ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে ত্রিবেনি সঙ্গমে হিন্দু পুণ্যার্থীরা। ২ ফেব্রুয়ারি
ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে ত্রিবেনি সঙ্গমে হিন্দু পুণ্যার্থীরা। ২ ফেব্রুয়ারি

ভারতে মহাকুম্ভে যাওয়া হিন্দুদের জন্য খুলে গেল মসজিদ, মাদ্রাসার দরজা

ভারতজুড়ে রাজনৈতিকভাবে মুসলিম বিদ্বেষের তীব্রতা যতই বাড়ুক, সংকটকালে মানুষের দিকে মানুষের হাত বাড়ানোর আরও এক প্রমাণ পাওয়া গেল উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজের (সাবেক এলাহাবাদ) মহাকুম্ভে। গত ২৯ জানুয়ারি পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর হাজারো বিপন্ন ও নিরন্ন পুণ্যার্থীদের আশ্রয়ের জন্য প্রয়াগরাজের মুসলিমরা খুলে দিয়েছিলেন মসজিদ, মাদ্রাসা, ইমামবাড়ার দরজা। অথচ মহাকুম্ভ চলাকালে শহরের বহু এলাকায় মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখার অলিখিত সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছিল।

বিপন্ন মানুষের জন্য শুধু মসজিদ, মাদ্রাসাই নয়—ক্ষুধার্ত অসহায় পুণ্যার্থীদের জন্য স্থানীয় মুসলিমরাও উন্মুক্ত করেছিলেন বাড়ির আগল। আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের জন্য নিরামিষ খাবারও রান্না করা হয় বহু পরিবারে। পুরি, সবজি, খিচুড়ি, গরম চা দেওয়ার পাশাপাশি কম্বল দেওয়া হয় শীত কাটাতে।

পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খবর প্রাধান্য পাচ্ছে। স্থানীয় মুসলিমদের কথায়, এটাই প্রয়াগরাজের সংস্কৃতি, স্থানীয়ভাবে যা ‘গঙ্গা–যামনি তেহজিব’ বলে পরিচিত।

মুসলিম বিদ্বেষে রাজনৈতিক ইন্ধন সত্ত্বেও এই সংস্কৃতি বা মানবিকতা শুধু প্রয়াগরাজেই নয়, অন্যত্রও দৃশ্যমান। সম্প্রতি কাশ্মীরে বরফের কারণে একদল পর্যটক আটকা পড়েছিলেন। স্থানীয় মুসলিমরা তাঁদের উদ্ধার করে মসজিদে আশ্রয় দিয়েছিলেন। পরদিন উদ্ধারকারী দল আসা পর্যন্ত তাঁদের জন্য খাবার–পানীয়র ব্যবস্থা করেছিলেন।

শুধু একটি দুটি নয়, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারির রাত ও দিন হাজারো অসহায় পুণ্যার্থীর জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল খুল্লাবাদ সবজি মন্ডি মসজিদ, বড়া তাজিয়া ইমামবাড়া, হিম্মতগঞ্জ দরগাহ, চক মসজিদের দরজা। নখসখোলা অঞ্চলের হাফিজ রাজ্জাব মসজিদ ও চক এলাকার জামে মসজিদে আশ্রয় দেওয়া হয় অন্তত ৫০০ জনকে। মুসলিম–অধ্যুষিত রোশনবাগ, খুল্লাবাদ, রানি মান্ডি, শাহগঞ্জ এলাকার বহু গৃহস্থ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয় রাজস্থান, তামিলনাড়ু, বিহার, হরিয়ানা থেকে কুম্ভমেলায় যাওয়া পুণ্যার্থীদের।

গণমাধ্যমের খবর, বাড়ির নারীরা এসব পুণ্যার্থীর জন্য সাধ্যমতো খাদ্য–পানীয়র ব্যবস্থা করেন। কোনো কোনো এলাকায় সেই রাতেই ভান্ডারা বা লঙ্গরের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় মুসলিমদের মতো শিখ সম্প্রদায়ও খুলে দিয়েছিল গুরুদ্বারের দরজা। আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল দিগ্‌ভ্রান্ত উদ্ভ্রান্ত অসহায় মানুষদের।

মাসুদ আহমেদ নামে এক শিক্ষক গণমাধ্যমে বলেন, ‘হিন্দুরা তাঁদের ধর্ম পালনে প্রয়াগে এসেছেন। তাঁদের বিপদে আমরা মানবধর্ম পালন করেছি মাত্র। বাড়তি কিছু নয়।’

চক এলাকার বাসিন্দা মইনুদ্দিন জানান, ‘মানুষের বিপদে মানুষই তো এগোবে। এটাই ছোট থেকে আমরা শিখে এসেছি।’

খুল্লাবাদের মাহমুদ আজম বলেন, ‘মহাকুম্ভ শুরুর আগে থেকেই প্রচার চালানো হয়েছে, মেলাপ্রাঙ্গণের ধারেকাছে মুসলমানেরা যেন না যায়। কী আশ্চর্য, মেলাই চলে এল মুসলিমদের মহল্লায়।’