
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘শান্তির জন্য বড় হুমকি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন যৌন নিপীড়ন ও নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইন। ২০১৮ সালে ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। নতুন প্রকাশিত এপস্টেইনের কিছু ব্যক্তিগত ই–মেইল থেকে এমনটা জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ‘ওভারসাইট কমিটির’ ডেমোক্র্যাট সদস্যরা গত বুধবার (১২ নভেম্বর) এসব নতুন ই–মেইল প্রকাশ করেছেন। কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, তাঁরা এপস্টেইন এস্টেটের হস্তান্তর করা মোট ২৩ হাজার নথি প্রকাশ করেছেন।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌনকাজে সম্পৃক্ত করার দায়ে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ম্যানহাটনের এক আদালতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। কিন্তু মামলা চলাকালে ওই বছরের ১০ আগস্ট কারাগারে তিনি আত্মহত্যা করেন। পরে দোষী সাব্যস্ত হন কুখ্যাত এই যৌন নিপীড়ক।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠান ইমরান খান বর্তমানে কারাগারে আছেন। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে ই–মেইলে আলাপচারিতায় ইমরান খানকে নিয়ে উল্লিখিত মন্তব্য করেছিলেন এপস্টেইন।
২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ভোর ৪টা ৪ মিনিটে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির সঙ্গে ই–মেইলে আলাপচারিতায় এপস্টেইন নানা বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এই মার্কিন ধনকুবের ওই আলাপচারিতায় লিখেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘যতটা সম্ভব সদয় ছিলেন’। ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের নির্বাচনে কীভাবে হস্তক্ষেপ করে’, একই ই–মেইলে সেটাও উল্লেখ করেছিলেন এপস্টেইন।
এপস্টেইন কয়েক মিনিট পরের একটি ই–মেইলে ইমরান খান ও পুতিনের নাম উল্লেখ করেন লিখেছিলেন, ‘(পুতিন) কোনো হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে (সরকার) উৎখাতের কথা বলেননি…সরকার উৎখাতের জন্য তহবিল দেননি...পাকিস্তানের ইমরান (খান) (তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ) এরদোয়ান, (ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী) খামেনি, (চীনের প্রেসিডেন্ট) সি চিন পিং বা পুতিনের চেয়ে শান্তির জন্য বড় হুমকি।’
অজ্ঞাত ব্যক্তি জানতে চেয়েছিলেন, ‘পাকিস্তানের সেই জনতুষ্টবাদী ব্যক্তি???’ এখানে সম্ভবত ইমরান খানকে বোঝানো হয়েছে। উত্তরে এপস্টেইন শুধু লিখেছিলেন, ‘খুব খারাপ খবর।’
সেই ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ক্রিকেট খেলোয়াড়?—তিনি কীভাবে কোনো ইসলামপন্থীর চেয়ে বেশি খারাপ হতে পারেন?’
জবাবে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘(ইমরানের সঙ্গে তুলনা করলে) ডোনাল্ডকে আইনস্টাইন মনে হবে। (ইমরান) সত্য বলতে অক্ষম। ধার্মিক ইসলামপন্থী।’ ধার্মিক ইসলামপন্থী বলতে সম্ভবত ইমরানকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ইমরান খানকে নিশানা করে নারী পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত জেফরি এপস্টেইন আরও লিখেন, ‘অনেক পারমাণবিক অস্ত্র আছে। (এরদোয়ান বা খামেনির কাছে নেই)। তিনি আমার দুই বন্ধুকে বিয়ে করেছিলেন, একজন জিমি গোল্ডস্মিথের কন্যা। তিনি (জিমি) খুব ধনী, প্রভাব খাটানোতে সিদ্ধহস্ত। তাঁকে (জিমি গোল্ডস্মিথের কন্যাকে) ধর্ম বদলাতে বাধ্য করেছিল। নির্বোধ।’
এপস্টেইন আরও বলেন, ‘এটি [ইমরানের এসব বিষয়] কোনো মানুষের ব্যক্তিত্বের উপাসনা নিয়ে আপনার পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে যায়। সে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। দাবাড়ু নয়, তবে লোকজনকে খেপিয়ে তুলতে পারদর্শী।’
প্রকাশিত ই–মেইলগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এরপর এপস্টেইন ও অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির মধ্যে আলাপ প্রায় ৪০ মিনিট বন্ধ থেকে অন্য বিষয়ে আবার আলাপ শুরু হয়।
রাজনীতিতে নামার আগে অক্সফোর্ডপড়ুয়া ইমরান খান অন্যতম বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অক্সফোর্ডে পড়ার সময় অভিজাত একাধিক নারীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। লন্ডনের নামীদামি নৈশক্লাবে ছিল নিয়মিত যাতায়াত।
১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতে। এর পর থেকে জীবনধারায় পরিবর্তন আনেন তিনি।
এপস্টেইনের ই–মেইলে ইমরান খানকে নিয়ে মন্তব্য-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯০ সালের একটি পার্টির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছবিতে গাইসলেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ইমরান খানকে দেখা যায়।
ম্যাক্সওয়েল প্রয়াত এপস্টেইনের একসময়কার প্রেমিকা। এপস্টেইনের সঙ্গে যোগসাজশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌনকাজে জড়ানোর অভিযোগে তিনি বর্তমানে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ২০২১ সালে নিউইয়র্কের এক জুরি তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন।