ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্য দেশের নেতারা স্বাক্ষর করেছেন। আজ মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে সবার আগে ট্রাম্প নথিতে স্বাক্ষর করেন।
ট্রাম্পের পর মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং কাতারের আমির শেখ তামিমসহ অন্য বিশ্ব নেতারা নথিতে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষরিত নথি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, ‘এটি [যুদ্ধবিরতি] কার্যকর থাকবে।’
স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ ট্রাম্প বলেন, তিনি শান্তি সম্মেলনে ভাষণ দেবে এবং পার্শ্ব বৈঠকে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এর আগে গত শুক্রবার ইসরায়েল ও হামাস ট্রাম্পের ২০ দফা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। আজ এরই মধ্যে হামাস ২০ জন জীবিত জিম্মি ও কয়েকজন জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েলও প্রায় দু হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।
গাজায় মুক্তি পাওয়া সাত ইসরায়েলি জিম্মির নাম জানা গেছে। আজ স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে আটক অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
সাতজনকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস।
জিম্মি ও নিঁখোজ পরিবারগুলোর সংগঠনের তথ্যমতে, মুক্তি পাওয়া জিম্মিরা হলেন—গালি বারমান, জিভ বারমান, এইটান আব্রাহাম মর, ওমরি মিরান, মাতান আংগ্রেস্ট, আলোন ওহেল, গাই গিলবোয়া-ডালাল।
হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া সাতজন ইসরায়েলি জিম্মিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গ্রহণ করেছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
জর্ডানের আম্মান থেকে আল-জাজিরা প্রতিবেদক নুর ওদেহ বলেন, জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের অবস্থা মোটামুটি ভালো বলে জানা গেছে। তাঁরা হাঁটতে পারছেন। চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েল ১২ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দিয়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফেরত পাঠানোর কথা থাকলেও এখন তাদের নির্বাসিত করা হবে বলা জানানো হচ্ছে। গতকাল রোববার রাতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বন্দীদের পরিবারের সদস্যদের এই পরিবর্তনের কথা জানানো হয়েছে।
আল–জাজিরার সাংবাদিক নুর ওদে জর্ডান থেকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আল–জাজিরার সাংবাদিক আরও বলেন, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের নির্বাসিত করার কথা আগেই জানতে পেরেছিলেন, তাঁরা গতকাল অধিকৃত পশ্চিম তীর ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনুমতি দেয়নি। এই মুহূর্তে সেখানে একটি আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আল–জাজিরা সাংবাদিক জানান, ইসরায়েল কখন গাজার ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে, তা নিয়েও ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে টেলিভিশনে জিম্মিদের মুক্তির দৃশ্য দেখছেন। তাঁর প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট এ তথ্য জানিয়েছেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে ওয়াশিংটন থেকে দীর্ঘ ফ্লাইট শেষে শিগগিরই ইসরায়েলে অবতরণ করবেন ট্রাম্প।
গাজা থেকে প্রথম ধাপে মুক্তি পাওয়া সাত জিম্মি ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনাবাহিনী বলেছে, মুক্তি পাওয়া সাত জিম্মি কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েল সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। তাঁরা বর্তমানে দক্ষিণ ইসরায়েলের প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্রে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবেন।
গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত সাতজন ইসরায়েলে প্রবেশ করেছেন। এরই মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ট্রাম্পের সরকারি উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান তেল আবিবের উপকণ্ঠে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। এ সময় সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, তাঁর স্ত্রী সারা, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং তার স্ত্রী ও ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প।
তেল আবিবে বিমানবন্দরে অবতরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ভাষণ দেবেন এবং জিম্মিদের কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এরপর গাজা শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে মিসরের অবকাযাপনকেন্দ্র শারম এল-শেখের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন ট্রাম্প। ওই সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারসহ প্রায় ২০ জন বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন।
