বর্তমান বিশ্বে ই–কমার্স শিল্প দ্রুত বাড়ছে। নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত প্ল্যাটফর্মগুলো নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে। এসব ই–কমার্স সাইটে পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নিত্যব্যবহার্য পণ্য কিনতে পারেন ক্রেতারা। ব্যবসাবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইট বিশ্বের শীর্ষ ই–কমার্স ওয়েবসাইটের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকার ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ ই–কমার্স সাইট নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন। প্ল্যাটফর্মটির প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। যিনি বিশ্বের শীর্ষ একজন ধনী। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৭৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে অ্যামাজন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে ৩৯ কোটি ব্যবহারকারী প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করেন। অ্যামাজন থেকে সরাসরি পণ্য বিক্রি ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করা যায়। এ জন্য ব্যক্তিগত বিক্রেতা ও বড় ব্র্যান্ড উভয়ের জন্যই এটি একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
অনলাইনে থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে চীনের তাওবাও। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটির মোট বিক্রয় মূল্য ৭২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার।
চীনের বিখ্যাত উদ্যোক্তা জ্যাক মা–র মালিকানাধীন আলিবাবা গ্রুপের এই ওয়েবসাইটে ভোক্তার কাছ থেকে ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারেন। এটি চীনের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ওয়েবসাইটের ৯৬ কোটি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।
তাওবাওর সাফল্যের মূল কারণ হলো বিস্তারিত পণ্যের বৈচিত্র্য, প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং চীনের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে একীভূত থাকা।
আলিবাবা গ্রুপের মালিকানাধীন আরেকটি ই–কমার্স সাইট টি–মল। এটি মূলত ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তাকেন্দ্রিক। ২০২৪ সালে এটির মোট ক্রয়মূল্য ছিল ৬৮ হাজার ২৭ কোটি মার্কিন ডলার।
বছরে প্ল্যাটফর্মটির সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটি। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে প্রথমবারের মতো এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কেনাকাটা করা গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি চীনের বাজারে প্রবেশ করা প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের জন্য প্রাধান্য পাওয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
চীনের মোবাইল ফোনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম পিনদুওদু অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এটির প্রতিষ্ঠান লি চেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্ল্যাটফর্মটির সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ৭২ কোটি। ২০২৪ সালে মোট বিক্রি ছিল ৭১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। মূল্য নির্ধারণে গুরুত্ব দেওয়া এই প্ল্যাটফর্মটিকে চীনের দ্রুতবর্ধমান ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে সেরা করে তুলেছে।
চীনের জেডি ডটকম বিজনেস-টু-কনজিউমার (বিটুসি) মার্কেটপ্লেস হিসেবে পরিচালিত হয়। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি প্রায় ৫০ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
মাসে প্রায় ৪০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন এই প্ল্যাটফর্মের। সরাসরি পণ্য বিক্রি ও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কারণে অন্যান্য ই–কমার্স সাইটের থেকে এটি আলাদা। ইলেকট্রনিকস ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি বিভাগে এই প্ল্যাটফর্মটি অনেক এগিয়ে আছে।
টেমু মূলত পিনদুওদুর মূল কোম্পানির মালিকানাধীন। বিশ্বজুড়ে প্ল্যাটফর্মটির নাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৯ কোটি।
২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এটি বেশ জনপ্রিয়। এর মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী সংখ্যা ১৮ কোটির বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ই–কমার্স কোম্পানি ই–বে। পিয়েরে অমিদার এটির প্রতিষ্ঠাতা।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে অন্যতম বিশ্বস্ত একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে ই–বে এখনো শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। প্ল্যাটফর্মটিতে বিশ্বব্যাপী ১৩ কোটির বেশি সক্রিয় ক্রেতা রয়েছে। প্রতি মাসে ১০ কোটির বেশি ইউনিক ভিজিটর রয়েছে এই ই–কমার্স সাইটটিতে।
২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। এটি এখনো ভোক্তা থেকে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা লেনদেনের জন্য জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানি ওয়ালমার্ট। স্যাম ওয়ালটন ও বাড ওয়ালটন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
ওয়ালমার্টের ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশেষ করে মুদি পণ্য। ২০২২ সালে প্ল্যাটফর্মটি প্রায় ১১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে।
প্ল্যাটফর্মটিতে ১৬ কোটি ৬০ লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছেন। এ ছাড়া ৯ কোটি ৬০ লাখ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারী রয়েছেন। ওয়ালমার্টের বিশেষ কৌশল অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে এটিকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছে।
প্রথমে একটি ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করেছে। পরে লাখ লাখ বিক্রেতার জন্য লেনদেন সহজ করে তোলে।
২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটিতে দৈনিক ৪৬ লাখ সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিলেন। সাড়ে ৮৭ কোটির বেশি ইউনিক ক্রেতা এই প্ল্যাটফর্মের স্টোরগুলোর মাধ্যমে কেনাকাটা করেছে। এটি শপিফাইকে বিশ্বব্যাপী অনলাইন ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হলো দুইন।
২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে। লাইভ স্ট্রিমিং ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করে দুইন ই–কমার্স লেনদেনকে ত্বরান্বিত করছে।