বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পার্বত্য এলাকা আছে কোন কোন দেশে

পাহাড় সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মানুষের মধ্যে আকাশ ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। পাহাড়–পর্বত প্রকৃতির অবিস্মরণীয় সৌন্দর্যের এক অনন্য প্রতীক। উঁচু শৃঙ্গ, তুষারঢাকা চূড়া, রহস্যময় উপত্যকা—এগুলো আমাদের কল্পনাকে ছুঁয়ে যায় এবং সাহসী অভিযাত্রীদের আকর্ষণ করে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে, যেগুলোতে বিস্তৃত পার্বত্য এলাকা আছে। আবার কিছু দেশ একেবারে সমতল। বিশ্বে পার্বত্য এলাকা বেশি থাকা দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস। ওই তালিকা অনুযায়ী শীর্ষ অবস্থানে থাকা ১০টি দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ভুটান

ভুটানের রাজধানী থিম্পু
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

বৌদ্ধ–অধ্যুষিত ভুটান দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এর সীমান্ত অঞ্চলগুলো প্রায় পুরোপুরিভাবে হিমালয়ের পর্বতে ঘেরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভুটানের গড় উচ্চতা প্রায় ১০ হাজার ৭৬০ ফুট (৩ হাজার ২৮০ মিটার)। শুধু পার্বত্য এলাকার আয়তনের দিক থেকেই নয়, উচ্চতার দিক থেকেও বিশ্বে দেশটির অবস্থান শীর্ষে, অর্থাৎ এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু দেশ।

ভুটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম গাংখার পুনসুম। এটির উচ্চতা ২৪ হাজার ৮৩৬ ফুট (৭ হাজার ৫৭০ মিটার)। তবে এটি বিশ্বের এমন একটি উচ্চ শৃঙ্গ, যেখানে এখন পর্যন্ত কেউ আরোহণ করেননি। ভুটানের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা বনাঞ্চলে ঘেরা।

তাজিকিস্তান

তাজিকিস্তান

তাজিকিস্তান হলো মধ্য এশিয়ার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। তিয়ান শান পর্বতমালা তাজিকিস্তানের একটি বড় অংশকে ঘিরে রেখেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তাজিকিস্তানের গড় উচ্চতা প্রায় ১০ হাজার ৪৫৫ ফুট (৩ হাজার ১৮৬ দশমিক ৬৯ মিটার)। এটি বিশ্বের তৃতীয় উঁচু দেশ।

তাজিকিস্তানের সর্বোচ্চ চূড়ার নাম ইমেনি ইসমাইল সামানি। এটির উচ্চতা ২৪ হাজার ৫৯০ ফুট বা ৭ হাজার ৪৯৫ মিটার।

কিরগিজস্তান

কিরগিজস্তানের তিয়ান শান পার্বত্য এলাকা

এটিও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের দেশ। কিরগিজস্তানের অবস্থান তাজিকিস্তানের উত্তরে। এখানে রয়েছে তিয়ান শান পর্বতমালা। দেশটির সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের নাম জেংগিশ চোকুসু। এটি তিয়ান শানেরই একটি চূড়া।

তুষারে ঢাকা এ পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ২৪ হাজার ৪০৬ ফুট (৭ হাজার ৪৩৯ মিটার)। কিরগিজস্তানের দক্ষিণ সীমান্তজুড়েও রয়েছে পর্বতমালার অবস্থান। দেশটির গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯ হাজার ৮০৫ ফুট বা ২ হাজার ৯৮৯ মিটার।

লেসোথো

লেসোথো

লেসোথো হলো আফ্রিকা মহাদেশের একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। এর চারপাশে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান। এখানকার পাহাড়গুলো যেন ভূতাত্ত্বিক দুর্গ গড়ে রেখেছে। এর বদৌলতে লেসোথো রাজনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে। লেসোথোর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মাউন্ট এনটলেনিয়ানা। এর উচ্চতা ১১ হাজার ৪২৪ ফুট (৩ হাজার ৪৮২ মিটার)। এটি দেশটির পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত দ্রাকেনসবার্গ পর্বতমালার অংশ।

লেসোথোর আরেকটি উল্লেখযোগ্য পর্বতমালা হলো মালতি। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত এ পর্বতমালা উচ্চতা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার ৫০০ ফুট (২ হাজার ৭৪৩ মিটার)। দেশটির গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৯০ ফুট (২ হাজার ১৬১ মিটার)।

মন্টেনিগ্রো

মন্টেনিগ্রো

এটি একটি বলকান রাষ্ট্র। মন্টেনিগ্রোর কথা চিন্তা করলে সাধারণত প্রথমেই যে দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তা হলো আড্রিয়াটিক সাগরের শান্ত উপকূলরেখা।
তবে সত্যিকার অর্থে মন্টেনিগ্রোর আসল রূপ লুকিয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি প্রাকৃতিক দৃশ্যে। মন্টেনিগ্রোর নামের সঙ্গেও মিশে আছে পাহাড়। মন্টেনিগ্রোর অর্থ হলো ‘ব্ল্যাক মাউন্টেন’ বা ‘কালো পর্বত’।