গাজা থেকে দ্বিতীয় ধাপে ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। তাঁরা বর্তমানে ইসরায়েলের পথে আছেন। বিবিসির এ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় প্রথম ধাপে ৭ জিম্মিকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা ইতিমধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবারগুলোর সংগঠনের তথ্যমতে, মুক্তি পাওয়া জিম্মিরা হলেন—গালি বারমান, জিভ বারমান, এইটান আব্রাহাম মর, ওমরি মিরান, মাতান আংগ্রেস্ট, আলোন ওহেল, গাই গিলবোয়া-ডালাল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, হামাস গাজায় যে ‘নতুন করে অস্ত্রসজ্জিত’ হচ্ছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র জানে। তিনি দাবি করেন, গোষ্ঠীটিকে ‘সাময়িক সময়ের জন্য’ সশস্ত্র থাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসরায়েলে পৌঁছানোর আগে এয়ারফোর্স ওয়ানে এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, হামাস ‘নতুন করে অস্ত্রসজ্জিত’ হচ্ছে এবং নিজেদের ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, কয়েক মাসের যুদ্ধের পর গোষ্ঠীটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা (হামাস) এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছে এবং আমরা তাদের কিছু সময়ের জন্য সশস্ত্র থাকার অনুমোদন দিয়েছি।’ তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে, তারা সম্ভবত ৬০ হাজার মানুষ হারিয়েছে। এটি এক বিশাল ক্ষতি।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অন্তত ২০ হাজার শিশুসহ ৬৭ হাজার বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায়, নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে আসা গাজায় বাসিন্দারা যেন নিরাপদে পুনর্গঠন কাজ করতে পারেন। তিনি গাজাকে ‘আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসস্তূপ’ বলে উল্লেখ করে বলেন, মানুষ নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে আসার সময় ‘অনেক খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে’।
হামাসের অস্ত্র ত্যাগের সময়সীমা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখন ও কীভাবে তাদের যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ করা হবে, তা নিয়ে আলোচকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার শর্ত মেনে ইসরায়েলের জীবিত ২০ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন। আজ সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার পর থেকে দুই ধাপে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) দুই ধাপে জিম্মি মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে হামাস প্রথম ধাপের জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় সবশেষ ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন বেঁচে ছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, মুক্তি পাওয়া সব জিম্মি গাজা থেকে ইসরায়েলের ফিরে এসেছে।
জীবিত ২০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তির এর এবার ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা কিছু ফিলিস্তিনিকে নিয়ে একটি বাস ইতিমধ্যে গাজায় পৌঁছেছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের বহনকারী আরও কিছু বাস গাজার দিকে যাত্রা করেছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
আজ সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে শুরু করে হামাস। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জীবিত সব জিম্মিকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে এখনো পর্যন্ত কতজন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন, তা জানা যায়নি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ সোমবার মিসরের শারম আল-শেখে ‘গাজা শান্তি সম্মেলনে’ অংশ নেবেন না। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আজ মিসরে আয়োজিত একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের আমন্ত্রণের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, ছুটির শুরুর আগ মুহূর্তের কারণে তিনি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এর আগে আজ সকালে হোয়াইট হাউস এবং মিসরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছিল, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের স্পিকার আমির ওহানা আজ সোমবার বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছাড়া আর কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য যোগ্য নয়। ইসরায়েল আগামী বছর ট্রাম্পকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। খবর সিএনএনের।
পার্লামেন্ট অধিবেশনে ওহানা ইসরায়েলকে সহায়তার জন্য ট্রাম্পের প্রতি বারবার ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধে সহায়তা এবং ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
ওহানা বলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, হাজার বছর ধরে ইহুদি জনগণ আপনাকে স্মরণ করবে। আমরা এমন একটি জাতি, যারা মনে রাখে। এই পৃথিবীতে এমন আর কোনো মানুষ নেই, যিনি আপনার চেয়ে বেশি শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেট ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর ভাষণ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, আজ সোমবার ট্রাম্প ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরায়েলের পার্লামেন্টে কিছুটা হট্টগোল দেখা গিয়েছিল। এতে ট্রাম্প তার ভাষণ থামাতে বাধ্য হয়েছেন।
একপর্যায়ে নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত এক ব্যক্তির কাছে এগিয়ে যায় এবং তাঁকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পার্লামেন্টে ভাষণ শুরুর আগে বলেন, ‘কাজটা খুব দক্ষতার সঙ্গে হয়েছে।’
নেসেটে ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আজ একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ‘ঐতিহাসিক ভোর’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানান। তিনি তাঁকে ‘অসাধারণ সাহসী একজন মানুষ’ বলে অভিহিত করেন।
এ সময় পার্লামেন্টে উপস্থিত সদস্যদের অনেকে নেতানিয়াহুর ডাকনাম ‘বিবি’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে আলোচনায় সহায়তাকারী আরব দেশগুলোকেও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তাদের একসঙ্গে কাজ করাটা ‘অবিশ্বাস্য এক বিজয়’।
