
কয়েক মাস ধরে ভেনেজুয়েলার নাম বৈশ্বিক গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসছে প্রায় প্রতিদিন। ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল নৌ মহড়া, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি, নিকোলা মাদুরোর ‘যুদ্ধপ্রস্তুতি’—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, দেশটা যেন একটা ‘টাইম বোমা’র ওপর বসে আছে।
এই সময়ে ভেনেজুয়েলা শুধু একটা দেশ নয়, যেন পুরো লাতিন আমেরিকার ভবিষ্যতের আয়না। এখানে যা ঘটবে, তার ছায়া পড়বে কিউবা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়া পর্যন্ত।
অনেকের প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত কী হবে? মাদুরো কি সত্যিই পড়ে যাবেন, নাকি টিকে যাবেন?
দুঃসংবাদটা হলো ক্ষমতার কেন্দ্রে যা–ই ঘটুক, আপাতত সাধারণ মানুষের কষ্ট কমছে না। ভেনেজুয়েলায় এখনো তীব্র মূল্যস্ফীতি চলছে। সরকারি হিসাব ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২৫০–৩০০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। টানা সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবীরা।
একজন সরকারি স্কুলশিক্ষকের মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০–১২ ডলার, যা দিয়ে পরিবারের ন্যূনতম প্রয়োজনও মেটানো কঠিন। ৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির লোকসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি।
হুগো চাভেজের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসেন নিকোলা মাদুরো। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশটিতে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়।
বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনে মারিয়া কোরিনা মাচাদোর প্রার্থী এদমুন্দো গোনসালেস বিপুল ভোটে জিতেছেন। কিন্তু মাদুরো নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন এবং জানুয়ারি ২০২৫-এ তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। এর পর থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার, মৃত্যু যেন অতি পরিচিত ঘটনা। এখনো ১ হাজার ৮০০-এর বেশি রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে।
গত অক্টোবরে মারিয়া কোরিনা মাচাদো শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এটা গণতন্ত্রের জয়। মাদুরো বলছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ষড়যন্ত্রের পুরস্কার।
১৯৯২ সালে হুগো চাভেজ সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর কারাগারে যান। সেই সময়ে নিকোলা মাদুরো ছিলেন একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, যিনি চাভেজের রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। চাভেজ ১৯৯৮ সালে নির্বাচনে জেতার পর ধীরে ধীরে মাদুরোকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থানে তুলে নেন। ২০০৬ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ২০১২ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।
চাভেজের শেষ বছরগুলোতে (২০১১-২০১৩) যখন তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন, মাদুরোই তাঁর পাশে ছিলেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কিউবায় অস্ত্রোপচারের আগে চাভেজ টিভিতে বলেছিলেন, ‘যদি আমার কিছু হয়, তোমরা নিকোলা মাদুরোকে ভোট দিয়ো। সে বিপ্লবের সত্যিকারের সন্তান।’
তবে ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় দুজনের মধ্যে বড় ফারাক। শুধু চাভেজের নাম শুনে রাস্তায় লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসত, কিন্তু মাদুরো তেমন নন। চাভেজ ছিলেন লাতিন আমেরিকার ‘বামপন্থী আইকন’। মাদুরোকে স্বীকৃতি দেয় মূলত রাশিয়া, ইরান ও চীন। চাভেজ মারা গেছেন ১২ বছর, কিন্তু মাদুরো এখনো তাঁর নাম ব্যবহার করে ভোটের আশা রাখেন।
যদি চাভেজ আজ বেঁচে থাকতেন, হয়তো বলতেন, ‘মাদুরো, আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছিলাম।’
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে লাতিন আমেরিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি আরও কড়াকড়ি হয়েছে। হোয়াইট হাউসের অবস্থান স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে যেসব দেশ প্রভাবিত করছে, তারা যদি তা বন্ধ না করে, তবে বাণিজ্য, সহায়তা বা অর্থনৈতিক সুবিধা—কোনো কিছুই অব্যাহত থাকবে না।
এই নীতির কেন্দ্রবিন্দু তিনটি বিষয়—অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, মাদক পাচার রোধ এবং ওই অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকানো।
এ লক্ষ্য পূরণে ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতেই মেক্সিকো ও কলম্বিয়ার ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, যাতে তারা সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের যাত্রা ও মাদকপ্রবাহ রোধে আরও কঠোর হয়। একই সঙ্গে ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান আরও আক্রমণাত্মক। ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন পাঠানো হয়েছে, যা মূলত মাদুরো সরকারকে চাপে রাখতে সামরিক বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে যেসব সরকার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল, যেমন এল সালভাদোরের নায়িব আরমান্দো বুকেলে বা আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলেই—তাঁদের সঙ্গে ওয়াশিংটন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটাই বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তা হলো লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাস্বার্থে সহযোগিতা করলে সুবিধা, না করলে চাপ।
এর ফল মিশ্র। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের কারণে সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রমুখী অভিবাসনপ্রবাহ কমেছে। কয়েকটি দেশ নতুন নিরাপত্তা ও বাণিজ্যচুক্তিও করেছে। তবে এর পাশাপাশি বাড়তি শুল্ক, কূটনৈতিক চাপ এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে বহু দেশে ভোগ দ্রব্যের দাম বেড়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে এবং অর্থনীতি আরও চাপে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিয়েছে। আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ওয়াশিংটনের কঠোর নীতির কারণে ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকোসহ অনেক দেশ এখন বিকল্প বাজার ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য চীন এবং ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পথে হাঁটছে।
ট্রাম্প চান লাতিন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক প্রভাববলয়ে থাকুক। কিন্তু এটা ঠিক যে ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে গেছে। ‘পেছনের উঠান’ হিসেবে দেখার মানসিকতা লাতিন আমেরিকার দেশগুলো আর আগের মতো সহজে মেনে নিচ্ছে না।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর থেকেই ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ওয়াশিংটন কেন দেশটিকে ‘অগ্রাধিকার তালিকা’র শীর্ষে রেখেছে। এর পেছনে তিনটি বড় কারণ রয়েছে।
কাগজে-কলমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেলভান্ডার ভেনেজুয়েলাতেই। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির কারণে উৎপাদন কমেছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ কৌশলগত গুরুত্ব অপরিবর্তিত। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, মাদুরো সরে গেলে আবারও মার্কিন কোম্পানিগুলো সেখানে ফিরতে পারবে। বিনিয়োগ বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ আরও নিরাপদ হবে।
গত এক দশকে প্রায় ৭৮ লাখ ভেনেজুয়েলান দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, যা আধুনিক লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট। তাঁদের একটি বড় অংশ শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে পৌঁছাচ্ছে।
ট্রাম্প অভিবাসন ইস্যুকে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার বানিয়েছেন। তাই ভেনেজুয়েলার সংকট তাঁর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও সরাসরি প্রভাবিত করছে।
প্রথম মেয়াদে নানা চাপের পরও মাদুরো সরকারকে ট্রাম্প ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেননি। এই ব্যর্থতা তাঁকে নতুন মেয়াদে আরও কঠোর অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ক্যারিবীয় সাগরে যা ঘটছে, এটিকে এখনো সরাসরি ‘আক্রমণের প্রস্তুতি’ বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এটি মাদকবিরোধী বৃহৎ এক সমুদ্র অভিযান। তবে সামরিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য ভিন্ন। তাঁদের মতে, যে পরিমাণ শক্তি এই মহড়ায় নিয়োজিত হয়েছে—এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড, ১৫ হাজারের বেশি সেনা, দীর্ঘ পাল্লার ড্রোন, নজরদারি বিমান, সাবমেরিন—সেটা শুধু মাদক পাচার ঠেকানোর জন্য সাধারণত ব্যবহৃত হয় না।
মহড়া চলছে ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে মাত্র কয়েক শ কিলোমিটার দূরে, যা পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। পাল্টা হিসেবে মাদুরো সরকারও দুই লাখের বেশি সৈন্য সীমান্ত ও উপকূল এলাকায় মোতায়েন করেছে। মাদুরো সরকার বিবৃতি দিয়েছে, তারা যেকোনো আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, উভয় পক্ষের এই শক্তি প্রদর্শন সরাসরি যুদ্ধ নয়, কিন্তু সীমান্তে ড্রোন ভূপাতিত হওয়া, টহল নৌকার ধাক্কাধাক্কি বা উসকানিমূলক কোনো ঘটনা দ্রুত উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে ভুল সংকেতই বড় সংঘাত ডেকে আনতে পারে।
অনেকে ভাবছেন, নিকোলা মাদুরো এখন একা হয়ে গেছেন। বাস্তবতা হলো, তিনি এখনো তিনটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। এই তিন শক্তি তাঁকে কঠোর অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেও টিকিয়ে রেখেছে।
