
হলুদ সীমারেখায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থাকলেও যুদ্ধবিরতি চলাকালে তাঁরা সেখানে যেতে পারছেন না।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে হলুদ রেখা ক্রমেই স্থায়ী রূপ নিচ্ছে বলে উঠে এসেছে।
গাজার অর্ধেকের বেশি ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ক্রমে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনারা ‘হলুদ সীমারেখা’র নামে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে সামরিক চৌকি স্থাপন করছে। ফিলিস্তিনিদের এই সীমারেখা পেরোনো নিষেধ। ফলে সেখানে বাড়িঘর থাকলেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরে তাঁরা সেখানে যেতে পারছেন না। এমন অবস্থায় সীমারেখাটি স্থায়ী রূপ নিতে যাচ্ছে। এতে গাজার অর্ধেকের বেশি ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে ৯ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সই করেন। এরপর গাজায় হলুদ সীমারেখা তৈরি করে দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা। মূলত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা চিহ্নিত করতে প্রতি ২০০ মিটার অন্তর হলুদ সীমা বসায় তারা।
রেখাটি গাজাকে কার্যত প্রায় দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। এর পশ্চিম অংশ থেকে ইসরায়েলি সেনা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে হামাস আবারও সেখানে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তবে গাজার বাকি অর্ধেক অংশে ইসরায়েলি সেনারা অসংখ্য সামরিক চৌকি স্থাপন করেছে। যে কেউ সেই হলুদ রেখার কাছাকাছি গেলেই গুলি চালাচ্ছে। সেখানে হলুদ রেখা দেখা যাক বা না যাক।
ইসরায়েলি সেনানিয়ন্ত্রিত এমন একটি এলাকা গাজার খান ইউনিসের উত্তরে আল-কারায়া। সেখানকার বাসিন্দা মোহাম্মদ খালেদ আবু আল-হুসাইন। হলুদ সীমারেখার পূর্ব দিকে তাঁদের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই বাড়ির কাছাকাছি যাই, চারদিক থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়। কখনো কখনো ছোট ছোট ড্রোন মাথার ওপর ওড়ে, আমাদের প্রতিটি নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করে। মনে হয়, যুদ্ধ যেন আমার জন্য এখনো শেষ হয়নি। যুদ্ধবিরতির অর্থই বা কী, যদি আমি এখনো আমার ঘরে ফিরতে না পারি?’
গত রোববার ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা গাজার নিরাপত্তার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের জানিয়েছেন, কখন ও কোথায় শত্রুদের ওপর হামলা চালানো হবে, ইসরায়েল নিজেই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরেও প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। অনেকেই হলুদ রেখার কাছাকাছি নিহত হয়েছেন। ফলে খুব কম বাস্তুচ্যুতই ফিলিস্তিনি নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে এই হলুদ রেখা ক্রমে স্থায়ী রূপ নিচ্ছে বলে উঠে এসেছে। ইসরায়েলের পশ্চিম নেগেভের এলাকার আয়তন বাড়বে। এই সুযোগে সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। তারা এটিকে ‘নতুন সীমান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইয়েদিওথ আহারোনথ সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে প্রতিবেদক ইয়োয়াভ জিতুন লিখেছেন, হলুদ রেখা একটি বড় ও আধুনিক দেয়ালে রূপ নিতে পারে; যা গাজা উপত্যকাকে সংকুচিত করে ফেলবে।
উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাদের গাজার একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হবে, যাকে বলা হচ্ছে ‘হলুদ সীমারেখা’। এই সীমারেখা পর্যন্ত প্রত্যাহারের পরেও উপত্যকার ৫৩ শতাংশ এলাকা থাকবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হলুদ সীমারেখা থেকে আরও কয়েক শ মিটার সামনে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় ইসরায়েলি সেনারা এই সীমারেখার বাইরেও গাজার ভূখণ্ড দখলে রেখেছেন।
এদিকে আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভারী যন্ত্রপাতি প্রবেশে ইসরায়েলের বিধিনিষেধ এবং অবিস্ফোরিত বোমার কারণে গাজা নগরীর ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা। এ ছাড়া উপত্যকাজুড়ে হাজার হাজার টনের বেশি অবিস্ফোরিত ইসরায়েলি বোমা মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে গাজা নগরের মেয়র ইয়াহইয়া আল-সারাজ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পানি সরবরাহের নেটওয়ার্ক বজায় রাখা ও কুয়া নির্মাণ করতে গাজা নগরীর জন্য কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যানবাহন ও এক হাজার টন সিমেন্ট প্রয়োজন।