করমর্দন নয়, নমস্কার ও প্রতি নমস্কারে সাঙ্গ হলো আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা পর্ব। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের মঞ্চে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে জোড়হাতে নমস্কার জানিয়ে করমর্দনের সম্ভাবনা এড়ালেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
গোয়ায় বহুপক্ষীয় সম্মেলনের এই আসরে জয়শঙ্কর-বিলাওয়াল সাক্ষাতের সময় দুজনের শরীরী ভাষা দেখতে আগ্রহ দানা বেঁধেছিল। জয়শঙ্করের আপাত নিরুত্তাপ সম্ভাষণ ও কাঠিন্য বুঝিয়ে দিল দুই দেশের সম্পর্কের শীতলতা এখনো অপরিবর্তিত। জয়শঙ্করকে অবশ্য হাসিমুখে প্রতি নমস্কার জানিয়েছেন বিলাওয়াল। সদস্যদেশের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেই অবশ্য জয়শঙ্কর করমর্দন করেননি। যদিও হাসিমুখে সবার সঙ্গে দু-একটি বাক্যবিনিময় করেছেন। ব্যতিক্রম শুধু বিলাওয়াল।
আনুষ্ঠানিকতার পর শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রারম্ভিক ভাষণে জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানিয়ে দেন সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের অবস্থান এখনো আগের মতোই কঠোর।
বিলাওয়ালের উপস্থিতিতে পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ না করে তিনি বলেন, ‘গোটা পৃথিবী যখন কোভিডের মোকাবিলায় ব্যস্ত, পরিণতি নিয়ে চিন্তিত, সন্ত্রাসবাদের হুমকি তখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থেকেছে। এই বিপদ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা আমাদের নিরাপত্তাজনিত স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সন্ত্রাসবাদের কোনো যুক্তি নেই। সন্ত্রাসের যত রকমফের ও রূপ আছে, প্রতিটি বন্ধ হওয়া জরুরি। সীমান্ত পারের সন্ত্রাসও।’
জয়শঙ্কর বলেন, ‘ভেদাভেদ না করে সব ধরনের সন্ত্রাসী কাজকর্ম অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। সদস্যদের মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই যে এসসিওর সনদেই বলা আছে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা অন্যতম প্রাথমিক ইতিকর্তব্য।’ তিনি বলেন, ‘তালেবানরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, সেদিকে আমাদের সবার নজর রয়েছে। আফগান জনতার মঙ্গলসাধনই আমাদের সবার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হওয়া উচিত। দেখা উচিত, মানবিক সাহায্য যাতে পৌঁছয়। সরকারে যাতে সবার অংশীদারত্ব থাকে। সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের রমরমার মোকাবিলা যাতে করা যায় এবং নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠা করা যায়।’
বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও তাঁর প্রারম্ভিক ভাষণে সন্ত্রাসবাদের বিপদ থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে সমষ্টিগত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিলাওয়াল বলেন, কূটনৈতিক জয়ের জন্য সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার করা থেকে সবার বিরত থাকা উচিত।
জয়শঙ্কর অবশ্য গত বৃহস্পতিবারই এসসিওর অন্য সদস্য চীন, রাশিয়া ও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিন গাংয়ের সঙ্গে ‘সীমান্ত শান্তি ও সুস্থিতি নিশ্চিত’ করা নিয়ে কথা বলেন।
বকেয়া দ্বিপক্ষীয় সমস্যাবলি নিয়েও দুজনের কথা হয়। চীনকে ভারত আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অন্যান্য বকেয়া সমসারও সমাধান কঠিন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক চলে সোয়া ঘণ্টা। জয়শঙ্কর রাতে টুইট করে বলেন, আলোচনা হয়েছে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে। সূত্রের খবর, আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি ও ক্রেমলিনে ড্রোন হামলার প্রসঙ্গ উঠেছিল।