মোসাব আল-দেবসের বয়স ১৪ বছর। তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে সে। আল-শিফা হাসপাতাল থেকে তোলা
মোসাব আল-দেবসের বয়স ১৪ বছর। তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে সে। আল-শিফা হাসপাতাল থেকে তোলা

ক্ষুধা গাজায় বোমার মতো মানুষ মারছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

ফিলিস্তিনের গাজায় অনাহারে আরও অন্তত ১০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে ক্ষুধা ও চরম অপুষ্টিতে ভুগে অন্তত ১১১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। অনাহারে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই শিশু। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন গত কয়েক সপ্তাহে।

এদিকে গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৪ জন ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, এ বছর এখন পর্যন্ত অপুষ্টিজনিত কারণে গাজায় যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২১টি শিশু রয়েছে।

ডব্লিউএইচও গত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন গাজায় কোনো খাদ্য সরবরাহ করতে পারেনি। সংস্থাটি বলেছে, এখন যে খাদ্যসহায়তা চালু হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

১১১টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় গণহারে মানুষ অনাহারে রয়েছে। অথচ গাজার বাইরে টনকে টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পড়ে রয়েছে। ত্রাণ বিতরণের জন্য সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ক্ষুধা এখন বোমার মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। পরিবারগুলো আর পর্যাপ্ত খাবার চাইছে না, তারা এখন যা হোক কিছু একটা চাইছে।
তারেক আবু আজ্জুম, আল–জাজিরার প্রতিনিধি

গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম বলেছেন, ‘ক্ষুধা এখন বোমার মতোই প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। পরিবারগুলো আর পর্যাপ্ত খাবার চাইছে না, তারা এখন যা হোক কিছু একটা চাইছে।’

রাফার একটি সরকারি স্কুলে খাবার সংগ্রহের জন্য এসেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গাজার বাসিন্দারা এ পরিস্থিতিকে একটি ধীর, যন্ত্রণাময় মৃত্যুর প্রক্রিয়া বলে বর্ণনা করছেন; যা বাস্তবে তাঁদের সঙ্গে ঘটছে। তারেক আবু আজ্জুম বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ। ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে এটা চাপিয়ে দিচ্ছে।’

ইসরায়েল মার্চ থেকে গাজায় কোনো পণ্য প্রবেশ করতে দেয়নি। মে থেকে সামান্য পরিমাণে ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। ওই ত্রাণও মূলত বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সংগঠনটির ত্রাণ বিতরণ কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে।

ইসরায়েল গত মার্চ মাস থেকে গাজায় কোনো পণ্য প্রবেশ করতে দেয়নি। মে মাস থেকে সামান্য পরিমাণে ত্রাণ ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। ওই ত্রাণ মূলত বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। সংগঠনটির ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে।

জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে ত্রাণের আশায় ভিড় করা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়মিত হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণসহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েল গাজায় প্রবেশ ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে। তারা গাজায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে রেখেছে। আর ইসরায়েলি সেনারা মে থেকে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে শত শত ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছেন।

খাদ্যের এমন সংকট চলছে যে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মই করতে পারছে না। এমনকি খাদ্যসংকটে সাংবাদিক, শিক্ষক, ডব্লিউএইচওর নিজস্ব কর্মীরাও নিজেদের কাজ করতে পারছেন না।
রিক পিপারকর্ন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি

জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি অবস্থাবিষয়ক পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ‘গাজায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের একটি ন্যূনতম শর্তাবলি পূরণ করতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টিতে আমি জোর দিতে চাই তা হলো, আমাদের বিতরণকেন্দ্র এবং ত্রাণবাহী গাড়িবহরের কাছে কোনো সশস্ত্র বাহিনী থাকা চলবে না।’

অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলের ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেন, ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর একের পর এক হামলার ফলে গাজায় অবশিষ্ট থাকা কিছু হাসপাতাল এখন ‘বৃহৎ ট্রমা ওয়ার্ডে’ পরিণত হয়েছে।

গাজায় গণহারে মানুষ অনাহারে রয়েছেন। অথচ বাইরে টন টন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসামগ্রী পড়ে আছে। উপত্যকাটিতে ত্রাণ বিতরণে সহায়তাকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল।

পিপারকর্ন আরও বলেন, খাদ্যের এমন চরম সংকট চলছে যে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্মই করতে পারছে না। এমনকি খাদ্যসংকটে সাংবাদিক, শিক্ষক, ডব্লিউএইচওর নিজস্ব কর্মীরাও নিজেদের কাজ করতে পারছেন না।

মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে। এখন তারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকেরা খাবার পান না, তবু তাঁরা কাজ করে যান।
নূর শরাফ, গাজা নগরের আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক

গাজা নগরের আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক নূর সরাফও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে। এখন তারা অনাহারে মারা যাচ্ছে। অনেক সময় চিকিৎসকেরা খাবার পান না, তবু তাঁরা কাজ করে যান।’