
ইরানের ধর্মীয় নেতা মুসা আল-সাদর নিখোঁজ হয়েছেন ৫০ বছর আগে। কেউ বলছেন, তাঁকে লিবিয়ায় হত্যা করা হয়েছে। সেই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন মইন শারিফ। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসির অনলাইনে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কম্পিউটারবিজ্ঞানী একটি মরদেহের ছবি নিয়ে গবেষণা করছেন। চেষ্টা করছেন এমন এক রহস্য উন্মোচন করতে, যা প্রায় ৫০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
‘(বেঁচে থাকলে) বর্তমানে তাঁর চেহারা কি দেখতে এমন হতো?’ দ্বিধার সুরে প্রশ্ন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসান উগাইল।
বহু পুরোনো পচন ধরা একজনের মরদেহের চেহারার ছবিটিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিবিসি অনুসন্ধানী দলের জন্য এটিকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে।
মূল ছবিটি তুলেছিলেন এক সাংবাদিক। তিনি ২০১১ সালে লিবিয়ার রাজধানীতে একটি গোপন মর্গে মরদেহটি দেখেছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, হতে পারে এটি প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা মুসা আল-সদরের মরদেহ। ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় গিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।
মুসা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আছে। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আবার অনেকের দাবি, তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং লিবিয়ার কোথাও বন্দী আছেন।
মুসা আল-সদরের ভক্তদের কাছে তাঁর নিখোঁজের ঘটনা ১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের মতোই রহস্যজনক। মুসাকে নিয়ে আমাদের দীর্ঘ অনুসন্ধান এতটাই সংবেদনশীল ছিল যে আমি ও বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের একটি দল কয়েক দিন লিবিয়ায় আটক ছিলাম।
ভক্তদের কাছে মুসা ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র। লেবাননের অবহেলিত শিয়া মুসলিমদের জন্য কাজ করায় রাজনৈতিকভাবে তাঁর সুনাম ছিল। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা। তাই তাঁকে নিয়ে ভক্তদের আবেগ-অনুভূতিও বেশি।
মুসার অনুসারীরা তাঁকে ‘ইমাম’ উপাধি দিয়েছেন। জীবিত অবস্থায় কোনো শিয়া ধর্মগুরুর জন্য এমন সম্মান বিরল। শিয়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এ খেতাব দেওয়া হয়।
শিয়া মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শাখা ইসনা আশারিয়া। এই শাখার অনুসারীরা ১২ ইমামে বিশ্বাসী। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের দ্বাদশ ইমাম মারা যাননি। তিনি নবম শতাব্দীতে নিখোঁজ হন। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে তিনি আবার ফিরে আসবেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর সঙ্গে মুসা আল-সদরের নিয়তি অনেকটাই মিলে যায়। তাই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ায় অনুসারীদের কাছে তাঁর প্রভাব আরও বেড়েছে।
মূল ছবিটি তুলেছিলেন এক সাংবাদিক। তিনি ২০১১ সালে লিবিয়ার রাজধানীতে একটি গোপন মর্গে মরদেহটি দেখেছিলেন। তখন তাঁকে বলা হয়েছিল, হতে পারে এটি প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা মুসা আল-সদরের মরদেহ। ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় গিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।
এ ছাড়া মুসার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বিশ্বের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সবচেয়ে অস্থিতিশীল অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্যও সম্ভবত বদলে দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ইরানি-লেবানিজ এই ধর্মগুরু তাঁর প্রভাব ব্যবহার করে ইরানকে এবং এর মাধ্যমে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে আরও মধ্যপন্থী মতাদর্শের দিকে পরিচালনা করতে চাচ্ছিলেন। তবে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ঠিক আগে তিনি নিখোঁজ হন।
