বিজেপির শরিক টিডিপির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু
বিজেপির শরিক টিডিপির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু

বিহারে ইসির বিতর্কিত উদ্যোগের বিরোধিতায় এবার বিজেপির শরিক টিডিপি

বিহারে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে উদ্যোগ নিয়েছে, এবার তার বিরোধিতা শুরু করল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান শরিক তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। নির্বাচন কমিশনকে তারা জানিয়েছে, বিশেষ ভোটার তালিকা পরিমার্জনের সময় নাগরিকত্বের যাচাই যেন করা না হয়। নতুন ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তি ও ভুয়া ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে এতকাল যা করা হয়েছে, তেমনই যেন করা হয়। তালিকা সংশোধনের নামে বিহারে যেভাবে নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে, ইসি যেন তা না করে।

কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে টিডিপির একটি প্রতিনিধিদল গত মঙ্গলবার এই দাবি জানিয়েছে। টিডিপির নেতারা বলেছেন, ভোটের মাত্র ছয় মাস আগে এমন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করাও উচিত নয়। ইসির এই মনোভাব টিডিপি পছন্দ করে না।

টিডিপির প্রতিনিধিরা ইসিকে আরও বলেছেন, দেশের নানা রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন রাজ্যে যান কাজের সুযোগ পেতে। এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া ঠিক নয়। কারও নাম যাতে বাদ না যায়, ইসিকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের যে কাজে ইসি হাত দিয়েছে, সেটার পোশাকি নাম ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (এসআইআর)। এভাবে তালিকা সংশোধন প্রতিটি রাজ্যেই করা হবে। এই উদ্যোগের বিরোধিতায় নেমেছে দেশের প্রায় সব বিরোধী দল। কমিশনের এই উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও রুজু করা হয়েছে। মামলার একটি শুনানিও হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট কিছু কিছু সুপারিশ করেছেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, ইসির এই উদ্যোগ অন্যভাবে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির নামান্তর মাত্র। কারণ, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে ইসি যেসব শর্ত রেখেছে, সেগুলো নাগরিকত্ব প্রমাণের সমতুল্য। এই ক্ষেত্রে কমিশন আধার কার্ড, ইসির দেওয়া ভোটার পরিচয়পত্র কিংবা রেশন কার্ডকেও বৈধ সনদ হিসেবে মানতে রাজি নয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রথম দিনের শুনানিতেই এই তিন পরিচয়পত্রকে মেনে নেওয়ার পরামর্শ ইসিকে দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের সমর্থনকারী দল এবং মন্ত্রিসভার শরিক টিডিপির আপত্তি জানানো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী দলের নেতাদের ধারণা, অন্য শরিকেরাও ধীরে ধীরে এই নিয়মের বিরোধিতায় নামবেন। এমনকি বিজেপির মধ্যেও এই উদ্যোগ নিয়ে বহু প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ইসির কড়াকড়ি বহাল থাকলে বহু ন্যায্য নাগরিক ভোটদানের অধিকার হারাবেন।

ইসির কাছে টিডিপি নেতারা এই প্রশ্নও তুলেছেন, ২০২৪ সালে কমিশনের তৈরি যে তালিকা মেনে বিহারে ভোট হয়ে গেল, তাকে ভিত্তিবর্ষ না ধরে ইসি কেন ২০০৩ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে গণ্য করছে?

টিডিপির দাবি, বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে শেষ যে তালিকার ভিত্তিতে রাজ্যে ভোট হয়েছে এবং সেই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের যেন আলাদা করে ভোটার হিসেবে প্রমাণপত্র দাখিল করতে না হয়।

ইসির নতুন ফরমান অনুযায়ী বৈধতা প্রমাণের দায়িত্ব ভোটারের। তাঁকেই প্রমাণ দিতে হবে, তিনি বৈধ ভোটার। টিডিপি এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, তালিকাভুক্ত কোনো ভোটারের নাম কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, কোন যুক্তিতে, তা ইসিরই জানানো উচিত। সেই দায় কমিশনের; ভোটারের নয়।

টিডিপি বলেছে, তালিকা নিয়ে আপত্তি থাকলে, অসংগতি ধরা পড়লে তা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজির মতো তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে নিশ্চিত করা দরকার। ইসির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর টিডিপি প্রতিনিধিদল তাঁদের বক্তব্য লিখিত আকারে কমিশনকে জমা দিয়েছেন।

পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটদানের অধিকার নিয়ে টিডিপি কিছু পরামর্শও ইসিকে দিয়েছে। নেতারা বলেছেন, অন্ধ্র প্রদেশের অনেক শ্রমিক গ্রাম ছেড়ে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাজের সন্ধানে উপকূলবর্তী এলাকায় চলে যান। যেখানে ওই শ্রমিকেরা কাজ করেন, সেখানকার ঠিকানা সাময়িক। সেই কারণে তাঁদের নাম যাতে আদি বাসস্থান এলাকার ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়, তা নিশ্চিত করা দরকার। সে জন্য ইসির উচিত বিশেষ আধিকারিক নিযুক্ত করা। বিশেষভাবে উদ্যোগী হওয়া, যাতে গরিব মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত না হন।