পোষা প্রাণী হিসেবে কোনগুলোকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে মানুষ

পোষা প্রাণী শুধু আমাদের ঘরের সঙ্গীই নয়, এরা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশও। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ বিভিন্ন প্রাণীকে পোষ মানিয়ে আসছে। প্রাচীনকালে রাজপরিবার কিংবা অভিজাত ব্যক্তিরা সিংহ বা চিতা বাঘের মতো হিংস্র প্রাণীকে বাড়িতে পোষ্য হিসেবে রাখতেন।

বর্তমানে পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর-বিড়ালের দেখাই বেশি পাওয়া যায়। প্রথম কবে মানুষ পোষা প্রাণী রাখতে শুরু করেছে, তা স্পষ্টভাবে জানা যায় না। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের বিশ্বাস, প্রায় ৩০ হাজার বছর আগে থেকে মানুষ কুকুরকে পোষা প্রাণী হিসেবে লালন–পালন করে আসছে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পোষা প্রাণীর তালিকা বড় হয়েছে। হাঁস-মুরগি ও কুকুর-বিড়ালের পাশাপাশি এখন মানুষ বিভিন্ন রকম প্রাণী ঘরে লালন–পালন করে। ওয়ার্ল্ড অ্যানিমেল ফাউন্ডেশন ও পেটমোজো ডটকমের আলোকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পোষা প্রাণী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

কুকুর

কুকুর

বিশ্বজুড়ে কুকুর সবচেয়ে জনপ্রিয় পোষা প্রাণী। ইউরোমনিটরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪৭ কোটি ১০ লাখ পোষা কুকুর ছিল। আর ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস বলছে, পুরো পৃথিবীতে কুকুরের সংখ্যা আনুমানিক ৯০ কোটি।

মালিকের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও ভালোবাসা কুকুরকে করে তুলেছে মানুষের সঙ্গী। এ জন্যই ‘মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু’ উপাধি পেয়েছে প্রাণীটি। মানুষের জীবনে কুকুরের ভূমিকা বহুমুখী। পাহারা, খামারের কাজ, অনুসন্ধান, উদ্ধার অভিযান, ক্রীড়াসহ নানা কাজ সহজেই করতে পারে এই প্রাণী। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কুকুরের দুই শতাধিক জাত রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সাধারণ কুকুরের বুদ্ধিমত্তা প্রায় দুই বছর বয়সী শিশুর কাছাকাছি। কুকুর ১৫০টির বেশি শব্দ শিখতে পারে। কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা এক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। কুকুর মানুষের শরীরের ভাষা বুঝতে পারে।

বিড়াল

বিড়াল

অনেকে মনে করেন, বিড়াল প্রথম মানুষের পোষ্য হয়ে উঠে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায়। তবে গবেষকেদের দাবি, প্রায় ১২ হাজার বছর আগে নব্য প্রস্তর যুগ থেকে এটিকে পোষা প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করছে মানুষ। ধারণা করা হয়, খাবার সংগ্রহের তাগিদে বিড়াল নিজেই মানুষকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিল। প্রাণীটি যেমন আদুরে, তেমন বুদ্ধিমান।

কুকুর অনেকাংশেই মনিবের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। তার স্মরণশক্তিও অপেক্ষাকৃত ভালো। বিশেষ করে বিড়ালের চেয়ে বেশি তো অবশ্যই। এমন ধারণাই প্রচলিত। এখন জাপানের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, বিড়ালও কুকুরের মতো বুদ্ধিমান হতে পারে।

পৃথিবীজুড়ে পোষা বিড়ালের সংখ্যা প্রায় ৩৭ কোটি ৩০ লাখ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বিড়াল রয়েছে চীনে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।

মাছ

মাছ

জনপ্রিয় পোষা প্রাণীগুলোর তালিকায় কুকুর ও বিড়ালের পর শীর্ষ অবস্থানে আছে মাছ। কারণ, এটি লালন-পালনের জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এদের খাবারও পাওয়া যায় খুব সহজে। এই প্রাণীকে প্রতিদিন যত্ন নেওয়ারও দরকার হয় না। যারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন বা দিনের বেশির ভাগ ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের জন্য আদর্শ পোষা প্রাণী মাছ।

মাছের অনেক প্রজাতি রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন আকার ও রংবেরঙের হয়ে থাকে। ২০২০ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কানাডায় প্রায় ৮৫ লাখ পোষা মাছ রয়েছে। যুক্তরাজ্যে সংখ্যাটি প্রায় ৪০ লাখ। শান্ত ও স্নিগ্ধ বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাণীটি মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।