তাই মুসা আল-সদরের পরিচয় শনাক্তে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছিল।
যে সাংবাদিক ওই মরদেহের ছবিটি তুলেছেন, তিনি আমাদের বলেন, মরদেহটি অস্বাভাবিক লম্বা ছিল। মুসা আল-সদরও ছিলেন বেশ লম্বা। তাঁর উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। তবে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করার মতো কোনো বৈশিষ্ট্যই সেটির চেহারায় অবশিষ্ট ছিল না।
আমরা কি শেষমেশ এই রহস্যের সমাধান করতে পারব
১৯৭৪ সালে লেবাননে ‘আমাল মুভমেন্ট’ নামের একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন চালু করেন মুসা। এটি ‘দ্য মুভমেন্ট অব দ্য ডিপ্রাইভড’ বা বঞ্চিতদের আন্দোলন নামেও পরিচিত ছিল। এই সংগঠন শিয়াদের সমান প্রতিনিধিত্ব এবং ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দরিদ্রদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি এতটাই দৃঢ় ছিলেন যে গির্জায় ধর্মীয় বক্তব্য দিয়েছিলেন।
মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির সঙ্গে দেখা করতে তাঁরই আমন্ত্রণে ১৯৭৮ সালের ২৫ আগস্টে মুসা আল-সদর লিবিয়ায় যান।
এর তিন বছর আগে লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সেই সংঘাতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারাও জড়িয়ে পড়েন। তাঁদের অনেকেই সে সময় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান নেন। সেখানে মুসা আল-সদরের বেশির ভাগ অনুসারী বাস করতেন।
সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের গোলাগুলি শুরু হয়। মুসা চেয়েছিলেন গাদ্দাফি এই সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে লেবাননের সাধারণ মানুষকে রক্ষা করুন।
গাদ্দাফির সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় ছয় দিন লিবিয়ায় থাকার পর ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট মুসাকে ত্রিপোলির একটি হোটেল থেকে বেরিয়ে লিবিয়ার একটি সরকারি গাড়িতে উঠতে দেখা গিয়েছিল। এরপর আর কখনো তাঁকে দেখা যায়নি।
গাদ্দাফির নিরাপত্তা বাহিনী পরে দাবি করেছিল, মুসা রোমে চলে গেছেন। তবে পরবর্তী সময়ে এক তদন্তে এ দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
মুসার অনুসারীরা তাঁকে ‘ইমাম’ উপাধি দিয়েছেন। জীবিত অবস্থায় কোনো শিয়া ধর্মগুরুর জন্য এমন সম্মান বিরল। শিয়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই খেতাব দেওয়া হয়।
গাদ্দাফিশাসিত লিবিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা ছিল কার্যত অসম্ভব। কিন্তু ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় লিবিয়ার মানুষ যখন তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন সত্য উন্মোচনের দরজা খুলে যায়।
লেবানিজ-সুইডিশ সাংবাদিক কাসেম হামাদি সে সময় ত্রিপোলিতে একটি গোপন মর্গের খবর পান। একটি সূত্র তাঁকে জানিয়েছিল, সেখানে হয়তো মুসা আল-সদরের মরদেহ থাকতে পারে।
কাসেম ওই মর্গে গিয়ে দেখলেন, সেখানে একটি হিমায়িত কক্ষে ১৭টি মরদেহ রাখা। এর মধ্যে একটি মরদেহ ছিল শিশুর, বাকিগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের।
কাসেমকে জানানো হলো, তাঁদের প্রায় সবাই আনুমানিক তিন দশক আগে মারা গেছেন, যা মুসার নিখোঁজ হওয়ার সময়ের সঙ্গে মিলে যায়। এর মধ্যে একটি মরদেহের সঙ্গে মুসার মিল পাওয়া গেছে।
কাসেম আমাকে বলেন, (মর্গের এক কর্মী) একটি ড্রয়ার খুললেন। ড্রয়ারে মরদেহ দেখার সঙ্গে সঙ্গে দুটি বিষয় আমার চোখে পড়ে। একটি হলো মরদেহটির মুখাবয়ব, ত্বকের রং এবং চুলের গঠন—এত বছর পরও সবকিছু মুসার মতোই মনে হচ্ছিল।
অন্যটি হলো এই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। অন্তত মাথার খুলি দেখে কাসেমের তা–ই মনে হয়েছিল। কপালে প্রচণ্ড আঘাত কিংবা বাঁ চোখের ওপর গুলি লাগার মতো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল।
কিন্তু আসলেই কি এটা মুসার দেহ? আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব?
