দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে ভারতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি

১৫ আগস্ট ভারতের ৭৫–তম স্বাধীনতা দিবস। দিবসটি উদযাপনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মহড়া। গতকাল দেশটির পাঞ্জাবের অমৃতসর স্টেডিয়ামে।
ছবি: এএফপি

স্বাধীনতা দিবসের দিন বাড়িতে জাতীয় পতাকা না তোলাকে বিজেপি দেশদ্রোহিতার প্রমাণ হিসেবে প্রতিপন্নের চেষ্টা করছে কি না, সেই বিতর্ক উঠে গেল। উত্তরাখন্ডের বিজেপি সভাপতি মহেন্দ্র ভাটের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য ঘিরে এই বিতর্কের জন্ম। যদিও শুক্রবার তিনি বলেছেন, দলের কোন কোন সদস্য ও কর্মীর বাড়িতে পতাকা তোলা হচ্ছে না, তিনি শুধু সেই তালিকা প্রস্তুত করার কথা বলেছিলেন। সব মানুষের নয়। এ বছর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্‌যাপনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন। এ উপলক্ষে যে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, সরকারিভাবে তার নাম ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’।

প্রধানমন্ত্রী চান, ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট দেশের প্রতিটি গৃহে যেন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। জাতীয়তাবাদী চেতনার স্বার্থে দেশপ্রেমের বিকাশে এই ঘোষণা। সেই অনুযায়ী, সরকারি অর্থে দেশের প্রচারমাধ্যমে বিপুল বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় পতাকা যাতে সবাই সর্বত্র ওড়াতে পারে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন বদলানো হয়েছে। সুতি বা খাদি ছাড়াও কৃত্রিম তন্তু দিয়ে যাতে জাতীয় পতাকা তৈরি করা যায়, সে জন্যও বদলানো হয়েছে আইন। প্রধানমন্ত্রী চান, শহর–গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে তিন দিন ধরে পতাকা উড়ুক। সরকারি বিজ্ঞাপনের দাবি, অন্তত ছয় কোটি গৃহে পতাকা তোলা হবে।

উত্তরাখন্ডের বিজেপি সভাপতি এই কর্মসূচিকেই দেশপ্রেমের নজির হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। দুদিন আগে এ–সংক্রান্ত তাঁর এক নির্দেশের ভিডিও ভাইরাল হয়। তাতে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, কোন বাড়িতে পতাকা উড়ছে না, সেই তালিকা তৈরি করতে হবে। ওই সব বাড়ির বাসিন্দারা দেশপ্রেমিক নন বলে ধরে নিতে হবে। তাঁদের বিশ্বাস করা যাবে না। এই নির্দেশের সমালোচনা শুরু হলে শুক্রবার তিনি জানান, নির্দেশটা দেওয়া হয়েছে শুধু বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বাড়ির জন্য। কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা এর অপব্যাখ্যা করছে। তিনি বলেন, ‘আমি দলীয় কর্মীদের পতাকা তুলতে বলেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সবার মানা উচিত। আমি মনে করি, সব দেশপ্রেমিকই পতাকা তুলবেন। এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃত ভারতীয়দের এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

সমস্যা অবশ্য হয়েই চলেছে। রাজ্যে রাজ্যে জবরদস্তি জাতীয় পতাকা কিনতে অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিজেপি শাসিত হরিয়ানা রাজ্যের এক রেশন দোকানের মালিক হুকুম দেন, রেশন নিতে গেলে দোকান থেকে ২০ টাকা দিয়ে জাতীয় পতাকা কিনতে হবে। না হলে রেশন মিলবে না। এই ভিডিও ভাইরাল হলে বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীসহ অনেকেই সমালোচনা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ওই রেশন দোকানের ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

কংগ্রেস এই জবরদস্তির নিন্দা করেছে। উত্তরাখন্ডের কংগ্রেস সভাপতি করণ মেহরা বলেন, বিজেপি সভাপতি অবিশ্বাস করার কথা বলেছেন। অবিশ্বাস কাউকে করতে গেলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘকে করতে হয়। ৫২ বছর তারা জাতীয় পতাকা মানেনি। ৫২ বছর আরএসএসের সদর দপ্তরে জাতীয় পতাকা তোলা হয়নি। কংগ্রেসের বক্তব্য, সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা ঢাকতেই এই নির্দেশ। উৎসবের আবহে মানুষকে ব্যর্থতা ভোলানোর চেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ধরনের নির্দেশ আগেও দিয়েছিলেন। কোভিডের সময় থালা-বাসন বাজাতে বলেছিলেন। কোভিড যোদ্ধাদের জন্য প্রদীপ জ্বালাতে বলেছিলেন। তাঁর সেই ডাকে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। এবারেও বাড়িতে–গাড়িতে জাতীয় পতাকা তোলার ধুম লেগেছে।