
রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের সদস্য সমর্থকেরা। বাংলাদেশের এক পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসের হত্যা ও ‘হিন্দু নির্যাতনের’ অভিযোগ এনে তারা হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে।
আজ মঙ্গলবারের এ বিক্ষোভ অভিযান ঠেকাতে দিল্লি পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। গত শনিবারের পুনরাবৃত্তি হতে দেয়নি। এস রাধাকৃষ্ণন মার্গের ধারেকাছেও বিক্ষোভকারীদের আসতে দেওয়া হয়নি।
হাইকমিশন থেকে ৬০০-৭০০ মিটার দূরে তাদের গতি রোধ করা হয়। পুলিশের কাছে বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ায়।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার পাশাপাশি অনেককে আটকও করা হয়। তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বাস তৈরি রাখা হয়েছিল।
শনিবারের ছবিটা ছিল একেবারে বিপরীত। সেদিন রাত সাড়ে আটটা নাগাদ হিন্দু রাষ্ট্রসেনার ব্যানারে ২০-২৫ জন তরুণ বিনা বাধায় হাইকমিশনের সদরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায়। ১৫-২০ মিনিট ধরে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম স্লোগান দিয়ে তারা চলে যায়।
চাণক্যপুরীর মতো ‘হাই সিকিউরিটি জোনে’ কীভাবে বিক্ষোভকারীরা চলে এল, বিক্ষোভ দেখাল, উত্তেজনাপূর্ণ স্লোগান দিল অথচ পুলিশ তা টের পেল না, তা বাংলাদেশের বিস্ময় উদ্রেক করে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এত সুরক্ষিত স্থানে কী করে এক হিন্দু চরমপন্থী সংগঠনের ২৫ জন সদস্য চলে আসতে পারে, সেটাই অবাক করার মতো ঘটনা। কারণ, এভাবে এত দূর পর্যন্ত কারও আসার কথা নয়।
তৌহিদ হোসেন সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, এর অর্থ বিক্ষোভকারীদের ওখানে আসতে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টতই, দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে শনিবারের ওই বিক্ষোভের আগাম বার্তা ছিল না। স্থানীয় পুলিশও বিক্ষোভকারীদের জমায়েত রুখতে ব্যর্থ।
আজ অবশ্য তেমন ঘটেনি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এ অভিযানের কথা রোববারই জানিয়ে দিয়েছিল। দিল্লি পুলিশও প্রস্তুত ছিল। যে রাস্তার ওপর বাংলাদেশ হাইকমিশন অবস্থিত, সেই এস রাধাকৃষ্ণন মার্গের সংযুক্তি ঘটেছে একদিকে স্যান মার্টিন মার্গ ও অন্যদিকে জেসাস অ্যান্ড মেরি মার্গের সঙ্গে। দুই দিকের সড়কেই পুলিশি প্রস্তুতি ছিল পর্যাপ্ত। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে তিন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গার্ড রেল দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়। পুলিশও ছিল সশস্ত্র।
বেলা ১১টা নাগাদ প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারী স্যান মার্টিন মার্গের দিক থেকে হাইকমিশন অভিমুখে আসার পথে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাংলাদেশে হিন্দু রক্ষায় তারা নানা রকম স্লোগান দিতে থাকে।
একসময় প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগোতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীদের হাতে নানা রকম পোস্টার ছিল। তাতে ‘দীপু হত্যাকারীদের শাস্তি দাও’, ‘ইউনূস সরকার হোশ মে আও’ ইত্যাদি লেখা ছিল।