Thank you for trying Sticky AMP!!

হঠাৎ কেন রণে ভঙ্গ দিলেন ইমরান?

ইমরান খানের

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি করেই তাঁর বহুল আলোচিত ‘হাকিকি আজাদি মার্চ’ কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ ঘোষণায় অনেকেই বিস্মিত হন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় ক্ষমতাসীন জোটকে ছয় দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন পিটিআই চেয়ারম্যান। অন্যথায় পরবর্তী সময় আরও বেশি লোকজন নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আজাদি মার্চ থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু হঠাৎ তাঁর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

ইমরান খানের এই অবস্থান পরিবর্তন শুধু আকস্মিকই নয়, আরও বেশি কিছু। সরকারের কাছ থেকে পরবর্তী নির্বাচনের দিনক্ষণ আদায় না করে তিনি ইসলামাবাদ ছাড়বেন না বলে কয়েক সপ্তাহ ধরে বলে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন পিটিআই চেয়ারম্যান।

Also Read: সরকারকে ৬ দিনের আলটিমেটাম ইমরানের

যাহোক, বিষয়গুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন করা যায়নি। বাস্তবে রণে ভঙ্গ দেওয়ার মতো ঘটনাটি কেবল নানা প্রশ্নেরই জন্ম দেয়নি, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে পর্দার আড়ালে সমঝোতা হয়েছে বলেও গুঞ্জন চাউর হয়েছে।

পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে ক্ষমতার বৃত্তে থাকা শক্তিশালী গোষ্ঠীটি (সামরিক বাহিনী) সক্রিয় ছিল বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিছু সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুই পক্ষকেই তারা চাপ দেয়। এর মধ্যে ছিল পিটিআইয়ের আজাদি মার্চের রাজধানীতে প্রবেশ এবং অবস্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিবর্তে সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকা। সূত্রগুলো জানায়, ওই শক্তিশালী গোষ্ঠীসহ সবারই মুখ রক্ষার বিষয় ছিল। বিষয়টি কেবল আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

সূত্রগুলো জানায়, সরকার-পিটিআই মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় চাপ বাড়তে থাকে। শক্তিশালী স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল—এমন পরিস্থিতিতে অর্পিত দায়িত্বের বিষয়ে পুরোপুরি সজাগ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে তারা নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারেন না।

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলে, প্রতিষ্ঠানগুলোর অতীত ভূমিকার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের মনোভাব একই। একমাত্র পার্থক্য হলো রাজনৈতিক দলগুলো আর একই অবস্থানে নেই। সূত্রটি বলছে, আস্থার সংকট রয়েছে। এই মুহূর্তে কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না।
সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ে সূত্রটি বলেছে, সেনাপ্রধানের অবসরে যাওয়ার এক মাস আগে চলতি বছরের অক্টোবরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা প্রবল। স্পিকারের দপ্তরেই এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে সেখানে আরও দর-কষাকষি হতে পারে।

Also Read: পাকিস্তানে উত্তেজনা, অগণতান্ত্রিক শক্তির হস্তক্ষেপের শঙ্কা

অক্টোবরের সময়সীমা মাথায় রেখে অভ্যন্তরীণ সূত্র ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সরকার আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যেতে পারে। তারা কেবল বাজেটই উত্থাপন করবে না, নির্বাচনী সংস্কার ও ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (দুর্নীতি দমন সংস্থা) সংশ্লিষ্ট আইনে আনা পরিবর্তনও বাতিলের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।

তড়িঘড়ি করে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণার বিষয়ে পিটিআইয়ের একজন নেতা বলেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন ইমরান। এর পেছনে বাস্তব কারণ ছিল। তিনি বলেন, যাহোক, সব স্টেকহোল্ডারের স্বার্থই রক্ষা হয়েছে, যাকে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ বলা যেতে পারে। সমাবেশের উপস্থিতি প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘কখনো সংখ্যাটা মুখ্য, কখনো প্রতীকী বার্তা; গত রাতের (বুধবার রাত) সমাবেশ ছিল অনেকটাই প্রতীকী।’

আরেক পিটিআই নেতা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে রাখার কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না। ব্যাপক জনসমাগমে সরকার বিচলিত হতে পারে, এমন আশঙ্কার বিষয়ও ছিল। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে না গিয়ে শুধু শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্তে যায় পিটিআই।

ওই নেতা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়াতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে তড়িঘড়ি করে কর্মসূচি শেষ করে দেন ইমরান। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কয়েক হাজার মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা ঠেকাতে কারা সেনাবাহিনীকে ডেকে এনেছে। এটা ছিল জনগণকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি করার চেষ্টা।

ছয় দিন পর কর্মসূচিতে ফেরার বিষয়ে এই পিটিআই নেতা বলেন, কর্মসূচিতে ফেরার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বহাল। পরবর্তী রাজনৈতিক জমায়েতে সর্বোচ্চ আদালত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এটি পিটিআইকে আরও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

ইমরানের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে সূত্রটি বলেছে, জনগণ সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে, যেখানে বিশ্বের কোথাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমোদন অস্বীকার করা হয় না বলে তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে গত ৯ এপ্রিল ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন ইমরান খান। এরপর নতুন নির্বাচনের দাবিতে চাপ সৃষ্টির জন্য দেশজুড়ে একের পর এক সমাবেশ করেন তিনি। সবশেষ ২৫ মের আজাদি মার্চ ছিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অংশ। যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি।
যাহোক, লংমার্চ ও আলটিমেটামের একটি অর্জন হলো—বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ঘোষণা।

তবে কারও হুকুমে তিনি চলবেন না বলে জানান। এমনকি জাতীয় পরিষদে দেওয়া বক্তৃতায় পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করতে একটি কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজেট আর সংস্কার একটা বিষয়। কিন্তু তাঁদের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রভাব যাতে পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার আগেই কেটে যায়, সে জন্য কিছুটা সময় নিতে চায় ক্ষমতাসীন জোট। আর সেই নির্বাচন হতে পারে আগামী অক্টোবরে।