কালো পর্বত নামটি মূলত লোভচেন পর্বতকে বোঝায়। এটির উচ্চতা ৫ হাজার ৭৩৮ ফুট (১ হাজার ৭৪৯ মিটার)। আর মন্টেনিগ্রোর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম বোবোটোভ শৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৮ হাজার ২৭৪ ফুট (২ হাজার ৫২২ মিটার)।

আর্মেনিয়া

আর্মেনিয়া

আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র হলো ট্রান্সককেশিয়া অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত তিনটি দেশের একটি। অপর দুটি দেশ হলো জর্জিয়া ও আজারবাইজান।

এখানে বিশাল ককাস পর্বতমালা (যার মধ্যে আছে নিকটবর্তী মাউন্ট এলব্রুস, ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) ক্রমে লেসার ককাস পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়ে দেশের উত্তর ও পূর্ব অংশজুড়ে বিস্তৃত।

আর্মেনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো মাউন্ট অ্যারাগাটস। এটির উচ্চতা ১৩ হাজার ৪১৮ ফুট (৪ হাজার ৯০ মিটার)। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে আর্মেনীয় উচ্চ ভূমিতে এটির অবস্থান।
আর্মেনিয়ার গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার ৮৭৯ ফুট (১ হাজার ৭৯২ মিটার)।

উত্তর মেসিডোনিয়া

উত্তর মেসিডোনিয়া হলো দক্ষিণ-মধ্য বলকান অঞ্চলের একটি ছোট দেশ। দেশটির পশ্চিম সীমান্তে সার পর্বতমালার অবস্থান, যা দক্ষিণ কসোভো পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব দিকে রয়েছে পিরিন পর্বতমালা, যার নামকরণ করা হয়েছে স্লাভিক বজ্রদেবতা পেরুনের নামানুসারে।

উত্তর মেসিডোনিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম মাউন্ট কোরাব। এ শৃঙ্গের অবস্থান আলবেনিয়া সীমান্তের পশ্চিমে। মাউন্ট কোরাবের উচ্চতা ৯ হাজার ৩০ ফুট (২ হাজার ৭৫২ মিটার)। এ ছাড়া উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৬ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতার বেশ কিছু পাহাড় আছে।

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ড

সবচেয়ে বেশি পার্বত্য এলাকা আছে, এমন দেশের তালিকায় ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের অবস্থান অষ্টম। ছোট এ দেশের যেখানেই ঘুরতে যাওয়া হোক না কেন, উঁচু উঁচু পাহাড়ের দেখা পাওয়া যায়।

সুইস আল্পস পর্বতমালা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের সেরা পর্বতারোহীদের আকর্ষণ করে আসছে। পর্বতারোহীরা এ বিখ্যাত শৃঙ্গগুলো দেখে মুগ্ধ হন।

লেবানন

লেবাননের বেকা উপত্যকা

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ লেবানন ভৌগোলিকভাবে এক অনন্য স্থানে অবস্থিত। দেশটির পশ্চিম পাশে ভূমধ্যসাগরের অবস্থান। আর প্রায় পুরো দেশে বিস্তৃত হয়েছে লেবানন পর্বতমালা। পূর্ব দিকে বিস্তৃত অ্যান্টিলেবানন পর্বতমালা, যা লেবানন–সিরিয়ার সীমান্তদৈর্ঘ্যের প্রায় পুরোটায় বিস্তৃত।

লেবাননের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কুরনাত আল-সওদা। এটির উচ্চতা ১০ হাজার ১৩১ ফুট (৩ হাজার ৮৮ মিটার)।

নেপাল

নেপালের ললিতপুরে ওয়ান ট্রি হিল

দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ নেপালের নাম এলেই শুরুতে চোখের সামনে ভেসে উঠে হিমালয় পর্বতমালার দৃশ্য। গ্রেট হিমালয় পর্বতমালায় রয়েছে আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার বেশ কয়েকটি চূড়া। এর মধ্যে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, মাকালু, চো ওয়ু, ধবলগিরি, মানাসলু, অন্নপূর্ণা ও মাউন্ট এভারেস্ট।

এভারেস্ট হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ২৯ হাজার ৩৫ ফুট (৮ হাজার ৮৫০ মিটার)। এটি দুঃসাহসী অভিযাত্রীদের কাছে এক স্বপ্নের গন্তব্য।

সবচেয়ে বেশি পার্বত্য এলাকার দেশের তালিকায় নেপালের অবস্থান বিশ্বে দশম। তবে গড় উচ্চতার দিক থেকে এটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, অর্থাৎ ভুটানের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় উঁচু দেশ। এর গড় উচ্চতা ১০ হাজার ৭১৫ ফুট (৩ হাজার ২৬৬ মিটার)।