আদালতের বিবেচনার ওপর নির্ভর করছেন উদ্ধব ঠাকরে

উদ্ধব ঠাকরে
ফাইল ছবি: এএফপি

দ্বিধাবিভক্ত শিবসেনা মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রবাহকে কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে, শুরু হয়েছে সেই জল্পনা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দলের নাম ও প্রতীক বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর হাতে চলে যাওয়ার পর বালাসাহেবের পুত্র উদ্ধব ঠাকরেকে রাজ্য রাজনীতির ‘চাণক্য’ এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার ‘নতুন করে সবকিছু গড়ে তোলার’ পরামর্শ দিয়েছেন। তা অগ্রাহ্য না করে শিবসেনার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আপাতত সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনার ওপর নির্ভর করছেন। যদিও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, প্রমাণিত হয়ে গেছে বালাসাহেবের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী তাঁরাই। কিন্তু তাই বলে তাঁরা লোভী হবেন না। শিবসেনার সম্পত্তি দখলের বাসনা তাঁদের নেই।

দলের নাম ও প্রতীকের অধিকারী হলেও এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে শিবসেনার সবকিছু সহজেই শিন্ডে গোষ্ঠীর কাছে চলে আসবে। শিবসেনার সম্পত্তি দখলের অনীহার কথা জানানোর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত সবকিছু করায়ত্ত করার পক্ষপাতী নন। বরং তিনি এক পা এক পা করে এগোতে চান। সেই কারণে তাঁর প্রথম লক্ষ্য বিধানসভা ভবনে শিবসেনার অফিসের দখল নেওয়া। তা পেতে তাঁরা পরিষদীয় বিধি অনুযায়ী দাবি জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে যাওয়ার পর উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর এ মুহূর্তের ভরসা সুপ্রিম কোর্ট। পরিষদীয় দলে ভাঙন ঠেকাতে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের সদস্যপদ বাতিলের অধিকার নিয়ে যে মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছিল, মঙ্গলবার তার শুনানি নতুন করে শুরু হয়েছে। উদ্ধব গোষ্ঠীর দাবি, মামলাটি বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক। শিন্ডে গোষ্ঠী তাতে আপত্তি জানিয়েছে। এই দাবি ও পাল্টা দাবি এই কারণে যে ২০১৬ সালে অরুণাচল প্রদেশ বিধানসভার স্পিকার নবম রেবিয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, যে স্পিকারের বিরুদ্ধে অপসারণের নোটিশ বিবেচনার অপেক্ষায়, বিধায়কদের সদস্যপদ খারিজ করার অধিকার তাঁর নেই। উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী চান, ওই রায় পুনর্বিবেচনা করতে বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চের (অন্তত সাত সদস্যের) কাছে পাঠানো হোক। শিন্ডে গোষ্ঠী তাতে আপত্তি জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি শুরু হওয়ায় মূল বিতর্কটি আবার আদালতের আঙিনায় চলে গেছে। নবম রেবিয়া মামলার রায় বহাল থাকলে শিন্ডে গোষ্ঠীর আরও বড় জয় হবে। না হলে শিবসনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে শুরু হবে নতুন অনিশ্চয়তা।

মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে মুম্বাই পৌরসভার, যা বৃহন্মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (বিএমসি) নামে পরিচিত। মুম্বাইকে বলা হয় ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী। বিএমসিও দেশের সবচেয়ে ধনী পৌরসভা। সংগত কারণেই ওই পৌরসভা দখলে প্রতিটি দলই বিশেষ আগ্রহী। এখানেই সবাইকে টেক্কা দিয়ে এসেছে শিবসেনা। দলে ভাঙন চূড়ান্ত হওয়ার পর দুই শিবিরেরই নজরের চলে এসেছে বিএমসি দখলের বিষয়টি। উদ্ধবকে শারদ পাওয়ার সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, দলত্যাগী বিধায়কদের দিকে না তাকিয়ে দলের আঞ্চলিক শাখা সংগঠনগুলোতে বালাসাহেবের প্রভাব বিস্তারে মনোযোগী হতে। তাঁর পরামর্শ, শাখা সংগঠনগুলো দখলে রেখে সাধারণ কর্মীদের উজ্জীবিত করে নতুনভাবে দল গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। সাধারণ কর্মীদের মধ্যে বালাসাহেব ঠাকরের প্রভাব ও আকর্ষণকে কাজে লাগানো দরকার।

মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে ঠিক সেই ভাবনার কথাই শুনিয়েছেন। শিবসেনার সম্পদ দখলের কোনো প্রবৃত্তি তাঁদের নেই জানিয়ে মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, দলের নাম ও প্রতীক হাতে এসেছে। প্রমাণিত হয়েছে বালাসাহেবের আদর্শের উত্তরাধিকারী তাঁরাই। সেই আদর্শ সামনে রেখেই হিন্দুত্ববাদী হিসেবে তাঁরা বালাসাহেবের স্বপ্ন সার্থক করবেন। শিন্ডে বারবার বলেছেন, বালাসাহেবের আদর্শকে তাঁর পুত্র উদ্ধব বিসর্জন দিয়েছেন কংগ্রেস ও এনসিপির হাত ধরে।

বিজেপি জোটের প্রথম সর্বভারতীয় শরিক ছিল শিবসেনাই। ঠাকরের আমলে মহারাষ্ট্রে শিবসেনাই ছিল বড় শরিক। তাঁর মৃত্যুর পর বিজেপি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিসর দখল করে শিবসেনাকে ছোট শরিকে পরিণত করে। শিবসেনায় ভাঙন ধরিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপিই এখন সর্বার্থে প্রধান শরিক। তাঁর ইচ্ছাই প্রথম ও শেষ। বিজেপির সেই আধিপত্যবাদে ধাক্কা দিয়ে দল বাঁচাতে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। শিবসেনায় ভাঙন ধরিয়ে সারা রাজ্যে গোটা দলটাকেই বিজেপি নিমিত্তমাত্র করে তুলতে চায়। তাদের রুখতে ৬২ বছরের উদ্ধব ও তাঁর ৩২ বছর বয়সী বিধায়ক পুত্র আদিত্যকে এখন নতুনভাবে দল গড়ার কাজে হাত দিতে হবে। উদ্ধবের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এটাই।