Thank you for trying Sticky AMP!!

এবার শরণার্থীশিবিরে হত্যাযজ্ঞ

গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে দুই দিনে ১৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।

জাবালিয়ার ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুর লাশ কোলে শোকাতুর এক বাবা। গতকাল গাজার রাফায়

ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে চালানো ভয়াবহ হামলার রেশ না কাটতেই এবার ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থীশিবিরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার রাতে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে চালানো হামলায় অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৬ দিনে প্রায় ৮ হাজার ৮০০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

মঙ্গলবার রাতে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে গাজায় আল-জাজিরার ব্যুরো অফিসের সম্প্রচার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু আল-কুমসানের পরিবারের ১৯ সদস্যও রয়েছেন।

Also Read: ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র–ড্রোন হামলার দাবি ইয়েমেনের হুতিদের

এদিকে এ হামলার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই গতকাল বুধবার আবারও জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে এখন সেখানেও একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে।

উত্তর গাজায় ঢুকে পড়া ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধাদের। এতে হামাসের বিভিন্ন স্তরের কয়েক শ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে সেখানে মঙ্গল ও বুধবার ১৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন বলেও স্বীকার করেছে দেশটি। এদিকে ইসরায়েল বলেছে, তারা এ পর্যন্ত হামাসের ১১ হাজার লক্ষ্যস্থলে হামলা চালিয়েছে।

Also Read: খুলেছে রাফাহ ক্রসিং, প্রথমবারের মতো গাজা ছাড়ছেন লোকজন

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত গাজায় ৮ হাজার ৭৯৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৮ জন শিশু আর ২ হাজার ২৯০ জন নারী। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে। এ ছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন ২২ হাজারের বেশি।

হামলায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপে এখনো ২ হাজার ৩০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ২০ জন শিশু। হামলার ব্যাপকতা বাড়ায় জীবিতদের উদ্ধারে এখন জোর দিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।

রোগী ও বিদেশিদের জন্য খুলল রাফাহ ক্রসিং

সীমান্ত পেরিয়ে মিসর যাওয়ার অপেক্ষায় ফিলিস্তিনের দ্বৈত নাগরিকেরা। গতকাল গাজার রাফা ক্রসিংয়ে

গত ৭ অক্টোবর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর এই প্রথম সংকটাপন্ন রোগী ও বিদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য রাফাহ ক্রসিং খুলে দিয়েছে মিসর। প্রথমে রোগীদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে ক্রসিং পার হতে দেখা যায়।

এরপর বিদেশি পাসপোর্টধারীদের একটি দল রাফাহ ক্রসিংয়ে পৌঁছায়। সীমান্তের মিসর অংশে তাঁদের কাগজপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বিদেশি পাসপোর্টধারী ৫০০ জনের একটি তালিকা গাজা কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে।

এ তালিকার মধ্যে জাপান, অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, ইতালি, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থায় কাজ করা বিভিন্ন দেশের নাগরিকও রয়েছেন।

একমাত্র ক্যানসার হাসপাতাল বন্ধ

অবরুদ্ধ গাজার একমাত্র ক্যানসার হাসপাতাল জ্বালানির অভাবে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। টার্কিশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক সোবহি স্কেইক এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। হাসপাতাল বন্ধ করে ক্যানসার রোগীদের নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস। এর আগে দুই দফা ইসরায়েলি বোমা হামলায় হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এদিকে গাজার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফায় আর মাত্র ২৪ ঘণ্টার জ্বালানি আছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জ্বালানির অভাবে ৩৫টি হাসপাতালের ১৬টি বন্ধ রয়েছে। সেবা দেওয়া যাচ্ছে না ৭২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৫১টিতে।

ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১৩০ জন প্যারামেডিক নিহত হয়েছেন। ২৮টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য অবকাঠামোয় ২৭০ বারের বেশি হামলা হয়েছে।

এদিকে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ৯ জন সাংবাদিক হত্যার ঘটনার তদন্ত চেয়ে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আবেদন করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। এই ৯ সাংবাদিকের মধ্যে ৮ জন ফিলিস্তিনি আর ১ জন ইসরায়েলি। আরএসএফের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।