যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী  কিয়ার স্টারমার

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে ২২১ আইনপ্রণেতার চিঠি

ফিলিস্তিনের গাজায় চলছে খাবারের জন্য হাহাকার। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার মধ্যেও উপত্যকাটির বাসিন্দাদের একমুঠো খাবারের জন্য ছুটে বেড়াতে হচ্ছে। গাজার মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ দিনের পর দিন না খেয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ২২১ জন আইনপ্রণেতা।

গাজায় অনাহারে থাকা মানুষদের নিয়ে আজ শনিবার বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তাতে উপত্যকাটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের অনাহারে থাকার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। উপত্যকাটিতে অপুষ্টিতে ভোগা ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।

গাজায় অনাহারে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। আজ উপত্যকাটির আল-শিফা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশু। একজনের বয়স মাত্র সাত দিন। এ নিয়ে ২১ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলার সময় অনাহারে ১২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো। তাদের মধ্যে শিশু ৮০ জনের বেশি।

গাজায় বর্তমানে ১৭ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বলে আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন উপত্যকাটির মেডিকেল রিলিফের পরিচালক মোহাম্মদ আবু আফাশ। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আমরা পঞ্চম পর্যায়ের দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছি। দ্রুত চিকিৎসা সরঞ্জাম না পেরে মৃত্যুর হার আরও বাড়বে। বিগত পাঁচ মাসে এখানে কোনো খাবার, পানি ও ত্রাণ সরবরাহ করা হয়নি।’

‘হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করা হবে’

দীর্ঘ ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর গত মে মাস থেকে গাজায় খুবই সীমিত আকারে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এ ছাড়া উপত্যকাটিতে ত্রাণ সরবরাহ করছে বিতর্কিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন। এই সংস্থার ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে গত দুই মাসে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে আজ জানিয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

এদিকে আজও গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি জানিয়েছে, সবশেষ এক দিনে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো উপত্যকাটিতে শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামলায় আজ ভোর থেকে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সাড়ে ৫৯ হাজারে বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যে আবার কাতারে যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে ফিরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল। এ জন্য হামাসকে দুষছে তারা। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি চাইছে না। হামাসকে এখন খুঁজে খুঁজে বের করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এখনই পুরোপুরি সংঘাত থামাতে চায় না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি চান ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা

গাজায় চরম নৃশংসতার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ওপরও চাপ বাড়ছে। শুক্রবার এই স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে দেশটির ২২১ জন আইনপ্রণেতা একটি চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আইনপ্রণেতারাও রয়েছেন।

চিঠিতে আইনপ্রণেতারা স্টারমারের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’ ২৮ ও ২৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একটি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার স্টারমার বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবেই কেবল ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য।

শুক্রবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি একটি যৌথ বিবৃতিও দিয়েছে। তাতে গাজায় ‘মানবিক বিপর্যয়’ থামাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তিন দেশ। বিবৃতিতে দেশগুলোর নেতারা বলেছেন, বেসামরিক লোকজনের জরুরি মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখাটা অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েলকে অবশ্যই বিধিনিষেধগুলো তুলে নিতে হবে।