Thank you for trying Sticky AMP!!

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা

আসামে বাঙালি মুসলমানদের থাকতে কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত

নির্বাচনের আগে প্রতিবারই উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে বাঙালি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন রাজ্যের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। গত শনিবার তিনি রাজ্যের ‘মিয়া’ মুসলমানদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেন। তিনি আসামে থাকতে হলে তাঁদের ওপর কিছু শর্ত আরোপ করেন।

আসামে বাঙালি মুসলমানদের ‘মিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছেন।

বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ারা আসামের মূল নিবাসী মানুষ কি না, তা ভিন্ন বিষয়। আমরা বলছি, তাঁরা যদি মূল নিবাসী হওয়ার চেষ্টা করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এ জন্য তাঁদের বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ ত্যাগ করতে হবে এবং নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করতে হবে। দুটির বেশি সন্তান নেওয়া যাবে না।’

আসামে হিমন্তর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০২৩ সালে দুটি পর্যায়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মধ্যবয়সী মুসলমান পুরুষদের গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, বেশ কয়েকজন একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তাঁদের স্ত্রীরা সমাজের দরিদ্র অংশ থেকে আসা নারী। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ অভিযোগ করেছিলেন।

যদিও ওই ঘটনার পর বাল্যবিবাহ রোধের অজুহাতে মুসলমান সমাজের পুরুষদের হেনস্তা করার অভিযোগ তোলে আসাম ও ভারতের বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও মানবাধিকার সংগঠন। বেশ কয়েক হাজার পুরুষকে গত বছরের গোড়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলছে। ফলে ওই ব্যক্তিদের পরিবার প্রবল আর্থিক সংকটে পড়ে বলে স্থানীয় মানুষ প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে মার্চের গোড়ার দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বাস্তবায়নের পর হিমন্ত বিশ্বশর্মার এ মন্তব্য আসামে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী অসমিয়া সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে সম্মান করার তাৎপর্য তুলে ধরেও বলেন, কিছু গোষ্ঠীর ‘সত্র’র (বৈষ্ণব মঠ) জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। এতে তিনি উদ্বিগ্ন। নির্দিষ্টভাবেই তাঁর ইঙ্গিত ছিল ‘মিয়া’ মুসলমান সমাজের প্রতি।

বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের সব সময় বলি, “মিয়াদের” আসামের মূল নিবাসী হতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের দুই-তিনটি স্ত্রী থাকতে পারে না। এটা অসমিয়া সংস্কৃতি নয়। কীভাবে কেউ “সত্র” (বৈষ্ণব মঠ) জমি দখল করে মূল নিবাসী হতে চায়?’

Also Read: বাঙালি মুসলমানদের অবমাননা: আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর মামলা

মুসলমান সমাজের কোন অংশ কয়েক শ বছর আগে এসেছিল এবং কারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর পরে এসেছেন—আসামে এটি গভীর ও বিতর্কিত রাজনৈতিক বিষয়। ভোট মেরুকরণের মাধ্যমে সুবিধা আদায় করতে নির্বাচনের আগে আসামে বরাবরই এই বিভাজনরেখা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। এবারও সেটাই করছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মিয়া মুসলমানদের উদ্দেশে হিমন্ত বলেন, তাদের মাদ্রাসাশিক্ষা এড়িয়ে চলতে হবে। মাদ্রাসাশিক্ষার পরিবর্তে তাদের চিকিৎসক বা প্রযুক্তি কৌশলী হওয়ার পরামর্শও তিনি।

প্রশ্ন হলো যেসব ছাত্র মাদ্রাসায় যায়, তারা প্রধানত চরম দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। তাদের পক্ষে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার খরচ জোগানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে শুধু আসামে নয়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অন্যান্য প্রান্তেও প্রশ্ন রয়েছে।

Also Read: বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ আসামের সংস্কৃতির জন্য হুমকি: মুখ্যমন্ত্রী

হিমন্ত বিশ্বশর্মা মেয়েদের শিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং পৈতৃক সম্পত্তিতে তাদের উত্তরাধিকারের অধিকার দেওয়ার পক্ষেও কথা বলেন।