ট্রাম্প আরও বলেন, এখন ইসরায়েলের ‘স্বর্ণযুগ আসবে’ এবং এটি সমগ্র অঞ্চলের জন্যও ‘স্বর্ণযুগ’ হবে।
ইসরায়েলের পার্লামেন্টের ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের সঙ্গে যদি কোনো শান্তি চুক্তি সম্ভব হয়, তবে তা দারুণ হবে। ‘ইরানের জনগণ বাঁচতে চায়’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলছে। পশ্চিমাদের দাবি, ইরান পারমাণবিক বোমা বানানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। কিন্তু ইরান বারবার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। তারা অন্যান্য দেশের মতো শান্তিপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করতে চায়।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ), যা সংক্ষেপে ইরান পরমাণু চুক্তি নামে পরিচিত। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
চুক্তি করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যায়। ফলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চুক্তিটি নবায়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তেহরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির চেষ্টা করছেন। দেশ দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ওমান ও ইতালিতে কয়েক দফায় অপ্রত্যক্ষ বৈঠকও হয়েছে।
কিন্তু গত জুনে ইসরায়েলের হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানে বিমান হামলা চালায়। মূলত দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এরপর থেকে ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা বন্ধ রয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় মূলত গাজা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
বিভিন্ন আরব দেশের সাংবাদিকদের লাভরভ বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় শুধু গাজা উপত্যকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বলে সাধারণ কিছু কথা বলা হয়েছে।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘[ফিলিস্তিন রাষ্ট্র-সংক্রান্ত] দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ থাকা খুব জরুরি। বিশেষত পশ্চিম তীরের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা স্পষ্ট করা প্রয়োজন।’
লাভরভের বক্তব্যে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে মস্কোর মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে লাভরভের আশা, ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হবে।
সূত্র: আল জাজিরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আজ ইসরায়েলের পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় দেশটির দুই এমপি ‘ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিন!’ লেখা সংবলিত একটি কাগজ উঁচিয়ে ধরেছিলেন। এতে করে ট্রাম্পের বক্তৃতা সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ওই দুই এমপিকে পার্লামেন্ট ভবন থেকে দ্রুত বের করে নিয়ে যান। দুই এমপির হাতে থাকা কাগজ ছিনিয়ে নেন।
এই দুই এমপির নাম হলো আইমান ওদেহ ও ওফের কাসিফ। দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, ওদেহ ‘হাদাশ-তাল’ পার্টির চেয়ারম্যান। এটি মূলত আরব-ইসরায়েলিদের একটি দল। আর কাসিফ দলটির একমাত্র ইহুদি এমপি।
মিডল ইস্ট আই জানায়, পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক্সে এক পোস্টে ওদেহ লিখেছেন, ‘তাদের কাছে আমার একটি মাত্রা অপরাধ। আমি এমন একটি সহজ দাবি তুলেছি, যা সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নিয়েছে। তা হলো— ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এই সহজ সত্য স্বীকার করতে বলায় আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
কাসিফও পার্লামেন্টে একই কাগজ উঁচিয়ে ধরেছিলেন। পরে তিনি এক্সে এক পোস্ট লিখেছেন, ‘আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আসিনি। আমরা ন্যায়ের দাবি দাবি নিয়ে এসেছিলাম। অবরোধ ও বর্ণবাদী শাসনের অবসান এবং ইসরায়েলের পাশে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল প্রকৃত শান্তি সম্ভব। দখলদারি হতে অস্বীকার কর! রক্তপাতে আগ্রহী সরকারকে প্রতিহত কর!’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধের সময় আমার কাছে প্রায় সময় অস্ত্র সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি কখনো কখনো এমন কিছু ‘অস্ত্রের জন্যও অনুরোধ করেছিলেন, যার নামও আমি কখনো শুনিনি।’ আজ ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করেন।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র দুই বছরের যুদ্ধে ইসরায়েলকে প্রায় ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার সমমূল্যের সামরিক সহায়তা দিয়েছেন। একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা এবং সামরিক অভিযান বাবদ অতিরিক্ত প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করেছে পেন্টাগন।
দুই বছরের গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলে হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ১০৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু ২০ হাজারের বেশি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছিল। হামাস জিম্মি করে গাজায় নিয়ে এসেছিল প্রায় ২০০ জনকে।
মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার গত বুধবার (৮ অক্টোবর) মিসরের শারম আল-শেখে হামাসের শীর্ষ নেতা, বিশেষ করে খালিল আল-হায়ার সঙ্গে বিরল এক বৈঠক করেছেন। ফিলিস্তিনি আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, এই বৈঠকই গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পরদিন বৃহস্পতিবার ইসরায়েল, হামাস ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা চুক্তিতে সই করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় জাতিগত নিধন বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
