জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাহমুদ মাদানী
জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাহমুদ মাদানী

জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাদানীর আসাম সফর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কটূক্তি, জেলে ভরার হুমকি

ভারতে মুসলমান সমাজের সবচেয়ে বড় সামাজিক ও প্রভাবশালী সংগঠন জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাহমুদ মাদানীকে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। মাদানী মঙ্গলবার আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় গিয়েছিলেন। সেখানে বাঙালি মুসলমানদের ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যান তিনি। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে হুমকি দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মাদানী কে? তিনি কি ঈশ্বর? মাদানীর এই সব কাজকর্ম কংগ্রেস আমলে চলতে পারে, কিন্তু বিজেপির আমলে চলবে না। তিনি যদি সীমা অতিক্রম করেন, তাহলে আমি তাঁকে জেলে ভরব। আমি মুখ্যমন্ত্রী, মাদানী নন। আমি মাদানীকে ভয় পাই না।’

বিশ্বশর্মা আরও বলেন, তিনি মাদানীকে ওই অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন এটা দেখার জন্য যে জমি দখল করলে তার কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। উচ্ছেদ অভিযান দেখার পরে মাদানী ও তাঁর দলবল বুঝবেন বিজেপি প্রয়োজনে কত দূর যেতে পারে।

উল্লেখ্য, আসামের সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযানে কয়েক হাজার বাঙালি মুসলমানকে তাঁদের বাসস্থান থেকে সরানো হয়েছে।

এর আগে গোয়ালপাড়ায় সাংবাদিকদের বৈঠকে মাহমুদ মাদানী বলেন, রাজ্যের মানুষকে উচ্ছেদ করতে গেলে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে আইনি নির্দেশিকা আছে, সেই মোতাবেক উচ্ছেদ করা উচিত।

সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে মাদানী বলেন, ‘রাজ্যে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এ ধরনের ঘটনা অন্য রাজ্যেও ঘটে, কিন্তু যেভাবে এখানে এই উচ্ছেদ চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

উচ্ছেদ করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশিকা, তা মানা প্রয়োজন মন্তব্য করে মাদানী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশিকা একেবারেই মানা হয়নি। অবশ্যই এর নিন্দা করা প্রয়োজন।’

মাদানী আরও অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে বিজেপি উচ্ছেদের বিষয়টিকে সামনে এনে মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার সব চেষ্টা আসামে চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে কখনো ‘মিয়া মুসলমান’ কখনো ‘অপরিচিত নাগরিক’ কখনোবা ‘সন্দেহজনক নাগরিক’ তকমা দিয়ে একধরনের বিভ্রান্তির বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

গোয়ালপাড়া ও সংলগ্ন অঞ্চলে তিনি উচ্ছেদ হওয়া মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় মাদানী বলেন, যেকোনো নাগরিক বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত হলে তাঁকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি সন্দেহজনক নাগরিক হিসেবেও চিহ্নিত হন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তা–ও আইনে বলা হয়েছে। আমরা এসবের বিরোধিতা করি না। কিন্তু এখানে যা হচ্ছে, তা কোনো অবস্থাতেই আইন মেনে হচ্ছে না।
জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের প্রধান অভিযোগ করেন, কাউকে উচ্ছেদ করা হলে তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। মাদানী বলেন, যদি আসামের মূল নিবাসী মানুষ বিপদের সম্মুখীন হন এবং তাঁদের সংখ্যা কমে যায়, তবে তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি বলেন, আসামের ধর্মীয় উপাসনার স্থান ‘নামঘর’ ও ‘মসজিদ’-এর কোনো অস্তিত্বগত সমস্যা হলে তা যৌথভাবে তত্ত্বাবধান করা জরুরি।

পরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী মাদানীর সফর প্রসঙ্গে বলেন, মাদানী এখন একটি মূল্যহীন বিষয়। কংগ্রেস আমলে এদের একটা মূল্য ছিল, এখন আর তা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত মাদানীকে গ্রেপ্তার করাননি আসামের মুখ্যমন্ত্রী। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো প্রতিযোগিতা নেই বলেও মন্তব্য করেন মাদানী।

তবে আবার অন্যদিকে মাহমুদ মাদানীকে আসামে প্রবেশ করতে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে আক্রমণ করেছে আসামে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হওয়া রাজনৈতিক দল আসাম জাতীয় পরিষদ। তাদের বক্তব্য, আসামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্টের লক্ষ্যে মাদানী রাজ্যে এসেছিলেন এবং তাঁকে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। বিষয়টি সম্পর্কে বিরোধীদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেছে আসাম জাতীয় পরিষদ।