ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

বিদায় ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পাল্টে দিল মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব–নিকাশ

২০২৫ সালের ১৩ জুন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন উত্তেজনার সূচনা করে। এদিন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনব্যাপী শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘাত শুধু দুই দেশের সামরিক ও কূটনৈতিক সক্ষমতাকে নয়; পুরো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনটিতে ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপট, ক্ষয়ক্ষতি, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

বিদায়ী ২০২৫ সালের জুনকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা আর সাধারণ কোনো মাস হিসেবে দেখেন না। এ মাসেরই মাঝামাঝি (১৩ জুন) প্রথমবারের মতো ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের ভূখণ্ডে সরাসরি, প্রকাশ্য এবং পূর্ণমাত্রার সামরিক আঘাত হানে। এতদিন যে সংঘাত ছিল ছায়ার আড়ালে, প্রক্সির মাধ্যমে কিংবা ‘অস্বীকারের’ পর্দার ভেতরে—সেটিই হঠাৎ রূপ নেয় প্রকাশ্য যুদ্ধে।

মাত্র ১২ দিনের এ সংঘর্ষে কোনো দেশ দখল হয়নি, কোনো সরকারেরও পতন ঘটেনি। কিন্তু এ সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাসংক্রান্ত ধারণা ও আগাম হামলার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরির পাশাপাশি আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যকে এ সংঘাত এমনভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে; যার প্রভাব টের পাওয়া যাবে আরও বহু বছর। এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সংঘর্ষ শুরুর আগে কয়েক মাস ধরেই ইরান–ইসরায়েল সম্পর্ক ছিল অস্বাভাবিক রকমের উত্তপ্ত। গাজা যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া তখনো অঞ্চলজুড়ে। লেবাননের সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের নিয়মিত গোলাবিনিময়, সিরিয়ায় ইরান–সমর্থিত লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের বিমান হামলা—সব মিলিয়ে একধরনের নিয়ন্ত্রিত অস্থিরতা চলছিল।

ইসরায়েলি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ইরান নীরব থাকবে না। প্রথমে আসে রাজনৈতিক ভাষ্য। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কার্যালয় থেকে বলা হয়, এ হামলা ‘জবাবহীন থাকবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও বলেন, ইরান আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।

ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই বলছিল, তারা আর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘রেড লাইন’ (চূড়ান্ত সীমা) পার হতে দেবে না। তেহরানও জোর দিয়ে বলছিল, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং তারা যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত।

এ সময়েই ইরানের ভেতরের বাস্তবতা ছিল দ্বন্দ্ব–সংঘাতপূর্ণ। একদিকে দেশটি অর্থনৈতিক চাপ, পানির সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সামাজিক অসন্তোষে জর্জরিত। অন্যদিকে, বিদেশি হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় বয়ানে বারবার ‘প্রতিরোধ’ ও ‘জাতীয় মর্যাদা’র কথা উচ্চারিত হচ্ছিল। এ দ্বৈত বাস্তবতার ভেতরই দেশটি ঢুকে পড়ে এক অনিবার্য সংঘর্ষের দিকে।

তেহরানে ইসরায়েলের হামলার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস ও সাধারণ জনগণ। তেহরান, ১৩ জুন, ২০২৫

আকাশ ‘ফেটে পড়ে’

১৩ জুন ভোররাত। ইরানের বহু শহরে তখনো নিস্তব্ধতা। হঠাৎ করেই আকাশে শব্দ—ড্রোনের গুঞ্জন, এরপর একের পর এক বিস্ফোরণ। কয়েক মিনিটে স্পষ্ট হয়ে যায়, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা নয়; এটি একটি সমন্বিত, পরিকল্পিত আঘাত।

ইসরায়েল তাদের এ আগ্রাসনের নাম দেয়, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। লক্ষ্যবস্তু ছিল, ইরানের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্থাপনাগুলো—নাথাঞ্জ ও ফোরদোর পারমাণবিক কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি, গবেষণাগার এবং কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার আবাসন। আঘাত ছিল দ্রুত, নিখুঁত ও ভয় ধরানো।

ইসরায়েলের তথাকথিত যুক্তি ছিল স্পষ্ট, এটি আগাম ‘আত্মরক্ষা’। তাদের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। হুমকি ঠেকাতে এ হামলা চালিয়েছে তারা।

কিন্তু এ দাবি সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্নের মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা বিশ্লেষণ বলছিল, ইরান তখনো অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছায়নি। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, ভবিষ্যতের আশঙ্কা কি এ হামলার বৈধতা দিতে পারে?

আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে, যেকোনো দেশ আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। কিন্তু সেই অধিকার সীমিত ও প্রমাণিত। তাত্ক্ষণিক হুমকি ছাড়া আগাম হামলা চালানো যাবে না।

তেহরানের জবাব: নীরবতা নয়, প্রতিশোধ

ইসরায়েলি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ইরান নীরব থাকবে না। প্রথমে আসে রাজনৈতিক ভাষ্য। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কার্যালয় থেকে বলা হয়, এ হামলা ‘জবাবহীন থাকবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও বলেন, ইরান আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে।

এরপর আসে বাস্তব জবাব। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুটে যায় ইসরায়েলের দিকে। সতর্কতা সাইরেন বাজে তেল আবিব, হাইফা ও আশপাশের এলাকায়। মানুষ ছুটতে শুরু করে আশ্রয়কেন্দ্রে। এ পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহত হন ২৮ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সামরিক অবকাঠামোর অংশবিশেষ।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের একটি বিধ্বস্ত ভবন। মধ্য ইসরায়েল, ১৫ জুন, ২০২৫

এটি ছিল ইরানের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা—তারা আঘাত সইবে, কিন্তু একতরফা নয়। শুরু হয় ১২ দিনের এক সংঘর্ষ; যাকে অনেক বিশ্লেষক বলেন ‘নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ’। কোনো পক্ষই সর্বশক্তি প্রয়োগ করেনি, কিন্তু প্রতিদিন ছিল উত্তেজনা চরমে।

ইরানে নিহত হন অন্তত ৯৭৪ জন। তাঁদের মধ্যে সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সদস্য, বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন। ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শহরগুলোর ওপর চাপ বাড়ে, হাসপাতালগুলোতে ভিড়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়।

ইসরায়েলেও এ হামলার অভিঘাত ছিল অপ্রত্যাশিতভাবে বড়। দেশটির অভ্যন্তরে অনেকেই স্বীকার করেন, ১২ দিনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি গত দুই বছরে হামাস বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষের মোট ক্ষতির চেয়েও বেশি ছিল।

এ সংঘর্ষ দেখিয়ে দেয়—দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের এ যুগে ভৌগোলিক দূরত্ব আর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বলে কিছু নেই।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও প্রাথমিক ক্ষতি

ইসরায়েলি হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো। নাথাঞ্জ ও ফোরদো কেন্দ্রগুলোতে আঘাত পাওয়া অবকাঠামোর মধ্যে ছিল সমন্বিত পরীক্ষাগার, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইউনিট এবং গবেষণাকেন্দ্র। হামলার প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে জানা যায়, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির তাৎক্ষণিক ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে স্থগিত হয়নি।

তবে বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেছেন, এমন হামলা ইরানের গবেষকদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক হামলা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রেরণা জুগিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন আরও গোপন ও সুরক্ষিত হয়ে গেছে এবং তা ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুনভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক সীমাবদ্ধতা

সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জোর দিয়ে বলেছিল, তারা ইরানের ‘মূল প্রাণকেন্দ্র’ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকেরা দেখছেন, বাস্তবতা ভিন্ন। ইসরায়েলের বিমান হামলা যথেষ্ট প্রভাব ফেললেও, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক ছিল না। ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনা ও পারমাণবিক কর্মীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেকটাই বাঁচানো গেছে।

ফলে ইসরায়েলের জন্য সামরিক সাফল্য থাকলেও রাজনৈতিক ও কৌশলগত জয় সীমিতই। ইসরায়েলি নেতৃত্বও বুঝতে পেরেছে, সরাসরি আক্রমণে স্বল্পকালীন প্রভাব পড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি ইরানকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

