
ভারতে গত মাসে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজের দুই পাইলটের মধ্যে ককপিটে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ডিংয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে ক্যাপ্টেন নিজেই উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহের সুইচ বন্ধ করে দেন। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২৬০ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে পাওয়া প্রমাণাদি মূল্যায়ন করেছেন।
এ মূল্যায়নের বিষয়ে জানা আছে এমন লোকজনের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় সহপাইলট (ফার্স্ট অফিসার) বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারটি ওড়াচ্ছিলেন। তিনি তাঁর থেকে বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করেন, কেন তিনি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সেকেন্ড পর জ্বালানির সুইচগুলো ‘কাট-অফ’ অবস্থায় দিয়েছেন।
সেদিনের দুই পাইলট হলেন, ক্যাপ্টেন সুমিত সভারওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডার। তাঁদের যথাক্রমে ১৫ হাজার ৬৩৮ ঘণ্টা এবং ৩ হাজার ৪০৩ ঘণ্টা বিমান উড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ওই প্রতিবেদন বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স ভারতের এএআইবি, সিভিল অ্যাভিয়েশন মহাপরিদপ্তর, সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রণালয়, এয়ার ইন্ডিয়া এবং দুইটি ভারতীয় পাইলট ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া মেলেনি। আর বোয়িং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সেদিনের দুই পাইলট হলেন, ক্যাপ্টেন সুমিত সভারওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডার। তাদের যথাক্রমে ১৫ হাজার ৬৩৮ ঘণ্টা এবং ৩ হাজার ৪০৩ ঘণ্টা বিমান উড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল।
গত শনিবার ভারতের এয়ারক্র্যাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) প্রকাশিত এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, উড্ডয়নের ঠিক পরপরই ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহের সুইচগুলো ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাট-অফ’ (বন্ধ) অবস্থায় চলে যায়। তবে কীভাবে সুইচগুলো পাল্টে গেল, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
উড্ডয়নের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উড়োজাহাজের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ‘র্যাম এয়ার টারবাইন’ নামে একটি বিকল্প জ্বালানির উৎস চালু হয়ে গেছে। এটি ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এরপর ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে এক পাইলটকে অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, ‘কেন আপনি জ্বালানি বন্ধ করে দিলেন?’ জবাবে অপর পাইলট বলেন, তিনি তা করেননি।
ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লন্ডনগামী উড়োজাহাজটির গতি কমতে থাকে। ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর, সেটি গতি কমে নিচে নামতে শুরু করে।
দুই ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ আবার ‘রান’ করা বা চালু করা হয় এবং উড়োজাহাজটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন দুটি পুনরায় সচল করার চেষ্টা করে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে ক্রুদের একজনই ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেছিলেন। যতটুকু তথ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা এখানে নেই।জন ন্যান্স, উড়োজাহাজ চলাচলে নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ
উড়োজাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জন ন্যান্স রয়টার্সকে বলেন, কিন্তু ততক্ষণে সেটি খুব নিচ দিয়ে ধীরগতিতে উড়ছিল। তাই আর ইঞ্জিন সচল করতে পারেনি।
উড়োজাহাজটি কয়েকটি গাছ ও একটি চিমনির গায়ে আঘাত করে পাশের একটি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে উড়োজাহাজে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জন এবং মাটিতে থাকা আরও ১৯ জন নিহত হন।
কোন নিরাপত্তা সুপারিশ নেই
গত সোমবার একটি অভ্যন্তরীণ স্মারকে এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন বলেছেন, প্রাথমিক প্রতিবেদনে কোনো যান্ত্রিক বা রক্ষণাবেক্ষণজনিত ত্রুটি পাওয়া যায়নি এবং প্রয়োজনীয় সব রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এএআইবির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বোয়িং বা ইঞ্জিন নির্মাতা জিই-এর জন্য কোনো নিরাপত্তা সুপারিশ দেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদন প্রকাশের পর, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং বোয়িং নিজেদের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে, বোয়িং উড়োজাহাজের জ্বালানি সুইচে ব্যবহৃত লকগুলো নিরাপদ।
রয়টার্স এমন তথ্যসংবলিত একটি নথি দেখেছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে অবগত চারটি সূত্রও তা নিশ্চিত করেছে।
বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে একাধিক কারণে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দুর্ঘটনার এক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়।
জন ন্যান্স বলেন, ‘এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো এ ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে ক্রুদের একজনই ইঞ্জিনের জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেছিলেন। যতটুকু তথ্য এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্য কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা এখানে নেই।’
তবে তিনি এও বলেছেন, তদন্তকারীদের এখনো অন্য সব কটি বিষয়ও খতিয়ে দেখতে হবে, অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোকে এখনই বাতিল করে দিলে হবে না এবং এটা সময়সাপেক্ষ।
বেশির ভাগ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে একাধিক কারণে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দুর্ঘটনার এক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়।