হামাস নেতাদের শঙ্কা ছিল, জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল আবার গাজায় হামলা শুরু করতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত উইটকফ এবং কুশনার হামাস নেতাদের সঙ্গে এক বিরল বৈঠক করতে মিসরে উড়ে যান। ওই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ করা।
মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে হামাসের এই বৈঠকের খবর প্রথম প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস। তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়, উইটকফ কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের বলেছেন, ট্রাম্প নিজেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা উইটকফের ভিলা (ফোর সিজনস হোটেলে) গিয়ে জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। তাঁরা প্রস্তাব দেন, মার্কিন দূতরা যেন সরাসরি হামাস নেতাদের সঙ্গে বসেন।
পরে উইটকফ ও কুশনার আরেকটি ভিলায় যান যেখানে তুরস্ক ও মিসরের গোয়েন্দা প্রধান, কাতারের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং হামাসের চারজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন হায়া। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
প্রায় ৪০ মিনিটের আলোচনায় উইটকফ হামাস নেতাদের বলেন, গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দীরা এখন আর ‘সম্পদ নয়, বরং বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে’। তাই প্রথম ধাপের চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে এবং ‘সীমান্তের দুই পাশের মানুষকে ঘরে ফেরানো দরকার।’
হায়া জানতে চান, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে হামাসের জন্য কোনো বার্তা আছে কি না। জবাবে উইটকফ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বার্তা হলো, আপনাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে। তিনি তাঁর শান্তি পরিকল্পনার ২০টি শর্তের সব মানার পক্ষে আছেন এবং সেগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।’
বৈঠক শেষে হামাস নেতারা মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলাদা কক্ষে আলোচনা করেন। কিছুক্ষণ পর মিসরের গোয়েন্দা প্রধান হাসান রাশাদ তুর্কি ও কাতারি কর্মকর্তাদের নিয়ে ফিরে এসে উইটকফ ও কুশনারকে বলেন, ‘আমাদের বৈঠকের ভিত্তিতে চুক্তি হয়ে গেছে।’
ট্রাম্প প্রশাসন ও হামাসের মধ্যে ওই বৈঠক ছিল দ্বিতীয় বড় ধরনের সরাসরি যোগাযোগ। এর আগে গত মার্চে মার্কিন জিম্মি অ্যাডান আলেকসান্ডারকে মুক্ত করতে মার্কিন দূত অ্যাডাম বোয়েলার হামাস নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনি বন্দীর পরিবার বলছে, বহু প্রতীক্ষিত এই মুক্তি তাঁদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দ ও কষ্টের। কারণ, তাঁরা জানতে পেরেছেন, তাঁদের প্রিয়জনদের তৃতীয় কোনো দেশে নির্বাসিত করা হবে।
ফিলিস্তিনি প্রিজনার্স মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবার বন্দী বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েল নির্বাসনে যেতে বাধ্য করবে।
যাঁদের নির্বাসিত করা হচ্ছে, তাঁরা ইসরায়েলের মুক্তি দেওয়া ফিলিস্তিনের বৃহত্তর একটি দলের অংশ। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৫০ এবং গত দুই বছরে গাজা থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘের মতে, এঁদের মধ্যে অনেককে ‘গুম’ করা হয়েছিল।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী আজ সোমবার ২০ জন ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে।
মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পাঠানো হবে, সে সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে গত জানুয়ারিতে বন্দী মুক্তির সময় কয়েক ডজন বন্দীকে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ যেমন তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া ও তুরস্কে নির্বাসিত করা হয়েছিল।
পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এই জোরপূর্বক নির্বাসন মুক্তি পাওয়া বন্দীদের নাগরিকত্বের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। এটি বন্দী বিনিময় চুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিমুখী নীতির প্রমাণ।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের পাবলিক পলিসির সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমুত আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ যে অবৈধ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘শান্তি সম্মেলনে’ জন্য মিসরে পৌঁছেছেন। তাঁকে বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে ট্রাম্প ও সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। সম্মেলনে বিশ্বের ২০টির বেশি দেশের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তবে এতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা হামাসের কোনো প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন না।
আলোচিত এই শান্তি সম্মেলনে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গত শুক্রবার যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, তাতে ট্রাম্প সই করবেন।
সিসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প বলেন, হামাসের সঙ্গে দর-কষাকষির বিষয়ে মিসর ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় তাঁর (সিসির) পাশে থাকবে।
