জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ

উত্তর প্রদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)–এর মিছিল ঘিরে মামলা, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক

‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ বলা বা লেখা অপরাধ কি না, তা নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসির পর এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।

আজ বুধবার শ্রীনগরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানসিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া ব্যক্তিরাই শুধু এ ক্ষেত্রে আপত্তি জানাতে পারে।

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, হিন্দু ভাই–বোনেরা আরাধ্য দেব–দেবীর ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। তাঁদের নামে জয়ধ্বনি দিতে পারেন। শিখ ভাই–বোনেরাও তাঁদের ধর্মীয় গুরুদের ছবি নিয়ে মিছিল করতে পারেন। অন্যায়ের কিছুই তো নেই।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একইভাবে মুসলিমরাও যদি ধর্মীয় মিছিলে ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখা ব্যানার বা পোস্টার রাখেন, তাতে আপত্তির কোনো কারণ থাকতে পারে না। অপরাধও নয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই তিনটি শব্দে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুধু তারাই দেখাতে পারে, যারা মানসিকভাবে দেউলিয়া কিংবা অসুস্থ। “আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি” লেখাতে কেউ কেন আপত্তি করবে, সে জন্য কাউকে কেন গ্রেপ্তার করা হবে—এটা আমি বুঝতে পারছি না।’

বিতর্কটির সূত্রপাত ৪ সেপ্টেম্বর, ‘ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ বা হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর জন্মদিনের দিন। সেদিন উত্তর প্রদেশের কানপুরে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখা পোস্টার নিয়ে মিছিল করেছিলেন। ওই লেখা–সংবলিত ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল।

সেই পোস্টার ও ব্যানার ঘিরে কোনো কোনো মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়। পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। উপপুলিশ কমিশনার দীনেশ ত্রিপাঠি গণমাধ্যমকে জানান, ধর্মীয় শোভাযাত্রায় নতুন রীতি যুক্ত করা নিয়মবিরুদ্ধ। পুলিশ তাতেই আপত্তি জানিয়েছে। যদিও কোনো কোনো স্থানে হিন্দু–মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনার কথাও শোনা গিয়েছিল।

৯ সেপ্টেম্বর কানপুর পুলিশ ধর্মীয় শোভাযাত্রায় প্রচলিত রীতির বদলে নতুন রীতি এনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ১৫ জনসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

পুলিশের মামলা নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। অপরাধও নয়। পোস্টে তিনি কানপুর পুলিশকে ট্যাগ করেন ও তাঁদের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।

ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবাসি’ লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল করার অভিযোগে কানপুরে ২৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে একই লেখা ব্যানার নিয়ে রাজ্যের লক্ষ্ণৌতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, লক্ষ্ণৌতে

এরপর শুরু হয় নতুন বিতর্ক। সেই বিতর্কের জবাবে কানপুর পুলিশ জানায়, ব্যানার লেখায় কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়নি। ওই ব্যানার ভিন্ন স্থানে টাঙানো ও অন্যদের পোস্টার নষ্ট করার জন্যই মামলা করা হয়েছে।

কানপুর পুলিশ গুজব না ছড়ানোর বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করলেও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর প্রদেশের উন্নাও, মহারাজগঞ্জ, লক্ষ্ণৌয়ে আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি লেখা পোস্টার–ব্যানার নিয়ে মিছিল বের হয়।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুর ও উত্তরাখন্ডের কাশীপুরাতেও মিছিল বের করা হয়। কোথাও কোথাও দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ছোটখাটো সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মিছিল আটকায়। দায়ের করা হয় এফআইআর। কিছু মানুষকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

অনর্থক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য সমাজবাদী পার্টির (এসপি) রাজ্য মুখপাত্র পুলিশকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি রামকে ভালোবাসি’ বা ‘আমি মুহাম্মদ (সা.)–কে ভালোবাসি’ লেখা অপরাধ নয়। এটা বাক্‌স্বাধীনতা।

বিজেপি অবশ্য হুমকি দিয়ে জানিয়েছে, আক্রান্ত হলে বা আইন ভাঙা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না।