
ভেনেজুয়েলার সাবেক কৌঁসুলি মারিয়া (ছদ্মনাম) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে বসবাস করেন। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ধরতে ঘোষিত পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পর মারিয়া বলেছিলেন, তিনি ‘স্বীকৃতি’ বোধ করছেন। মনে হচ্ছে, তাঁর চোখে মাদুরো যেমন অপরাধী, অন্যরাও তাঁকে তেমনটাই ভাবেন।
পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাঁচ কোটি ডলার করা হয়েছে, যা মার্কিন সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ অঙ্কের পুরস্কারগুলোর একটি।
মারিয়া ২০১৭ সালে ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। মাদুরো সরকারের তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কায় তিনি ছদ্মনামে কথা বলেছেন। মারিয়ার কাছে মাদুরোর বিরুদ্ধে এই পুরস্কার ঘোষণার অর্থ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচার আটক, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পথ তৈরি হওয়া।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পুরস্কারের কৌশল নিয়েছেন, তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ভেনেজুয়েলাকে আরও বেশি করে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স ডাউনস বলেন, ‘ধারণাটা এমন যে খারাপ লোকটাকে সরাতে পারলেই সবকিছু ভালো হয়ে যাবে, কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়।’
ডাউনস সতর্ক করে বলেন, কোনো সহজ সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় শাসনব্যবস্থা বদলের পক্ষে জনসমর্থন থাকলেও তা বাস্তবে হয় না। কারণ, দেশের ভেতরে নানা সমস্যা লুকিয়ে থাকে। আর ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে বড় বিপদটা হলো এর সব ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে।’
ট্রাম্প ও মাদুরোর মধ্যকার দীর্ঘদিনের শত্রুতার সর্বশেষ সংযোজন এটি।
ট্রাম্প প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা বদলের কথা বলছিলেন।
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের অভিযোগ, মাদুরো ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছেন। এরপর ২০১৯ সালে মাদুরোর পরিবর্তে দেশটির বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদোকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নাকি ব্যক্তিগতভাবে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘সামরিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও বিবেচনা করছিলেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদের শেষ বছরে ট্রাম্প আরও চাপ বৃদ্ধি করেন। তিনি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির তথ্য চেয়েও বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পুরস্কার ঘোষণা করার নীতিকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক দলের নেতা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হন। বাইডেনের প্রশাসন মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্প ঘোষিত পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার করেন।
ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই পুরস্কারের অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেন।
গত আগস্টে এক বিবৃতিতে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ‘বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে মাদুরো বাঁচতে পারবেন না। তাঁর ঘৃণ্য অপরাধের জন্য তাঁকে জবাবদিহি করতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে। ক্যারিবীয় সাগরে বেশ কিছু নৌকায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ওই সব নৌকায় ভেনেজুয়েলা থেকে মাদক পাচার করা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।
‘শূন্য সাফল্য’
বিদেশি শত্রুকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন কিছু নয়, তবে বিদেশে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুরস্কার ঘোষণা কার্যকরী হাতিয়ার কি না, তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ডাউনস প্রশ্ন তুলেছেন।
ডাউনস ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে পানামার সামরিক স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল নরিয়েগার মাথার জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার প্রসঙ্গটি সামনে টেনে আনেন। বলেন, পুরস্কার ঘোষণার পর শত শত তথ্য পেন্টাগনে এসে পৌঁছেছিল ঠিকই, তবে মার্কিন বাহিনী পানামায় অভিযান চালানোর আগপর্যন্ত তাঁকে আটক করা যায়নি।