ট্রাম্প ইসরায়েল থেকে মিসরে গেছেন। ইসরায়েলে তিনি দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যতটা জানি, আলোচনার দ্বিতীয় শুরু হয়ে গেছে। আপনারা জানেন, ধাপগুলো একটি অপরটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে ট্রাম্প মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন। এরপর তাঁরা গাজা যুদ্ধ বন্ধে আয়োজিত ‘শান্তি সম্মেলনে’ অংশ নেবেন।
সম্মেলনে ট্রাম্প ও সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন। এতে বিশ্বের ২০টির বেশি দেশের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা হামাসের কোনো প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।
এর আগে আজ ইসরায়েল থেকে মিসরে পৌঁছালে ট্রাম্পকে বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান সিসি।
মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে আয়োজিত আজকের ‘শান্তি সম্মেলনে’ ২৮টি দেশ ও তিনটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। গাজা যুদ্ধ বন্ধে এই সম্মেলনে আয়োজন করা হলেও এতে ইসরায়েল ও হামাসের কোনো প্রতিনিধি থাকছেন না।
আল জাজিরা জানায়, অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে উত্তর আমেরিকার রয়েছে দুটি— যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ রয়েছে ১০টি— বাহরাইন, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, ফিলিস্তিনি, কাতার, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
ইউরোপের রয়েছে ১০টি দেশ— সাইপ্রাস, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইতালি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং যুক্তরাজ্য।
এশিয়ার রয়েছে ছয়টি দেশ—আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান এবং পাকিস্তান।
আন্তর্জাতিক তিন সংগঠন হলো— ইউরোপীয় কাউন্সিল, আরব লীগ এবং জাতিসংঘ।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিরা শারম আল শেখে পৌঁছেছেন।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি গাজায় যুদ্ধবিরতিকে ‘বড় অর্জন’ মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ট্রাম্পই ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।’
মিসরের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের নাগরিক ও বিশ্বে সব ‘শান্তিপ্রিয় মানুষের’ পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান।
সিসি বলেন, এখন গাজায় যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখাই মূল কাজ।
আল জাজিরা জানায়, সিসির বক্তব্য শেষ হলে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি একজন ভালো মানুষ। আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে আছি। তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ জন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ।’
সিসিকে শক্তিশালী নেতা মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, তিনি মিসরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
গাজা যুদ্ধবিরতি অসাধারণভাবে কার্যকর হচ্ছে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এ পর্যায়ে পৌঁছাতে ৫০০ থেকে ৩ হাজার বছর লেগেছে।’ মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ‘শান্তি সম্মেলনে’ যুদ্ধবিরতির নথিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি নথিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি, যাতে অনেক নিয়ম, বিধি-বিধান এবং অন্য বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এটি খুবই বিস্তৃত।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ‘অসাধারণভাবে কার্যকর হচ্ছে।’
আল জাজিরা জানায়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির পাশে বসে কথা বলছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সবাই বলেছিল, এটা সম্ভব নয়, কিন্তু এটি ঘটছে। আপনার চোখের সামনেই এটি ঘটছে।’
গাজা যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকায় রাখায় মিসর, কাতার এবং তুরস্কসহ সংশ্লিষ্ট আরব ও মুসলিম দেশের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে চলমান ‘শান্তি সম্মেলনে’ এসব দেশের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সবাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন।
আল জাজিরা জানায়, মিসরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘দ্য অনার অব দ্য নীল’ দেওয়ায় দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিকে ধন্যবাদ দেন ট্রাম্প।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ‘বিশেষ ধন্যবাদ’ দেন। কাতারের নেতা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁর একটি অসাধারণ হৃদয় আছে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘যখন আমার দরকার, তখন তাঁকে সব সময় কাছে পাই।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তিনি [এরদোয়ান] যতটা পারেন কঠোর হন। কিন্তু আমরা তাঁকে ভালোবাসি।’
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুলআজিজ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ আরও কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ো আয়োজিত ‘শান্তি সম্মেলনে’ বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এই মনোনয়ন দেন।
শাহবাজ শরিফ বলেন, ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধ করেছেন। এ জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধনের (জেনোসাইড) কথা জাতিসংঘও স্বীকার করেছে বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
মিডল ইস্ট আই জানায়, এর আগে গত জুন মাসে পাকিস্তান-ভারতের চার দিনের পাল্টাপাল্টি হামলা থামাতে ভূমিকা রাখার কারণেও ট্রাম্পকে একবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন শাহবাজ শরিফ। তাঁর সেই সিদ্ধান্ত পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।