসের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে থাকে।

রাজীবের মৃত্যুতে দৃশ্যত ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে একক দলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটে। এর ফলে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেখানে আঞ্চলিক দলগুলো দুটি প্রধান রাজনৈতিক জোট ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট ঘিরে বলয় গড়তে থাকে। সেই জোটের রাজনীতি আজও বিদ্যমান। অবশ্য ইউপিএ জোট বর্তমানে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স–ইন্ডিয়া জোটে রূপ নিয়েছে।

রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসেন স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ও ছেলে রাহুল গান্ধী (বাঁয়ে)

বিজেপির উত্থান

রাজীব গান্ধীকে হত্যার পর রামমন্দির আন্দোলনের মাধ্যমে বিজেপির উত্থান ঘটে। ধর্মের রাজনীতি তখন জোরদার হতে থাকে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ধারাবাহিকতায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ক্ষমতায় আসে এবং অটল বিহারি বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০১৭ সালে ২৫ মার্চে মুম্বাইভিত্তিক ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির ৫২তম সংখ্যায় ‘ভারতের রাজনীতিতে কংগ্রেসের পতন’ শীর্ষক এক নিবন্ধে দেশটির নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ১৯৫৭ লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পায়। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে নেতৃত্ব নিয়ে বিভাজনের কারণে দলে ভাঙন ধরে। অবশ্য দলের বেশির ভাগ নেতাই ইন্দিরার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসে (আই) থেকে যান। ১৯৮০ সালে তাঁর শেষ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পায়। অবশ্য ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। দৃশ্যত এ ক্ষেত্রে তাঁর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের সহানুভূতির প্রকাশ ঘটে।

রাজীব গান্ধী যে নির্বাচন চলাকালে নিহত হন, ওই নির্বাচনে কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসেন রাজীবের স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী। ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোট নেমে আসে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশে। এরপর ২০০৪ ও ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস এর কাছাকাছি ভোট পেলেও জোটগতভাবে সরকার গঠন করে। তবে বিরোধীদের ‘বিদেশিনী’ তকমা এড়াতে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেননি সোনিয়া।

কংগ্রেস সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পায় দলটি। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় মাত্র ৪৪টি আসন পায় ভারতে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দলটি। পরের নির্বাচনে পায় ৫২টি আসন। ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। যদিও ২০২৪ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় দলটি। বিজেপি এই নির্বাচনে ২৪৪টি আসন পায়। আর কংগ্রেস পায় ৯৯টি আসন। মোট ভোটের ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ পায় দলটি। কংগ্রেসের এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টার কৃতিত্ব অবশ্য রাহুল গান্ধীকে দেওয়া হয়। তবে হিন্দুত্ববাদের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে বিজেপিকে হটিয়ে অদূর ভবিষ্যতে কংগ্রেসের ক্ষমতায় ফেরা সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড নিয়ে নয়াদিল্লিভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের এক নিবন্ধে বলা হয়েছিল, ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে এখনো ওই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। যথাযথ নেতৃত্বের অভাবে ১৯৯০–এর দশকে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ে। এই রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি প্রভাবশালী হয়ে ওঠে।

ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলির ৫২তম সংখ্যার ওই নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে কংগ্রেসের কোনো শক্তিশালী নেতা এবং কার্যকর কাঠামো নেই। দরিদ্রদের জন্য বামপন্থী কল্যাণমূলক নীতির আদর্শিক এজেন্ডা ‘ছিনতাই করে’ বিজেপি রাজনীতিতে একক প্রভাবশালী দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চতুরতার সঙ্গে এটি ব্যবহার করছে। বিজেপির উত্থান মোকাবিলার জন্য কংগ্রেসকে তার আদর্শিক এজেন্ডা পুনর্লিখন করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানো এবং সুদূর ভবিষ্যতের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে দলটি নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ডেইলি ইন্ডিয়ান, আইপিসিএস