পাখি

ম্যাকাউ পাখি

পোষা প্রাণীর তালিকায় দীর্ঘকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে পাখি। শিকার থেকে শুরু করে বার্তা আদান–প্রদানসহ নানা কাজে পাখি মানুষের বিশ্বস্ত সঙ্গী। পোষ্য পাখির শত শত প্রজাতি রয়েছে। এদের প্রতিটির বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র। কিছু প্রজাতির পাখি মানুষের ভাষা অনুকরণ করতে পারে।

সরীসৃপ

বিয়ার্ডেড ড্রাগন

পৃথিবীজুড়ে হাজারো প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সরীসৃপ বর্তমানে পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে বিয়ার্ডেড ড্রাগন, বল পাইথন, লেপার্ড গেকো ও কচ্ছপ অন্যতম। তবে এসব প্রাণী লালন-পালন করতে হলে এদের সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা চাই। এদের বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়, রাখতে হয় বিশেষ পরিবেশে।

খরগোশ

খরগোশ

খরগোশ তাদের লম্বা কান, তুলতুলে লেজ ও আদুরে লাফের জন্য বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ পোষা খরগোশ রয়েছে। খরগোশের খাদ্য প্রধানত ঘাস, তাজা ফল ও সবজি। তারা বাড়িতে খেলাধুলা করতে ও মালিকের সঙ্গে বন্ধন গড়তে পছন্দ করে।

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পোষ্য হিসেবে খরগোশ লালন–পালন করে আসছে। খরগোশের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর আকার, রং ও স্বভাব অনুযায়ী আলাদা।

গবাদিপশু

গরু

গরু, ছাগল, ভেড়া ও ঘোড়ার মতো গবাদিপশু সাধারণত খামারে লালন–পালন করা হয়। এগুলোকে কৃষিকাজের পাশাপাশি মাংস, দুধ উৎপাদনসহ নানা কাজে ব্যবহার করে মানুষ। তবে অনেকে এসব প্রাণীকে পোষ্য হিসেবেও লালন-পালন করে।

শান্ত ও আদুরে বৈশিষ্ট্যের কারণে পোষা প্রাণী হিসেবে এগুলো কদর বাড়ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, বিশ্বে গবাদিপশুর সংখ্যা মানুষের তিন গুণ।

হাঁস-মুরগি

মুরগি

হাঁস-মুরগি খামার ও বাড়ির উঠানে পালন-পালন করা হয়। শুধু পোষ্য নয়; বরং মাংস ও ডিম উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও এসব প্রাণী। হাঁস-মুরগি লালন-পালন অপেক্ষাকৃত সহজ এবং জায়গাও কম লাগে। এগুলো নানা প্রজাতি ও ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে।

হ্যামস্টার

হ্যামস্টার

পোষ্য হিসেবে হ্যামস্টারের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এরা মূলত ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণী। এরা আকারে ছোট ও শান্ত স্বভাবের। এদের লেজ ছোট ও দুই গালে খাবার সংরক্ষণের জন্য বড় থলি থাকে।

এই প্রাণীর ২০টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে কয়েকটি সফলভাবে পোষা প্রাণী হিসেবে লালন–পালন করা হয়। এগুলো হলো ড্রোফ রবোরভস্কি, ক্যাম্পবেলের ড্রোফ রাশিয়ান ও সিরিয়ান হ্যামস্টার, যা গোল্ডেন বা টেডি বিয়ার হ্যামস্টার নামেও পরিচিত। হ্যামস্টারকে পরীক্ষাগারেও ব্যবহার করা হয়।

গিনিপিগ

গিনিপিগ

গিনিপিগ একটি ছোট, শান্ত ও সামাজিক ইঁদুরজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা পোষা প্রাণী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়, বিশেষত শিশুদের জন্য। এদের যত্ন নেওয়া তুলনামূলক সহজ এবং এরা মানুষের সঙ্গ ও মনোযোগ পেলে খুশি থাকে।

গিনিপিগ সাধারণত নিরামিষভোজী হয় এবং এদের জীবনকাল পাঁচ থেকে সাত বছর হয়ে থাকে। গিনিপিগ ইঁদুরজাতীয় হলেও এরা দেখতে শূকরের ছোট বাচ্চার মতো। এদেরও পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়।