ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদি কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। ১৫ আগস্ট, নয়াদিল্লি
ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদি কাশ্মীরকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। ১৫ আগস্ট, নয়াদিল্লি

পেহেলগামকাণ্ডের বাহানায় তাহলে মোদি সরকার জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিচ্ছে না

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হানা কি তাহলে জম্মু–কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা প্রাপ্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চলেছে? জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ নিজেই এ প্রশ্ন তুলেছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এ প্রশ্ন তুলে তিনি জানতে চেয়েছেন, জম্মু–কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে কি না, তা পাকিস্তান বা পেহেলগামের জঙ্গিরা কি ঠিক করে দেবে?

রাজ্যের মর্যাদার কোনো ঘোষণা গতকাল শুক্রবার লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি না করায় মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সারা দিন ধরে ভেবেছিলাম, লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শোনা যাবে। অথচ তা হলো না। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছেন, ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে পেহেলগামকাণ্ড বিবেচনা করা উচিত। এর অর্থ কি রাজ্যের হৃত মর্যাদা ফেরানোর সিদ্ধান্ত পাকিস্তান বা পেহেলগামের জঙ্গিরা নেবে?

ওমর বলেন, জম্মু–কাশ্মীরে যে দ্বৈত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান, তাতে সাফল্য নয়, ব্যর্থতারই প্রতিফলন ঘটে চলেছে।

সুপ্রিম কোর্টে জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে করা মামলার শুনানি ছিল গত বৃহস্পতিবার। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রণের ডিভিশন বেঞ্চ পেহেলগাম পরিস্থিতি বিবেচনায় থাকা দরকারসংক্রান্ত মন্তব্য করেন। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে বক্তব্য জানানোর জন্য আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কাশ্মীরের বক্সি স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এই খেদোক্তি করে বলেন, এত দিনের অনুরোধ–উপরোধে কোনো কাজ হয়নি। রাজ্যের মর্যাদা ফেরত আসেনি। এবার ওই দাবিতে রাজ্যের মানুষের সই সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে।

প্রধান বিচারপতির মন্তব্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ও ‘অন্যায্য’ জানিয়ে ওমর তাঁর ভাষণে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি আট সপ্তাহ পর। এই দুই মাস আমি ও আমরা বসে থাকব না। এই সময়ের মধ্যে জম্মু–কাশ্মীরের ২০ জেলার ৯০ বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটি ঘরে আমরা যাব। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাওয়ার দাবিতে জনগণের সই সংগ্রহ করব।’

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। ১৫ আগস্ট, শ্রীনগর

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সইসংবলিত দাবি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। মানুষ যদি সই করতে না চান, তাহলে বুঝব, এ অবস্থাকেই তাঁরা ভালো মনে করছেন।’

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘যখনই আমরা মনে করি, এবার রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাব, তখনই কেউ না কেউ কোনো না কোনো নাশকতা করে ফেলে। এটা কি ভালো? যে অপরাধের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগ নেই, সেই অপরাধের দরুণ রাজ্যবাসীকে কেন ভুগতে হবে?’

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভাষণে ওমর বলেন, ‘আমাদের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বারবার বলে আসছিলেন, এবার লালকেল্লার ভাষণ থেকে রাজ্যের ঘোষণা দেওয়া হবে। এ কথাও তাঁরা বলছিলেন, কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে। ঘোষণা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা আমরা করে গেছি। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ভাষণের প্রতিটি মুহূর্ত সজাগ থেকেছি। ভেবেছি, ঘোষণা এই হলো বলে। অথচ তা হলো না।’

জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার হয়েছিল ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। সেদিন প্রত্যাহৃত হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। রাজ্যও দ্বিখণ্ডিত হয়। জম্মু–কাশ্মীর ও লাদাখকে করা হয় দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু–কাশ্মীরের বিধানসভা জিইয়ে রাখা হয়। সেই থেকে পর্যায়ক্রমে জম্মু–কাশ্মীরে পঞ্চায়েতের ভোট হয়েছে। লোকসভার ভোট হয়েছে। বিধানসভার ভোটও হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে জানিয়েছেন, রাজ্যের মর্যাদা ফেরত দেওয়া হবে। লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি ৩৭০ অনুচ্ছেদ–সম্পর্কিত মামলার শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্টও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন রাজ্যের মর্যাদা কবে ফেরত দেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির পেহেলগাম মন্তব্য শুনে এখন মনে করা হচ্ছে, ওই কারণ দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি পালন আরও পেছিয়ে দেবে। সেই শঙ্কা থেকেই ওমর আবদুল্লাহ সই সংগ্রহ অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ওমর দ্বৈত শাসনব্যবস্থার ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, সেটাকে সমর্থন করেছেন চণ্ডীগড় থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য মনীশ তিওয়ারি। এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘ওমরের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল। আমি এমন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধি যেখানে দিল্লি, পুদুচেরি বা জম্মু–কাশ্মীরের মতো বিধানসভাও নেই। আছে এক পৌরসভা।

মনীশ তিওয়ারি বলেন, এই দ্বৈতশাসনের কাঠামো ও ব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি, যা সাফল্য নয়, ব্যর্থতারই জন্ম দেবে। এ ব্যবস্থা কখনো সুপ্রশাসন দিতে পারে না।