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাসেমের তোলা ওই মরদেহের ছবিটি আমরা ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের কাছে নিয়ে গেলাম। ২০ বছর ধরে এই দল একটি বিশেষ অ্যালগরিদম তৈরি করেছে, যার নাম ‘ডিপ ফেস রিকগনিশন’। এটি দুই বা ততোধিক ছবির মধ্যে জটিল মিলগুলো খুঁজে বের করতে পারে। এই পদ্ধতি বিভিন্ন পরীক্ষায় অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে, এমনকি অসম্পূর্ণ ও ঝাপসা ছবির ক্ষেত্রেও।
এই দলের প্রধান অধ্যাপক হাসান উগাইল। তিনি মর্গের ওই ছবি মুসা আল-সদরের জীবদ্দশায় বিভিন্ন সময় তোলা চারটি ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে রাজি হলেন।
‘ডিপ ফেস রিকগনিশন’ সফটওয়্যারে ছবির মিল নির্ধারণে সর্বোচ্চ ১০০ নম্বর দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। যে ছবি যত বেশি নম্বর পাবে, সে ছবি একই ব্যক্তি বা একই পরিবারের সদস্যের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মুসার চারটি ছবির সঙ্গে মর্গের মরদেহটির ছবি মেলানোর পর দেখা গেল, সেটি ৬০ নম্বর পেয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে অধ্যাপক হাসান উগাইল আমাদের বললেন, মরদেহটি মুসা আল-সদরের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আরও বিশদভাবে যাচাইয়ের জন্য অধ্যাপক উগাইল একই পদ্ধতি ব্যবহার করে ছবিটির সঙ্গে মুসার পরিবারের ছয় সদস্যের ছবি মেলালেন। এরপর তিনি মরদেহের ছবির সঙ্গে দৈবচয়নের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যের ১০০ জন পুরুষের ছবি মেলালেন, যাঁদের চেহারার সঙ্গে মুসার চেহারার কিছুটা মিল আছে।
১৯৭৪ সালে লেবাননে ‘আমাল মুভমেন্ট’ নামের একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন চালু করেন মুসা। এটি ‘দ্য মুভমেন্ট অব দ্য ডিপ্রাইভড’ বা বঞ্চিতদের আন্দোলন নামেও পরিচিত ছিল। এই সংগঠন শিয়াদের সমান প্রতিনিধিত্ব এবং ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দরিদ্রদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে।
পরীক্ষা শেষে দেখা গেল, মুসার পরিবারের সদস্যদের ছবি বেশি নম্বর পেয়েছে। তবে মরদেহের চেহারার সঙ্গে মুসার জীবদ্দশায়ের ছবি সবার চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে।
এই ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে, মরদেহটি মুসা আল-সদরের হওয়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে। আর মাথার ভাঙা খুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাঁকে হয়তো হত্যা করা হয়েছে।
কাসেমের তোলা ওই ছবি দেখার চার বছর পর ২০২৩ সালের মার্চে আমরা সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং নিজ চোখে মরদেহটি দেখার জন্য লিবিয়ায় যাই। আমরা জানতাম, বিষয়টি সংবেদনশীল। এরপরও লিবিয়ার প্রতিক্রিয়া আমাদের অবাক করেছিল।
লিবিয়ায় পৌঁছানোর পরদিন ত্রিপোলিতে আমরা গোপন মর্গটি খুঁজতে বের হই। বিবিসির দলটির সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক কাসেম। তিনি ওই মর্গে গিয়েছিলেন ২০১১ সালে। কিন্তু তিনি এটির অবস্থান মনে করতে পারছিলেন না। শুধু মনে আছে, মর্গটির কাছেই একটি হাসপাতাল ছিল।
