বাঘ এমন এক প্রাণী, যাকে ক্ষমতা আর শক্তিমত্তার প্রতীক বলে বিবেচনা করা হয়। বাঘের বসবাসের পরিবেশ বৈচিত্র্যময়। ভারতের ঘন জঙ্গল থেকে শুরু করে রাশিয়ার বিস্তৃত বনাঞ্চল—বিভিন্ন পরিবেশে এই প্রাণীর বিচরণ দেখা যায়। তবে বিশ্বজুড়ে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এ প্রাণী প্রজাতিটিকে নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বাঘ এবং তাদের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় বিশেষ সংরক্ষণ প্রচেষ্টা চলছে। চলুন জানি, ২০২৫ সালে কোন কোন দেশে বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাঘ থাকা দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে বর্তমানে ৩ হাজার ১৬৭টি বাঘ রয়েছে। এসব বাঘের বেশির ভাগেরই বসবাস ২০টি রাজ্যের ৫৮টি সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে।
প্রজেক্ট টাইগার নামে প্রকল্পের আওতায় এসব অভয়ারণ্য পরিচালিত হয়। এর মধ্যে করবেট রিজার্ভে প্রায় ২৬০টি বাঘ রয়েছে, যা অন্যতম বড় আবাসস্থল। উত্তরাখন্ডের রাজাজি রিজার্ভেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাঘ আছে।
এ ছাড়া কানহা–বান্ধবগড়, সুন্দরবন, ভারতের মধ্যাঞ্চল এবং মানস জাতীয় উদ্যানসহ আরও কয়েকটি এলাকায় বাঘের বিচরণ দেখা যায়। মানস জাতীয় উদ্যান একসময় প্রায় বাঘশূন্য হয়ে পড়েছিল, তবে বর্তমানে সেখানে আবার বাঘের সংখ্যা উল্লেখজনকভাবে বেড়েছে।
রাশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘের বসবাস। সাইবেরীয় বাঘের একমাত্র আবাসভূমি রাশিয়া। সাইবেরীয় বাঘ হলো জিনগতভাবে সবচেয়ে বিরল উপপ্রজাতিগুলোর একটি।
রাশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ৭৫০টি বাঘ রয়েছে। মূলত অত্যন্ত শীতল ও দুর্গম বনাঞ্চলে এই প্রজাতির বাঘের বসবাস। রাশিয়ায় বসবাসকারী বাঘের সংথ্যা ৭৫০।
ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘের বসবাস। এটি সুমাত্রা প্রজাতির বাঘের আবাসস্থল। তবে এটি একটি চরম বিপন্ন প্রজাতি। ইন্দোনেশিয়ায় এই প্রজাতির বাঘের সংখ্যা প্রায় ৪০০।
সুমাত্রা প্রজাতির বাঘ প্রধানত গুনুং লিউসার, কেরিঞ্চি–সেবলাত ও বুকিত বারিসান সেলাতান জাতীয় উদ্যানে বসবাস করে। এ ছাড়া কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বনাঞ্চলেও এগুলোর অস্তিত্ব দেখা যায়।
এই অঞ্চলটিতে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘের বসবাস। ২০২২ সাল নাগাদ এটি প্রথম বাঘ বিচরণক্ষেত্র হিসেবে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমানে এখানে বাঘের সংখ্যা ৩৫৫। এগুলো বেশির ভাগই চিতওয়ান, বার্দিয়া, পারসা জাতীয় উদ্যানের সুরক্ষিত এলাকায় বিচরণ করে থাকে।
বাঘের সংখ্যার দিক থেকে থাইল্যান্ডের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। ১৯৭০-এর দশকে এখানে ইন্দো–চায়না প্রজাতির বাঘের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। বর্তমানে সেগুলোর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
থাইল্যান্ডে এখন ইন্দো–চায়নিজ প্রজাতির ১৮৯টি বাঘ আছে। মূলত ওয়েস্টার্ন ফরেস্ট কমপ্লেক্সের হুয়া খা খায়েং, মায়ে ওং, খাও ইয়াই–দং ফায়াফেন অঞ্চলে এ ধরনের বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
ভুটানে ষষ্ঠ সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘের বসবাস। দেশটিতে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। ভুটানে প্রায় ১৫১টি বাঘের বসবাস।
রয়েল মানাস, জিগমে ডোরজিসহ বিভিন্ন বন সংরক্ষণকেন্দ্র ও সংলগ্ন করিডরে ৪ হাজার ৪০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় এখানকার বাঘেরা বিচরণ করে।
বাঘের সংখ্যার দিক থেকে তালিকায় মালয়েশিয়ার অবস্থান সপ্তম। তবে দেশটির বাঘগুলো গুরুতরভাবে বিপন্ন অবস্থায় আছে।
এখানে বাঘের সংখ্যা ১৫০। এগুলো মূলত মালয়েশিয়ার তামান নেগারা, বেলুম-তেমেঙ্গর এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বনাঞ্চলে বিচরণ করে।
বিশ্বে বাঘের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বর্তমানে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ১৪৬। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনই এখানকার বাঘের মূল বিচরণক্ষেত্র।
এ ছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং শরণখোলার বনাঞ্চলও বাঘের আবাসস্থল।
মিয়ানমারে নবম সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘের বসবাস। দেশটিতে বাঘ আছে ২২টি। বাঘগুলো মূলত হুকাউং উপত্যকা, হতামানথি অভয়ারণ্য এবং তেনাসেরিম–দক্ষিণ মিয়ানমার করিডর অঞ্চলে বিচরণ করে।
তালিকায় দশম অবস্থানে আছে চীন। চীনে বাঘের সংখ্যা ২০। উত্তর-পূর্ব চীনের জিলিন ও হেইলংজিয়াং প্রদেশজুড়ে থাকা নর্থইস্ট চায়না টাইগার অ্যান্ড লেপার্ড জাতীয় উদ্যানে এগুলোর বসবাস।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া