ইরানে বিক্ষোভে নিহত বেড়ে ৭৬: আইএইচআর
ইরানে পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৬ জন নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের দমন অভিযানে তাঁরা নিহত হন। গতকাল সোমবার অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) এসব তথ্য দিয়েছে। খবর এএফপির।
আইএইচআর আগে ৫৭ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু গতকাল তারা এ সংখ্যা বাড়িয়ে হালনাগাদ করে।
তবে ইরানের কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হওয়ার কথা বলেছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক সদস্য আছেন বলে তারা উল্লেখ করেছে।
Also Read: ইরানের ‘নীতি পুলিশ’ কারা, তাদের কাজ কী
ইরানের কর্মকর্তারা গতকাল বলেন, বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘যথাযথ নিয়ম’ মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে ১৩ সেপ্টেম্বর মাসাকে তেহরানে আটক করে ‘নীতি পুলিশ’। আটকের পর পুলিশি হেফাজতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তেহরানের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মাসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
রাজধানী তেহরানসহ দেশটির বিভিন্ন এলাকার সড়কে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।
তেহরানে বিক্ষোভকারীরা ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির পতন চেয়ে স্লোগান দিয়েছেন। স্লোগানে স্লোগানে তাঁরা বলেছেন, ‘স্বৈরশাসক নিপাত যাক’।
বিক্ষোভের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে আইএইচআর। ছবিতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার পরও বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নরওয়েভিত্তিক কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সানন্দাজ এলাকায় নারীরা হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গাড়ি চালকেরা হর্ন বাজাচ্ছেন।
বিক্ষোভে উসকানির অভিযোগে ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইরান। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এদিকে, ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে জার্মানি। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোগাদ্দাম বলেন, বিক্ষোভকারীদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধে দ্ব্যর্থহীন ও ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
মাহমুদ আমিরি আরও বলেন, যেসব ভিডিও ফুটেজ ও মৃত্যুসনদ আইএইচআরের হাতে এসেছে, তাতে প্রতীয়মান হয়, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি ছোড়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে। পুলিশের গাড়ি ও সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে।
ইরানের কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় মাজান্দারান প্রদেশে প্রায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেশী গিলানে গত শনিবার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকায় আরও কিছু বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ সাংবাদিক।