ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের অর্জন নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে দূরপাল্লার ‘হজ কাসিম’ ও খোররমশাহর’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। তেহরান, ইরান, ২২ আগস্ট ২০২৩
ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের অর্জন নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে দূরপাল্লার ‘হজ কাসিম’ ও খোররমশাহর’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। তেহরান, ইরান, ২২ আগস্ট ২০২৩

নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি ইরান, দেশটির হামলার প্রধান বৈশিষ্ট্য কী

ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ‘জায়নবাদীদের’ কড়া বার্তা দিলেও সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তেহরান এখনো তার নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নামায়নি।

গত শুক্রবার (১৩ জুন) বিনা উসকানিতে ইরানের ওপর আগ্রাসী হামলা চালায় ইসরায়েল। পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকার ওপর চালানো এ হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণুবিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক।

ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডের জবাবে ইরানের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা শুরু করে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্স গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’র অংশ হিসেবে ১৩ দফায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ইরান রাত ও দিন—উভয় সময়েই হামলা চালাচ্ছে। সময়ের অনিয়মিত অবস্থা ইসরায়েলি বাহিনীকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না। ভুয়া অভিযানের সঙ্গে প্রকৃত হামলার সমন্বয়ের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইরানি হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, আত্মঘাতী ড্রোনসহ বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র।

সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের হামলার প্রধান ১০টি বৈশিষ্ট্য ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে একপ্রকার অকার্যকর করে দিয়েছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

১. ইরান রাত ও দিন—উভয় সময়েই হামলা চালাচ্ছে। সময়ের অনিয়মিত অবস্থা ইসরায়েলি বাহিনীকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না।

২. ভুয়া অভিযানের সঙ্গে প্রকৃত হামলার সমন্বয়ের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

৩. হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, আত্মঘাতী ড্রোনসহ বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র।

৪. ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ‘থাড’, ‘আয়রন ডোম’ ও ‘ডেভিডস স্লিং’-এর মতো আধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যে পৌঁছাচ্ছে। এতে ইসরায়েল বুঝে গেছে, তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা আসলে নয়।

৫. বিভিন্ন ধরনের ও অপ্রত্যাশিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে থেমে থেমে, যা প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

৬. ইরানের বাহিনী ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে বিস্মিত করছে।

৭. হামলার পরিসীমা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়; ইসরায়েলজুড়েই ইরান হামলা চালাচ্ছে—উত্তরের শেষ প্রান্ত থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত।

৮. ইরানের হাতে লক্ষ্যবস্তুর একটি ‘ডেটা ব্যাংক’ রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা সামরিক ঘাঁটি, তেল শোধনাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানতে পারছে।

৯. ইরান বারবার সতর্ক করে দিয়েছে—অধিকৃত ভূখণ্ডের (ইসরায়েল) কোনো স্থান আর নিরাপদ নয়।

১০. ইরানের বেশ কয়েকটি নতুন প্রজন্মের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এখনো ব্যবহার করা হয়নি। ফলে ভবিষ্যতেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চমকে দেওয়ার মতো হামলা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।