গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত অন্তত ৮

পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় দুই পাকিস্তানি নিখোঁজ রয়েছেন বলে পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তানের কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ হামলা চালাল ভারত।

গতকাল দিবাগত রাত একটার পর পাকিস্তানের এআরউয়াই নিউজকে আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, কাপুরুষ শত্রু ভারত এখন থেকে কিছু সময় আগে ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান আল্লাহ মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের অন্তত তিন জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলাগুলো ভারতের আকাশসীমা থেকে চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তান এর সমুচিত জবাব দেবে উল্লেখ করে দেশটির এই সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই ঘৃণ্য উসকানি জবাব ছাড়া পার পাবে না।’

পাকিস্তানের লাহোর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মুরিদকে এলাকায় এই পাকিস্তানি পরিবারটির বসবাস। দেশটির মাটিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বাড়ি খালি করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জড়ো হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। ৭ মে ২০২৫

ভারতের হামলায় হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে আরও তথ্য জানানো হবে। এর কিছুক্ষণ পর তিনি পাকিস্তানের জিউ নিউজকে ক্ষয়ক্ষতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন। তাতে বলেছেন, ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্ট এলাকায় ১টি শিশু নিহত ও ১২ জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন। কোটলিতে দুজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানান, আহমেদপুরে একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। কাছের একটি বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে একটি শিশু ও তার মা–বাবা আটকে পড়েছেন। তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

কোটলিতেও একটি মসজিদে হামলা হয়েছে। মুজাফফরাবাদে একটি সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

পাকিস্তানি বাহিনী স্থল ও আকাশপথে এই হামলার জবাব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ভারত সরকারের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এই অভিযানে নিশানা করা হয়নি।

বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙেছে মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দাদের

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে গতকাল মধ্যরাতে বড় ধরনের একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি সম্ভাব্য নিশানা ছিল মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদ। ওই মসজিদের পাশেই বসবাস করেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ। তিনি বলেন, ‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল, এমন সময় প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা কেঁপে ওঠে। আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও একই কাজ করছে। আমরা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি, কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একটি জায়গার আশপাশের বাসিন্দারা প্রাণ ভয়ে ঘর–বাড়ি ছেড়ে আসেন। ৭ মে ২০২৫

ওয়াহিদ বলেন, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাঁদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে ওয়াহিদ বলেন, ‘বাচ্চারা কাঁদছে, মহিলারা দৌড়াদৌড়ি করছেন, তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানিই না, কী করব। লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন আর চারদিকে এক অজানা অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।’

ওয়াহিদ জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না একটি মসজিদ কেন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলো।

ওয়াহিদ বলেন, ‘এটা তো সাধারণ একটা মসজিদ ছিল, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এই মসজিদ ঘিরে কখনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’