২০০৩ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণার কথাটিও উল্লেখ করেছেন ডাউনস। বলেছেন, সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় সাদ্দাম আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। তাঁকে শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে এটা যে পুরস্কার ঘোষণার কারণে সম্ভব হয়েছে, তা নয়, এটা সম্ভব হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে।
তবে ডাউনস স্বীকার করেছেন, সাদ্দামের পুত্রদের অবস্থান শনাক্তের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৫০ ডলারের পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছিল, তবে সেটা ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার অনেক পরে সম্ভব হয়েছে।
ডাউনস উল্লেখ করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ক্ষমতাচ্যুতির পরই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সামরিক পদক্ষেপও চলছিল।
ডাউনস আরও প্রশ্ন তোলেন, শুধু পুরস্কার ঘোষণা করেই পুরোপুরি সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি না।
ডাউনস স্পষ্টভাবে বলেন, ‘শূন্য সাফল্য। কোনো পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটানোর মতো কোনো নজির নেই। কিছু পুরস্কার তো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই ঘোষণা করা হয়েছে।’
ডাউনস আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় হঠাৎ সরকারের পতন ঘটলে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হতে পারে, যা দেশটিকে আরও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ভেনেজুয়েলা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দমন–পীড়নের মুখোমুখি হয়েছে। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ও চরম দারিদ্র্যের মতো অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে তারা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মৌলিক সামগ্রীর ঘাটতিতে পড়েছে।
ডাউনস মনে করেন, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার আসতে পারে ঠিকই, তবে তারা দেশের সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোলাস গ্রসম্যানও সতর্ক করে বলেন, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য অপ্রত্যাশিত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ঢল ও অবৈধ মাদক প্রবাহের জন্য ভেনেজুয়েলাকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গ্রসম্যানের মতে, মাদুরোকে গ্রেপ্তার করলে এ দুটি সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
গ্রসম্যান বলেন, ‘যদি কোনো সরকারকে অস্থিতিশীল করা হয়, তখন সেখানকার মানুষ দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে পালানোর চেষ্টা করবে। এতে শরণার্থী বা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
গ্রসম্যান মনে করেন, এতে পাশের দেশগুলোতেও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এতে আরও বেশি অভিবাসী সমস্যা তৈরি হবে এবং মাদক চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি হবে।
মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত পুরস্কারের নীতিমালা কী এবং তাঁর সম্ভাব্য পতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা কি, তা জানতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আল-জাজিরা।
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র এর জবাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সব শক্তি ব্যবহার করে যাবেন।’
তবে সমালোচকেরা সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন, তাতে মাদুরোই বেশি সুবিধা পেতে পারেন। ভেনেজুয়েলার সরকার দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লাতিন আমেরিকায় সাম্রাজ্যবাদী আচরণের অভিযোগ করে আসছে। তারা মাদুরোর বিরুদ্ধে এই পুরস্কার ঘোষণাকে তার সেই প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল গত আগস্টে ঘোষিত মোটা অঙ্কের এ পুরস্কারকে ‘কাঁচা রাজনৈতিক প্রচারণা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
৫ কোটি ডলারের প্রলোভন
মাদুরোর কর্মকর্তারা এই পুরস্কার ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্য জর্ডান গোডরিউ ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে আসা সদস্য এবং মার্কিন সেনাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। এরপর তিনি ভেনেজুয়েলায় ঢুকে বিদ্রোহ শুরুর চেষ্টা করেন। ট্রাম্প প্রথমবারের মতো মাদুরোর বিরুদ্ধে পুরস্কার ঘোষণা করার ঠিক কয়েক সপ্তাহ পর এ অভিযান চালানো হয়।
চলচ্চিত্র নির্মাতা জেন গ্যাটিয়েনসহ যাঁরা গাউড্রোর তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করেছেন, তাঁরা সবাই বলেছেন এ ক্ষেত্রে পুরস্কারের ঘোষণাটি ভূমিকা রেখেছিল।
তবে গাউড্রোর প্রচেষ্টার পরিণতিটা বিপর্যয়কর ছিল। তাঁদের বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে ওই সময় অন্তত ছয়জন নিহত এবং ডজনের বেশি গ্রেপ্তার হন।
ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের টেলিভিশনের পর্দায় হাজির করেছিল। তারা এটিকে বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ভাড়াটে বাহিনীর কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছিল।
সবশেষ, যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন এজেন্ট মাদুরোর পাইলট বিটনার ভিলেগাসকে নিজেদের পরিকল্পনায় নিযুক্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই এজেন্ট ভিলেগাসকে পাঁচ কোটি ডলারের পুরস্কারের খবর পাঠিয়েছিলেন। তিনি মাদুরোকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করতে ওই পাইলটকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। উল্টো ভিলেগাস ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হন। সেখানে ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলোও ছিলেন।
কাবেলো বলেন, ভিলেগাস ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’। ভিলেগাস মুঠো উঁচু করেন এবং দর্শকদের প্রশংসা পান। তবু, মাদুরো সরকারের বিরোধীরা ট্রাম্প ঘোষিত পুরস্কারকে হাতিয়ার করে তাঁর বিরুদ্ধে মানুষকে একত্র করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভেনেজুয়েলার বিপ্লবী রাজনীতিবিদেরা বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় ‘ওয়ান্টেড’ পোস্টারের মতো ব্যানার তৈরি করেছেন। এগুলো ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে লাগানো হচ্ছে।
গত মাসে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট সিএনএনকে বলেন, যদি মাদুরো কখনো তাঁর দেশে আসেন, তিনি তাঁকে গ্রেপ্তার করবেন এবং পাঁচ কোটি ডলার পুরস্কার নেবেন।
‘ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়’
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ভেনেজুয়েলার নাগরিকেরাও এই পুরস্কারকে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছেন।
টেক্সাসে কয়েক দশক ধরে বসবাসকারী ভেনেজুয়েলার ব্যবসায়ী আমিন্তা জি বলেন, তিনি তাঁর দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। নিরাপত্তার কারণে তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
আমিন্তা বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি। অনেক দিন ধরে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।’
এই ভেনেজুয়েলান মনে করেন, এই পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আন্দোলনকে বৈধতা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী মারিয়া আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি নিজেই মাদুরোর দমননীতির শিকার হয়েছেন।
মাদুরো সরকারের সময় মারিয়াকে কৌঁসুলির পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো কারণ জানানো হয়নি, তবে মারিয়ার কাছে কারণটা স্পষ্ট ছিল।
মারিয়া বলেন, ‘আমাকে বরখাস্ত করার প্রকৃত কারণ হলো, আমি দুর্নীতি, ভুয়া মামলা দেওয়া এবং নির্দোষ মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কাজে যুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম।’
এরপর মারিয়া যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন জানান। তাঁর সে আবেদন এখনো ঝুলে আছে।
মারিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রে টেম্পরারি প্রটেক্টেড স্ট্যাটাসের আওতায় বৈধভাবে থাকছেন। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যার আওতায় বিপজ্জনক দেশ বলে বিবেচিত দেশের মানুষদের স্বল্পমেয়াদি সুরক্ষা দেওয়া হয়।
তবু ভয় ও দুশ্চিন্তায় মারিয়ার রাতে ঘুম ভেঙে যায়। ভেনেজুয়েলায় ফেরত পাঠানো হলে সেখানে কেমন নির্যাতনের শিকার হতে হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় থাকেন। ট্রাম্প প্রশাসন অনেক টিপিএস সুবিধা বাতিল করার চেষ্টা করেছে। তবুও তিনি ট্রাম্পের পুরস্কার অভিযানকে সমর্থন করেন।
যদিও এই পুরস্কার একা ভেনেজুয়েলার সব সমস্যার সমাধান করবে না, তারপরও মারিয়া মনে করেন, এটি তাঁকে একটি বার্তা দেয়। তা হলো তাঁর কষ্টের জন্য দায়ী মানুষটিকে অন্যরাও অপরাধী হিসেবে দেখছে।
এ ক্ষেত্রে মারিয়া সচেতনভাবে একটি শব্দ ব্যবহার করতে চান। তা হলো ‘আশা’।