বাশার আল-আসাদের পতনের পর তুরস্কের রেহ্যানলি শহরের সিলভেগোজু সীমান্ত ক্রসিংয়ে নিজ দেশে প্রবেশের জন্য সিরিয়ার শরণার্থীদের অপেক্ষা। ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর
বাশার আল-আসাদের পতনের পর তুরস্কের রেহ্যানলি শহরের সিলভেগোজু সীমান্ত ক্রসিংয়ে নিজ দেশে প্রবেশের জন্য সিরিয়ার শরণার্থীদের অপেক্ষা। ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর

বাশারের পতনের এক বছরে কত মানুষ ঘরে ফিরলেন সিরিয়ায়

সিরিয়ায় ৫৪ বছর ক্ষমতায় ছিল আল-আসাদের পরিবার। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের পতনের মধ্য দিয়ে পরিবারটির দীর্ঘ শাসনের অবসান হয়। আজ এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো।

১৪ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার প্রায় ৬৮ লাখ মানুষ দেশ ছাড়েন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ শরণার্থীদের অর্ধেকের বেশি, তথা প্রায় ৩৭ লাখ ৪ হাজার আশ্রয় নেন প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে। লেবাননে আশ্রয় নেন প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার। জর্ডানে আশ্রয় নেন প্রায় ৬ লাখ ৭২ হাজার।

২০১২ থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন প্রায় ৭ লাখ ৫ হাজার সিরিয়ার শরণার্থী। তবে নিবন্ধনের বাইরেও ইউরোপের এসব দেশে সিরিয়ার অনেক শরণার্থী রয়েছেন। বাশারের পতনের পর এসব দেশ সিরিয়ার শরণার্থী নেওয়া একধরনের বন্ধ করে দিয়েছে।

সিরিয়ায় যেহেতু এখন একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। তাই লাখ লাখ শরণার্থী এবং প্রবাসে চলে যাওয়া সিরিয়ার নাগরিক দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। চাইছেন নিজ দেশে নতুন করে জীবন শুরু করতে।

ফিরে আসা শরণার্থী

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্যমতে, বাশারের পতনের পর এক বছরে প্রায় ৭ লাখ ৮২ হাজার সিরিয়ার নাগরিক বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে আলেপ্পোতে ১ লাখ ৭০ হাজার, হোমসে ১ লাখ ৩৪ হাজার এবং দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে ১ লাখ ২৪ হাজার মানুষ বিদেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন।

দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে আসা এসব ব্যক্তিদের অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে দেশটিতে উপযুক্ত বেতনে চাকরি খুঁজে পাওয়া এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি।

অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ

গত এক বছরে সিরিয়ার অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৮ লাখ মানুষ নিজেদের গ্রাম বা শহরে ফিরেছেন। তাঁদের মধ্যে আলেপ্পোতে ৪ লাখ ৭১ হাজার, ইদলিবে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার এবং হামায় ৩ লাখ ১৪ হাজার মানুষ নিজ বাড়িঘরে ফিরে এসেছেন।

তালাল নাদার আল-আব্দো নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার গৃহযুদ্ধ চলাকালে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাশারের পতনের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িতে ফিরে এসেছেন। তিনি বাড়িটির পুনর্নির্মাণ শুরু করেছেন।

গত এক বছরে শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মিলিয়ে সাকল্যে ২৬ লাখ সিরিয়ার নাগরিক নিজ বাড়িঘরে ফিরেছেন। কিন্তু এখনো দেশের ভেতরে ৬০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রয়ে গেছেন।

ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদের দেয়ালচিত্রে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন। দামেস্কের উত্তর-পূর্ব দিকের আদ্রা শহরে, ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর

‘স্বদেশে ফেরার অনুভূতি’

দামেস্কের ব্যবস্থাপনা প্রশাসনের কর্মকর্তা খালিদ আল-শাত্তা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর সিরিয়া ছেড়ে গিয়েছিলেন। তিনি এখন দেশে ফিরে এসেছেন। খালিদ নিজের স্ত্রী ও এক বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে প্রথমে জর্ডানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গিয়েছিলেন তুরস্কে। সেখানেই তিনি একধরনের স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন।

বাশারের পতনের সময়কার কথা স্মরণ করে খালিদ বলেন, ‘তখন দেশব্যাপী ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। সেই রাতে আমরা সবাই জেগে খবর দেখছিলাম।’

৪১ বছর বয়সী এ ব্যক্তি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘সিরিয়া যে মুহূর্তে মুক্ত হলো, তখনই আমরা (ফিরে যাওয়ার) সিদ্ধান্ত নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার ও আমার মনে হয়েছিল, আমাদের সিরিয়ায় ফিরে গিয়ে দেশ গড়ায় অংশ নেওয়া উচিত।’

১৩ বছর পর সিরিয়ায় ফেরার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে খালিদ বলেন, ‘মনে হলো আমি যেন কখনো সিরিয়া ছেড়ে যাইনি। তবে এই দেশ, এই জাতি এবং এই ভূমির সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকার অনুভূতি অন্য রকম।’