ভারতের গুজরাটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দেশটির ইতিহাসে ঘটে যাওয়া পুরোনো সব ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি আবারও সামনে চলে এসেছে। নিচে ভারতীয় বিমানের সবচেয়ে ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনা তুলে ধরা হলো:
২০২০ সালের ৭ আগস্ট এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইট কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে ছিটকে পড়ে এবং দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে ২০জন নিহত হন, আহত হন বহু যাত্রী। খারাপ আবহাওয়া, কম দৃশ্যমানতা এবং টেবলটপ রানওয়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।
২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ৮১২ ম্যাঙ্গালুরুতে অবতরণের সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে একটি খাদে পড়ে যায়। বিমানে থাকা ১৬৬ জনের মধ্যে ১৫৮ জন নিহত হন। রানওয়েটি ‘টেবলটপ’ হওয়ায় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হয়। টেবলটপ রানওয়ে হলো এমন একটি বিমানবন্দর রানওয়ে, যা একটি পাহাড় বা উঁচু মালভূমির ওপর অবস্থিত এবং চারপাশে গভীর খাদ বা ঢাল থাকে।
২০০০ সালের ১৭ জুলাই কলকাতা থেকে দিল্লিগামী অ্যালায়েন্স এয়ারের একটি ফ্লাইট পাটনার একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ৫৫ যাত্রী ও ভূমিতে থাকা ৫ জনসহ মোট ৬০ জন নিহত হন। অবতরণের সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর হরিয়ানার চরখি-দাদরির আকাশে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইনসের ইলিউশিন আইআই-৭৬ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ভুল যোগাযোগ এবং ভাষাগত জটিলতায় কাজাখ পাইলট নির্ধারিত উচ্চতা না মেনে নিচে নেমে আসেন এবং সৌদি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে দুই বিমানে থাকা ৩৪৯ জনের সবাই নিহত হন।
১৯৯৩ সালের ২৬ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আইসি ৪৯১ আওরঙ্গবাদে উড্ডয়নের সময় রানওয়ের একেবারে শেষে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং পরে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়ে। এতে ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। পাইলটের ভুলের পাশাপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার ব্যর্থতাও দায়ী ছিল।
১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আইসি ৬০৫ বেঙ্গালুরুতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৯২ জনের মৃত্যু হয়। অবতরণের সময় পাইলটের ভুল এবং যন্ত্রের বিভ্রান্তি এই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার আধুনিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য আর প্রতিটি দুর্ঘটনা একেকটি বড় শিক্ষা।
১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর, ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট আইসি ১১৩ আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩৩ জন নিহত হন। পাইলটদের ভুল সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করাই দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে উঠে আসে।
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন কানাডা থেকে ভারতগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ আয়ারল্যান্ড উপকূলের আকাশে বিস্ফোরণে উড়ে যায়। শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পেতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে বিমানে থাকা ৩২৯ জনই প্রাণ হারান। এটি বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমানবোমা হামলা।
১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে দুবাইগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ৮৫৫ আরব সাগরে বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের মাত্র চার মিনিট পর বিমানটি উপকূল থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে সাগরে পড়ে যায়। এতে ২১৩ যাত্রী নিহত হন। তদন্তে জানা যায়, পাইলটের দিগ্ভ্রান্তি ও যন্ত্রের ত্রুটির সম্মিলিত কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
১৯৬৬ সালের ২৪ জানুয়ারি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১০১ ইউরোপের আল্পস পর্বতের মন্ট ব্ল্যাঙ্কে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৭ যাত্রী নিহত হন। যদিও পাইলটের ভুল বলে ধরা হয়, এ দুর্ঘটনা নিয়ে এখনো বহু বিতর্ক রয়েছে।