ভেনেজুয়েলার সামরিক নেতৃত্ব এখনো দৃঢ়ভাবে মাদুরোর পাশে। কারণটি রাজনৈতিক নয়; অর্থনৈতিক। সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সোনার খনি, তেল পাচার, জ্বালানি সরবরাহ, সীমান্তে ড্রাগ চক্রসহ বহু অবৈধ অর্থচক্র নিয়ন্ত্রণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এসব নেটওয়ার্ক থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ ডলার আয় হয়। সে কারণেই তাঁরা মাদুরোর নিরাপত্তাব্যূহ হিসেবে কাজ করেন। সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া মাদুরো এক দিনও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না—এটাই সাধারণ বিশ্লেষকদের অভিমত।
মাদুরোর আন্তর্জাতিক বন্ধুমহল ছোট হলেও কার্যকর। রাশিয়ার সামরিক উপদেষ্টা ও বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির বিষয়ে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন আছে। ইরান ভেনেজুয়েলাকে ড্রোন, প্রযুক্তি ও পরিশোধনাগার সহায়তা দিচ্ছে। চীন নিয়মিত ঋণ দেয় এবং কূটনৈতিকভাবে মাদুরোকে রক্ষা করে। কিউবা বহু বছর ধরে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সহায়তা দিচ্ছে।
এরা কেউ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নয়; বরং নিজেদের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় মাদুরোকে সমর্থন করছে। কিন্তু মাদুরোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
অর্থনৈতিক ধস, ২৭০ শতাংশের ওপর মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও এখনো ২০–২৫ শতাংশ নাগরিক মাদুরোকে সমর্থন করেন। তাঁদের বড় একটি অংশ বিশ্বাস করেন—যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলে ভেনেজুয়েলা লিবিয়া বা ইরাকের পথেই যাবে।
এই ভীতি মাদুরোর রাজনৈতিক প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। সরকারি প্রচারে বলা হয়, ‘ইয়াঙ্কিরা এলে দেশ ধ্বংস হবে, পরিবার বিপদে পড়বে।’ এভাবে ভয় ও জাতীয়তাবাদের মিশ্রণে তিনি নিজের সমর্থকঘাঁটি ধরে রেখেছেন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সঙ্গে ঐতিহাসিক বামপন্থী বন্ধুত্ব রাখলেও ২০২৪-এর নির্বাচনের ফলাফলকে স্বীকার করেননি। তিনি ভোটের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। ব্রাজিল মাদুরোকে সময় দিচ্ছে, কিন্তু গণতান্ত্রিক সমাধান চায়, যাতে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হয়।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো মাদুরোকে সমর্থন করেন না। ২০২৪–এর নির্বাচনকে তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নারকো-টেররিস্ট’ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, এর পেছনে রয়েছে তেলের লোভ। তিনি মাদুরোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন।
মেক্সিকোর শেইনবামের সরকার মাদুরোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০২৫-এ তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। তিনি বলেছেন, ভেনেজুয়েলার মানুষেরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। মেক্সিকো মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে সংলাপ ও শান্তি নিশ্চিত হয়। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে নিরপেক্ষ থেকেছে দেশটি।
মারিয়া কোরিনা মাচাদোর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিরোধী শিবির নতুন করে প্রাণ পেয়েছে। যদিও মাচাদো বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন, তাঁর ভিডিও বার্তা লাখ লাখ মানুষ দেখছেন। এদমুন্দো গোনসালেস স্পেনে নির্বাসিত, তবু তিনি এখনো ৬০টির বেশি দেশে ‘নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে স্বীকৃত।
তবে বিরোধীদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অনৈক্য। ২০১৯ সালে হুয়ান গুয়াইদোকে পশ্চিমা দেশগুলো প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত কারাকাসে ঢুকে ক্ষমতা দখল করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, একই ভুল এখনো হচ্ছে—অভ্যন্তরীণ বিভাজন, নেতৃত্বের অভাব এবং মাদুরোর সেনাবাহিনী ও বিদেশি সমর্থনের কারণে বিরোধীরা এখনো কার্যকর চাপ তৈরি করতে পারছে না।
ভেনেজুয়েলা আজ এমন এক সংকটমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে সহজে বেরোনোর পথ নেই। নিকোলা মাদুরোর পতন ঘটলে হয়তো দেশটি গণতন্ত্রের দিকে ফিরতে পারবে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তপাত, অরাজকতা এবং রাজনৈতিক শূন্যতার আশঙ্কাই বেশি।
অন্যদিকে মাদুরো যদি ক্ষমতা ধরে রাখেন, দেশটির অর্থনীতি, সামাজিক কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও পিছিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মানবিক সংকটের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।
ই–মেইল: alim.zaman@prothomalo.com