
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে একটি গ্রামে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় তিন হাজার জলপাইগাছ উপড়ে ফেলেছে। গ্রাম পরিষদের উপপ্রধান এ তথ্য দিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-মুগাইর নামের গ্রামটির শূন্য দশমিক ২৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জলপাইগাছ উপড়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। রামাল্লার উত্তর–পূর্বে এ গ্রামটির অবস্থান। এখানে প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস।
গ্রাম পরিষদের উপপ্রধান মারজুক আবু নাইম ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফাকে বলেন, শনিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি সেনারা ৩০টির বেশি বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পদ এবং গাড়ি ধ্বংস করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক দপ্তরের (ওসিএইচএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ২ হাজার ৩৭০ বারের বেশি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে রামাল্লা এলাকায়।
জলপাইগাছকে ফিলিস্তিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলি সেনারা দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে জলপাইগাছ উপড়ে ফেলার মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি জমি দখল ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার চেষ্টায় এমনটা করা হয়ে থাকে।
ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, জলপাইগাছগুলো গ্রামের ভেতর দিয়ে তাদের বসতি এলাকার দিকে চলে যাওয়া প্রধান সড়কটির জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’ তৈরি করছিল।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়বিষয়ক দপ্তরের (ওসিএইচএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ২ হাজার ৩৭০ বারের বেশি হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে রামাল্লা এলাকায়। সেখানে ৫৮৫টি হামলা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় নাবলুস এলাকা। সেখানে ৪৭৯টি হামলা হয়েছে।
একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কমপক্ষে ৬৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৯ জন শিশু।
গত শনিবার আল-মুগাইর গ্রামে জলপাইগাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে আল–জাজিরার পক্ষ থেকে ইসরায়েলি সেনাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে তারা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
ফিলিস্তিনের গবেষক হামজা জুবেইদাত মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করতে চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরায়েল এ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
আল–জাজিরাকে জুবেইদাত বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল একই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। সেটি হলো—পশ্চিম তীরের শহর ও গ্রাম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা। এখন যা ঘটছে, তা এই উচ্ছেদ প্রক্রিয়ারই ধারাবাহিকতা। ইসরায়েলের নতুন কোনো প্রক্রিয়া নয়।’
জুবাইদাতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আল-মুগাইরের কৃষির ইতিহাস অনেক পুরোনো। পশ্চিম তীরের অন্য গ্রামের মতোই এখানকার মানুষও মূলত কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল।
জুবেইদাত বলেন, ‘যে এলাকা থেকে তিন হাজারের বেশি জলপাইগাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সেটি রামাল্লা অঞ্চলের সবচেয়ে উর্বর ভূমিগুলোর একটি। গাছ কেটে ফেলা, পানির উৎস দখল, ফিলিস্তিনিদের খামার ও পানির উৎসের কাছে যেতে বাধা দেওয়ার মানে হলো তাদের খাদ্য ও পানির অনিশ্চয়তা আরও বেড়ে যাওয়া।’
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই। হামলায় নতুন করে ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬২ হাজার ৬০০–এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।