পরে আমরা জানতে পারলাম, হাঁটাদূরত্বের মধ্যেই একটি হাসপাতাল আছে। সেদিকেই রওনা দিলাম। হঠাৎ কাসেম বলে উঠলেন, ‘এই তো! আমি নিশ্চিত, এটাই সেই ভবন, যেখানে মর্গ ছিল।’
আমরা শুধু ভবনটির বাইরের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে পেরেছিলাম। কারণ, ভেতরে ঢুকে ছবি তোলা বা ভিডিও করার অনুমতি চাইলেও আমাদের তা দেওয়া হয়নি। পরদিন অজ্ঞাতপরিচয় একদল লোক এসে ব্যাখ্যা ছাড়াই আমাদের আটক করে। পরে জানতে পারি, তারা লিবিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা।
গাদ্দাফির ওপর ইরানের কট্টরপন্থীদের প্রভাব ছিল। তাঁরা উদ্বিগ্ন ছিলেন, মুসা ইরানের বিপ্লব পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে চলেছেন।ইরান–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু কুপার
আমাদের লিবিয়ার গোয়েন্দা বিভাগের একটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আলাদা আলাদা কক্ষে বন্দী করে রাখা হয়। অভিযোগ আনা হয় গুপ্তচরবৃত্তির। আমাদের চোখে মুখোশ পরানো হয়, বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং বলা হয়, কেউ আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। গোয়েন্দারা বলেছিল, ওই কারাগারে দশকের পর দশক আমাদের বন্দী করে রাখা হবে।
আমরা সেখানে যন্ত্রণাদায়ক ছয়টি দিন কাটালাম। শেষ পর্যন্ত বিবিসি ও যুক্তরাজ্য সরকারের চাপের মুখে আমাদের মুক্তি দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
কারাগারের কর্মীরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, গাদ্দাফির অনুগতরাই লিবিয়ার গোয়েন্দা বিভাগ চালান। তাঁরা চাননি, বিবিসি মুসা আল-সদরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তদন্ত করুক।
কেউ কেউ বহুদিন ধরে বিশ্বাস করেন, মুসা আল-সদরকে হত্যা করা হয়েছে।
সাবেক লেবানিজ গবেষক ড. হোসেইন কেনান একসময় যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতেন। তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালের যে সপ্তাহে মুসা আল-সদর নিখোঁজ হন, ওই সপ্তাহে তিনি ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দপ্তরে গিয়েছিলেন। তাঁকে জানানো হয়েছিল, মুসাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা একটি প্রতিবেদন পেয়েছে।
এই তথ্য প্রমাণিত হয় লিবিয়ার সাবেক বিচারমন্ত্রী মুস্তাফা আবদেল জালিলের মাধ্যমে। ২০১১ সালে তিনি কাসেমকে বলেছেন, ‘নিখোঁজের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন তারা মুসার কাগজপত্র নকল করে দেখান, তিনি ইতালি যাচ্ছেন। আর তারপর তাঁকে লিবিয়ার কারাগারে হত্যা করা হয়।’
মুস্তাফা আবদেল আরও বলেন, গাদ্দাফির সিদ্ধান্তই শেষ কথা।
গাদ্দাফি যদি সত্যিই মুসাকে হত্যার আদেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে কেন তিনি এমনটি করলেন?
ইরান–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু কুপারের মতে, গাদ্দাফির ওপর ইরানের কট্টরপন্থীদের প্রভাব ছিল। তাঁরা উদ্বিগ্ন ছিলেন, মুসা ইরানে বিপ্লবের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করতে চলেছেন।
তবে লেবাননের আমাল পার্টি বিশ্বাস করে, মুসা আল-সদর এখনো বেঁচে আছেন। প্রায় প্রতিটি বছর তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বার্ষিকীতে দলটি তাঁর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করে।