ভারতের নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এবার কাঠগড়ায় তুলল বিজেপি। এই সাংবিধানিক সংস্থার ‘অপদার্থতার প্রমাণ’ হিসেবে তারা দাখিল করল ১৯৮০ সালের ভোটার তালিকার এক অংশ, যেখানে সোনিয়া গান্ধীর নাম রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, আইনত ভারতের নাগরিক হওয়ার আগেই সোনিয়া গান্ধীর নাম দেশের ভোটার তালিকায় উঠে গিয়েছিল।
বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালব্য ‘এক্স’ হ্যান্ডলে ভোটার তালিকার ওই ছবি দিয়ে বলেন, ৪৫ বছর আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আঁতাত করে সোনিয়া ভোটার হয়েছিলেন। অথচ তখন তিনি দেশের নাগরিকই হননি।
নির্বাচন কমিশনের ‘অকর্মণ্যতা’ ও বিজেপির হয়ে ভোটার তালিকা তৈরির মাধ্যমে ‘ভোট চুরি’র যে অভিযোগ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এনেছেন, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ যা নিয়ে সরব, তা থেকে চোখ ঘোরাতে বিজেপি আজ বুধবার সোনিয়ার ভোটার হওয়ার প্রসঙ্গটি তুলে ধরে।
অমিত মালব্যের পোস্টের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেস–ইসি আঁতাতের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার করিয়ে কংগ্রেস ও অন্য বিরোধীরা বরাবর নির্বাচন জিতে এসেছে। উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলিতে রাহুল গান্ধী, পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তর প্রদেশের কনৌজে অখিলেশ যাদবের আসনে ভোটার তালিকায় নানাবিধ কারচুপির উল্লেখও করেন অনুরাগ ঠাকুর।
সোনিয়ার ভোটার হওয়ার যে ‘প্রমাণ’ অমিত মালব্য তুলে ধরেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৯৮০ সালের ভোটার তালিকায় নিউ দিল্লি লোকসভা আসনের সফদরজং রোড এলাকার ১৪৫ নম্বর পোলিং স্টেশনে ৩৮৮ নম্বর ভোটারের নাম সোনিয়া গান্ধী।
‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া ওই নথি অনুযায়ী, ৩৮৫ নম্বর ভোটারের নাম ইন্দিরা গান্ধী। বয়স ৬৪। পরের নামগুলো রাজীব গান্ধীর (৩৭), সঞ্জয় গান্ধী (৩৫), সোনিয়া গান্ধী (৩৫) এবং মানেকা গান্ধী (২৮)।
বিজেপির অভিযোগ, ১৯৬৮ সালে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিয়ে হলেও ১৯৮০ সালে সোনিয়া ভারতের নাগরিক ছিলেন না। অথচ তাঁর নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয়েছিল। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তাঁর নাম সেই তালিকায় ছিল। অথচ সোনিয়া নাগরিকত্ব লাভ করেন ১৯৮৩ সালে।
এই ‘তথ্য’ হাজির করে অমিত লিখেছেন, স্পষ্টতই এটি আইনের লঙ্ঘন। ভোটার হতে হলে নাগরিক হওয়া জরুরি। ১৯৮২ সালে বিতর্ক ও সমালোচনার পর সোনিয়ার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। পরের বছর ১৯৮৩ সালে ফের তাঁর নাম ভোটার তালিকায় তোলা হয়। সেখানেও অসংগতি ছিল বলে অমিতের দাবি।
অমিতের অভিযোগ, ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারির আগে নাগরিক হওয়া ব্যক্তিদের নামই ভোটার তালিকায় ওঠার কথা। অথচ সোনিয়া নাগরিকত্ব পান সেই বছরের এপ্রিল মাসে।
রাহুল গান্ধী ‘অকর্মণ্যতা’ ও শাসক বিজেপির হয়ে ভোট চুরির অভিযোগে ইসিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। অমিত মালব্যও অভিযোগ করেছেন একসময়ের কংগ্রেস–ইসির যোগসাজশ নিয়ে। ফলে সমালোচনার হাত থেকে ইসি রেহাই পাচ্ছে না।
বিজেপির দাবির পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। বিহারের কংগ্রেস নেতা তারিক আনোয়ার বলেন, সোনিয়া গান্ধী কোনো দিনই ভোটার তালিকায় তাঁর নাম তোলার অনুরোধ করেননি। নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন কর্তারাই উদ্যোগী হয়ে তা করেছিলেন।
তারিক আনোয়ার বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক সংস্থা। সে সময় কমিশনের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ছিল। অথচ আজ তা বিজেপির অংশ হয়ে উঠেছে। বিজেপির স্বার্থে ভোট চুরি করছে।
রাহুলের আনা অভিযোগগুলোর জবাব ইসি আজও দেয়নি। আজও তারা উদ্যোগী হয়ে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। বরং রাহুলকে হলফনামা দিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে বলছে। পাশাপাশি বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছে এটা প্রমাণ করতে যে রাহুল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসির বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করে চলেছেন।