আসামে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদ

আসামের আদালত চত্বরে সাধারণ মানুষের ভিড়
ফাইল ছবি: এএনআই

আসামে নির্বাচনী কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের আগে জেলা সংযুক্তিকরণ নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। এমন পদক্ষেপের প্রতিবাদ করেছেন রাজ্যের বিরোধীরা। কংগ্রেসের এমএলএ ও বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকীয়া বলেছেন, রাজ্যের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী প্রয়োজনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আসামের গুরুত্বপূর্ণ আরেক বিরোধী দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (এআইইউডিএফ) এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে।

গত শনিবার উত্তর আসামের বিশ্বনাথ জেলার সঙ্গে শোনিতপুর, মধ্য আসামের হোজাইয়ের সঙ্গে নগাঁও এবং নিম্ন বা পশ্চিম আসামের তামুলপুরের সঙ্গে বাকশা ও বাজালি জেলার সঙ্গে বরপেটা জেলা সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। জেলাগুলোর প্রশাসনিক চরিত্রও পাল্টে দেওয়া হয়।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রাজ্যের জেলাগুলোর প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। সেই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার এক দিন আগে, ৩১ ডিসেম্বর জেলা সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব পাস করে আসাম মন্ত্রিসভা।

এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য আগামী দিনে জেলার প্রশাসনিক চরিত্র এবং জনসংখ্যার হার মাথায় রেখে নির্বাচনী কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস করা। জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব পাল্টে ফেলার নির্দিষ্ট কারণ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা দেননি। হোজাই, নগাঁও এবং বরপেটায় মুসলমান জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের ওপরে। একই সঙ্গে বেশ কিছু গ্রাম এবং মফস্বল শহরের প্রশাসনিক কাঠামোরও পরিবর্তন করা হয়েছে।

কেন এই পরিবর্তন করা হয়েছে সে সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে সরকার কিংবা পর্যবেক্ষকেরা এখনো কিছু বলেনি। তবে দেবব্রত শইকীয়া মনে করেন, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই আসন পুনর্বিন্যাসের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মধ্য আসামের হোজাই বা দক্ষিণ আসামের বদরপুরের মতো মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দু ভোট ব্যাংককে আরও শক্তিশালী করে (বিধানসভা এবং লোকসভায়) মুসলমান প্রতিনিধিত্ব কমাতেই এই সিদ্ধান্ত।’

২০২১ সালে আসাম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ৭৫টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেসের জোট পেয়েছিল ৫০টি। কিন্তু দুই জোটের মধ্যে ভোটের ফারাক ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত শনিবার জেলা সংযুক্তিকরণের ঘোষণা দেন

বিজেপি সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন মুসলিমপ্রধান দল এআইইউডিএফের এমএলএ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠদের অগ্রাধিকার দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। স্বাভাবিকভাবেই, তা করতে যেখানে মুসলমান প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেখানকার আসন হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে ওই সব আসনে সব দল সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই এখন থেকে প্রার্থী করে। কারণ, ভবিষ্যতে ওই আসনে তাদের জেতার সম্ভাবনাই বাড়বে। এই জেলা সংযুক্তির মাধ্যমে আসামের কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বিশেষ উপকৃত হবে না, কিন্তু মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে একটা রাজনৈতিক বার্তা যাবে। সেই বার্তা হলো, তাদের অবস্থা আসামে কোথায় পৌঁছেছে সেটা দেখিয়ে দেওয়া।’

‘অসম জাতীয় পরিষদ’ নামে একটি নতুন দলের সভাপতি লুরিন জ্যোতি গগৈও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আসামকে নয়, শুধু বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে সুরক্ষা দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা আরও জানান, অতীতে পশ্চিম ভারতের গুজরাটকে দেশের ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির গবেষণাগার’ বলে চিহ্নিত করা হতো। বর্তমানে সেই সাম্প্রদায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশ ও দক্ষিণের কর্ণাটকে। আর সম্প্রতি ২০২১ সালের নির্বাচনের পরে, মুসলমান সমাজের ওপরে সেই পরীক্ষা চালু করা হয়েছে পূর্ব ভারতের আসামে। প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার এবং আসন পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।