এদিকে ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছিল, তারা ইসরায়েলের ‘সুরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে। কিন্তু জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র এ সংঘাতে সরাসরি অংশ নেয়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ ইরানের কূটনৈতিক মনোভাবকে আরও কঠোর করেছে। তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ‘আমাদের আঞ্চলিক স্বাধিকার রক্ষার বিকল্প নেই। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে আগ্রহী নই।’

আঞ্চলিক শক্তির নজর

এ সংঘাত শুধু ইরান–ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক ও কাতার—গুরুত্বপূর্ণ সব আঞ্চলিক শক্তি সংকটের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল।

সৌদি মন্ত্রিপরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য। কিন্তু প্রতিটি আঞ্চলিক শক্তি নিজস্ব সুরক্ষাব্যবস্থা বজায় রাখবে।’

এমন অবস্থানের কারণে ওই সংঘাতের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়। কোনো আঞ্চলিক শক্তিই সংঘাতে সরাসরি অংশ নেয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক চাপ, হুমকি ও কূটনৈতিক মধ্যস্থতা চলছিল জোরেশোরে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিজ্ঞানীরা মন্তব্য করেছেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের গবেষকদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক হামলা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রেরণা জুগিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখন আরও গোপন ও সুরক্ষিত হয়ে গেছে এবং তা ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুনভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও আগাম হামলার বিতর্ক

বিশ্ববাসীর নজর তখন আন্তর্জাতিক আইনের দিকে। ইসরায়েলের ‘আগাম হামলা’র নীতি কি বৈধ? এ প্রশ্নে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জড়িয়ে পড়ে বিতর্কে।

আইনি বিশ্লেষকেরা ব্যাখ্যা করেন, আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে, যেকোনো দেশ আত্মরক্ষার অধিকার রাখে। কিন্তু সেই অধিকার সীমিত ও প্রমাণিত। তাত্ক্ষণিক হুমকি ছাড়া আগাম হামলা চালানো যাবে না।

বিশ্বের বহু দেশ এ পরিস্থিতিতে দুপক্ষেরই সমালোচনা করেছে। বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ বলেছে, আগাম হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দিয়েছে।

এই বিতর্ক শুধু আইনগত নয়, নৈতিকও। কতটা সম্ভাব্য হুমকি যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েলের যুক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য, আর কতটা কৌশলগত আগ্রাসন—এ এক অমীমাংসিত প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

সংঘাতের মানবিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

ইরান–ইসরায়েল সংঘাত মাত্র ১২ দিনের হলেও এর মানবিক ক্ষতি ছিল ভয়াবহ। ইরানে নিহত ৯৭৪ জনের মধ্যে ২৩০টিই ছিল শিশু। আহত হন বহু মানুষ। হাসপাতালগুলোতে তীব্র চাপ তৈরি হয়। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহে ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়।

ইসরায়েলে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম—২৮ জন। কিন্তু আতঙ্ক, মানসিক চাপ ও অবকাঠামোগত ক্ষতি বিপুল। তেল শোধনাগার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পরিবহন নেটওয়ার্ক আংশিকভাবে নষ্ট হয়।

এমন সংখ্যার আড়ালে, দুই দেশেই মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়। বন্ধ হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুলগুলো। আন্তর্জাতিক সাহায্য ও মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমও হয়ে পড়ে সীমিত।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে বলতে হয়, চির বৈরী ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত শেষ হলেও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরেনি। ওই সংঘাত শুধু ধ্বংস ডেকে আনল না, উভয় দেশের মধ্যে দূরত্ব ও শত্রুতা আরও বাড়াল, আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিকতার প্রশ্নকে জটিল করল।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এখন তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠনে গভীর মনোনিবেশ করবে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে আরও গোপন ও শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে।

আঞ্চলিক শক্তিগুলোও তাদের কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করবে। সৌদি আরব, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত—সবাই যুদ্ধের সম্ভাব্য বিস্তার ও কূটনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকবে।

{তথ্যসূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, আল–জাজিরা, মিডল ইস্ট আই ও দ্য জেরুজালেম পোস্ট}